• রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪২৯

ধর্ম

প্রকৃত সুখ-শান্তি নামাজে

  • প্রকাশিত ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১

এইচ এম শেফায়েত সাকি

 

 

 

সারা দিন আমাকে অনেক কাজকর্মে ব্যস্ত রাখে। অফিস-আদালত, বিবি-বাচ্চা, কোর্ট-কাছারি ইত্যাদি। সেই সকালবেলায় নিজ গৃহ থেকে বের হই; পুরোটা দিনই বিভিন্ন কাজেকর্মে শত ব্যস্ততায় দিনটি পার হয়ে যায়। অনেক টাকা-কড়ি সঞ্চয় করি। কোনো চিন্তা ছাড়া টাকা-পয়সা ব্যয় করি। প্রতি সপ্তাহে একবার বিভিন্ন দেশ-বিদেশে ভ্রমণ করি। সুখের জন্যে কতকিছু করে যাই। ওপেনে সবাইকে দান-সাদকাও করি। একটু সুখের আশায় পায়ে পরি দামি ব্রান্ডের জুতা। গায়ে পরিধান করি বিশ-পঞ্চাশ হাজার টাকা দামের কাপড়! শুধু একটু সাময়িক সুখের প্রয়াসে। এমন কোনো ব্যাংক নেই, যে আমার সঞ্চয় করা টাকা জমা নেই। ব্যাংকে কোটি কোটি টাকা জমা আছে। গাড়ি-বাড়ির অভাব নেই। প্রতিদিন খাবারের তালিকায় খাসির মাংস, গরুর মাংস, ইলিশ, রুই, কাতল ইত্যাদি থাকে। রুচিসম্মত খাবার প্রতিদিনের তালিকায় থাকে। দিনের বেলায় এসব করে যাই। রাতে ঘুমের ঘরে গভীর চিন্তায় মগ্ন থাকি।

আমি এতোকিছু করি, আমার গাড়ি-বাড়ির অভাব নেই, টাকা-কড়ির অভাব-অনটন নেই, তবুও কেন আমার মনে শান্তি নেই? এই ভাবনাটা আমাকে সারারাত হতাশায় নিমজ্জিত রাখে। আর দু-চোখ বেয়ে অনবরত পানি চলে আসে। সেই পানিতে আমি ভেসে যাই। এমনিতেই দিনের বেলায় লোক দেখানো হাসিটা সর্বোচ্চ মুখে থাকে। আসল মনে কিন্তু স্বস্তি নেই। ভাবতে থাকি এতো কিছু করি তবুও কেন আমার মনে শান্তি নেই? নিজকে নিজে প্রশ্নবিদ্ধ করি! এদিকে জুমাবার আসলেই হোটেল জামানে গিয়ে বন্ধুদের নিয়ে আড্ডায় মেতে থাকি। সবমিলিয়ে অনেক আনন্দে আর ফূর্তিতে চলাফেরা করি। মুখে সবসময় হাসিটা ফুটে থাকে। গাড়ি-বাড়ি, কোটি কোটি টাকা কড়ি, এগুলো আমাকে রীতিমতো ভালো করে ঘুমাতে পর্যন্ত দেয় না; বরং মনের জ্বালা বাড়াতেই থাকে। আমি এই বড় বাড়ির উপরে বেডরুমে মনের আত্মখুশিতে কোনোদিন ঘুমাতে পারি না। বিভিন্ন ঝামেলা এসে মনের দরজায় কড়া নাড়ে। আর বলতে থাকে টাকাকড়ি, গাড়িবাড়ি এসব ইহকাল ও পরকালে কোনো স্বস্তি দেবে না। স্বস্তি দেবে একমাত্র পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ।

শহরের অলি-গলিতে, কিংবা ফ্লাইওভারের নিচে, ফুটপাতে দেখা যায়, কত-শত ফকির-মিসকিন কত আরামে ঘুমাচ্ছে। নাই কোনো থাকার চিন্তা, নাই কোনো গাড়ির চিন্তা, নাই কোনো বাড়ির চিন্তা। খুব আরামেই আছে বুঝি তারা। সহসাই আমার মনে একটা কবিতার কলি মনে পড়ে...। ‘মিছে মায়ার এই না ভবে, যতোই করি গাড়ি-বাড়ি, হঠাৎ করে একদিন আমার, যেতেই হবে সবই ছাড়ি।’ এই ভাবনাটা যখন মনে পড়ে তখন থেকে যতো আছে আমার গাড়ি-বাড়ি সবকিছুকে দূরে ঠেলে দিয়ে মাওলার দরবারে দৌড়ে গিয়ে হাজির হই। মাওলার সামনে নিজেকে আত্মসমর্পণ করি। পাঁচওয়াক্ত সালাত আদায় করি। আর দু-হাত তুলে মনপ্রাণ উজাড় করে দোয়া করি। সেদিন থেকে দেখি ক্রমান্বয়ে আমার মনটা আগের চেয়ে অনেক বেশি উৎফুল্ল ও সজীবতা হয়ে উঠেছে। এখন শুধু মুখে হাসি নয়; হূদয়ের হাসিটাও হরহামেশাই ভাসে। আজ আমি গম্ভীরভাবে উপলব্ধি করতে পেরেছি। প্রকৃত সুখ-শান্তি গাড়ি-বাড়ি কিংবা টাকা-কড়িতে নয়, বরং পাঁচ ওয়াক্ত সালাতে ও মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার পথে।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘বান্দা যখন সালাতে দাঁড়ায়, তখন তার সব গুনাহ নিয়ে এসে তার মাথায় ও দুই কাঁধে রাখা হয়। যতবার সে রুকু ও সিজদাহ করে, ততবারই তার গুনাহসমূহ ঝরতে থাকে। (বায়হাকী ও সুনামুল কুবরা ৩/১৬) আলহামদুলিল্লাহ! আমি এখন আল্লাহর দরবারে একজন নামাজি বান্দা। এটাই আমার আসল ঠিকানা। তাই আসুন আমরা সবাই পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করি। মহান আল্লাহপাককে রাজিখুশি করি। পরকালে স্বস্তি পাওয়ার জন্যে কিছু তৈরি করি। আমরা যদি আল্লাহকে রাজিখুশি করে ইহকাল থেকে পরকালে যাই, আল্লাহপাক আমাদেরকে পরকালে নাজাত দেবেন। আল্লাহপাক আমাদের সবাইকে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ও আল্লাহর আদেশ-নিষেধ মানার তাওফিক দান করুন। আমীন!

 

লেখক : শিক্ষার্থী, মজিদিয়া মাদরাসা মাতারবাড়ী, মহেশখালী, কক্সবাজার

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads