• বৃহস্পতিবার, ২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪২৯

ধর্ম

শবে মেরাজ : করণীয় ও বর্জনীয়

  • প্রকাশিত ১১ মার্চ ২০২১

গাজী মুহাম্মাদ জাহাঙ্গীর আলম জাবির

 

 

 

মেরাজ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অন্যতম শ্রেষ্ঠ মুজিজা। ২৬ রজব দিবাগত রাতে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মহান আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য বিশেষ ব্যবস্থাপনায় ঊর্ধ্বাকাশে গমন করেন। ঐতিহাসিক সেই সফরকেই মেরাজ বলা হয়। মেরাজ আরবি শব্দ, শাব্দিক অর্থ ঊর্ধ্বগমন, আকাশপথে ভ্রমণ করা, সোপান ইত্যাদি। উম্মে হানীর ঘর থেকে জাগ্রত অবস্থায় বোরাকে করে মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা। সেখান থেকে প্রথম আকাশ হয়ে সপ্তমাকাশ। সেখান থেকে বায়তুল মামুর, সিদরাতুল মুনতাহা, আরশে আজিম পৌঁছে আল্লাহর দিদার লাভ করা; এসবই মেরাজের অন্তর্ভুক্ত। কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘পবিত্র সত্তা তিনি, যিনি তার বান্দাকে তার নির্দশনগুলো দেখানোর জন্য রাতকালীন ভ্রমণ করিয়েছেন মসজিদে হারাম থেকে মসজিদুল আকসা পর্যন্ত। যার পরিবেশ পবিত্র, নিশ্চয়ই তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।’ (বনি ইসরাইল, আয়াত-১)

মেরাজের রাতে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উম্মে হানী বিনতে আবু তালিবের ঘরে ঘুমিয়েছিলেন। হঠাৎ হজরত জিবরাইল (আ.) এসে রাসুলকে মসজিদুল হারামে নিয়ে যান। যেখানে তার বুক বিদীর্ণ করে জমজম কূপের পানি দিয়ে সিনা ধুয়ে পরিষ্কার করে শক্তিশালী করেন। এ ঘটনাকে ‘শাক্কুস সদর’ বলে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের  জীবনে অন্তত তিনবার এমনটা হয়েছে। তারপর সেখান থেকে তিনি ‘বোরাক’ নামক এক ঐশী বাহনে চড়ে বায়তুল মোকাদ্দাসে এসে সব নবীর ইমাম হয়ে দুই রাকাত নামাজ আদায় করেন। তারপর তিনি বোরাকে চড়ে ঊর্ধ্বে গমন করতে থাকেন। একের পর এক আসমান অতিক্রম করতে থাকেন।

রাস্তায় মুসা (আ.)সহ বেশ কয়েকজন নবী-রাসুলের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়। সপ্তম আসমানের পর হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে  বায়তুল মামুর পরিদর্শন করানো হয়। বায়তুল মামুরে দৈনিক ৭০ হাজার ফেরেশতা প্রবেশ করেন। ফেরেশতাদের সংখ্যা এত বেশি যে, যারা একবার এই বায়তুল মামুরে প্রবেশ করেন কেয়ামত পর্যন্ত তাদের সেখানে প্রবেশ করার পালা আসে না। সেখানে হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বচক্ষে জান্নাত ও জাহান্নাম দেখেন। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সামনে একপাত্র মদ, একপাত্র দুধ এবং একপাত্র মধু আনা হয়। তিনি এর মধ্য থেকে দুধের পাত্রটি গ্রহণ করেন। তখন হজরত জিবরাইল (আ.) বললেন, এটা স্বভাব ধর্মের নিদর্শন। আপনি এবং আপনার উম্মত এই স্বভাবধর্ম ইসলামের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকবেন।

বায়তুল মামুরে হজরত জিবরাইল (আ.)কে রেখে তিনি ‘রফরফ’ নামক আরেকটি আসমানি বাহনে চড়ে মহান আল্লাহর দরবারে হাজির হন। কোনো কোনো বর্ণনায় আছে, মিরাজের রাতে হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহতায়ালার এতটা কাছাকাছি গিয়েছিলেন যে, দুজনের মধ্যখানে মাত্র এক ধনুক পরিমাণ ব্যবধান ছিল। এখানে হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উম্মতের ওপর ৫০ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করা হয়। পরবর্তী সময়ে বারবার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহতায়ালা দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ উম্মতে মোহাম্মদীর ওপর ফরজ করেন, যা ইসলামের পাঁচটি রুকনের অন্যতম রুকন বা ভিত্তি। যেহেতু মিরাজের রাতে নামাজের নির্দেশ হয়েছে, এজন্য নামাজকে মুমিনের মিরাজ বলা হয়।

নবীজির মেরাজ সম্পর্কে অকাট্য প্রমাণাদি রয়েছে। এজন্য কোনো মুসলমানের পক্ষে তা অস্বীকার করা কিংবা এ ব্যাপারে সংশয় দেখানো যাবে না। এমনকি একজন খাঁটি মুসলমানের বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে মিরাজের সত্যতা প্রমাণের অপেক্ষা না করে এ বিষয়ে মনেপ্রাণে বিশ্বাস স্থাপন করা ঈমানি কর্তব্য। মেরাজের প্রতি পূর্ণাঙ্গ বিশ্বাস স্থাপনই হলো-শবে মেরাজের করণীয়। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মিরাজে যাওয়ার কথা একজন অবিশ্বাসীর মুখে শুনে হজরত আবু বকর (রা.) তৎক্ষণাৎ বিশ্বাস করেছিলেন বলেই হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে ‘সিদ্দিক’ উপাধি দিয়েছিলেন।

শবে মেরাজের বিশেষ কোনো আমল নেই। এটা অন্যান্য রাতের মতো একটি রাত। মেরাজের রাতে নফল ইবাদত বা দিনে নফল রোজা রাখার বিশেষ কোনো ফজিলত কোনো হাদিসে উল্লেখ নেই। তাছাড়া নবীজির মেরাজের তারিখ অস্পষ্ট। কেননা, শবে মেরাজের তারিখ সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কোনো হাদিস বর্ণিত নেই। তবে ২৬ রজবের দিবাগত রাতের যে মতটি আমাদের সমাজে প্রচলিত আছে সেটি তাবেঈ ও পরবর্তী যুগের মুহাদ্দিস ও ঐতিহাসিকগণের অনেকগুলো মত থেকে একটি প্রসিদ্ধ মত। শবে মেরাজকে কেন্দ্র করে যে কোনো ধরনের উৎসব-আনুষ্ঠানিকতা শরিয়ত সমর্থন করে না। এই রাতে আলোকোজ্জ্বল করাও ঠিক নয়। এছাড়া এই রাতে শিরনি বিতরণ, খাওয়া-দাওয়ার বিশেষ আয়োজন করা শরিয়ত সমর্থিত নয়।

 

লেখক : কলামিস্ট, সংগঠক, সমাজ ও ধর্মতত্ত্ববিদ

jahangirjabir5@gmail.com

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads