• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯

ধর্ম

ইসলামে সামাজিক সৌন্দর্য

  • প্রকাশিত ২০ মার্চ ২০২১

গাজী মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম জাবির

 

 

 

ইসলাম মহান আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে এক মহান জীবনাদর্শ। এতে রয়েছে মানবজীবনের সব দিক-নির্দেশনা। এই নির্দেশনা অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করলেই কেবল মানবজাতি কাঙ্ক্ষিত পথ খুঁজে পাবে, এতে সন্দেহ নেই। কেননা, ইসলাম এসেছে সর্বময় প্রজ্ঞার অধিকারী মহান আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে। আর তার বাস্তব প্রয়োগ শিখিয়েছেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। এই বিস্ময়কর মহানাদর্শের সৌন্দর্য সম্পর্কে জানার চেষ্টা করা চিন্তাশীল মানুষের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

১. অহঙ্কার না করা : অহঙ্কার ইসলামে মহাপাপ। অহঙ্কারী ব্যক্তির ঠিকানা হবে জাহান্নাম। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যার অন্তরে অণু পরিমাণও অহঙ্কার থাকবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’ (এ কথা শুনে) এক ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করল, মানুষতো পছন্দ করে যে, তার কাপড়-চোপড় সুন্দর হোক, তার জুতো সুন্দর হোক, (তাহলে সেটাও কি অহঙ্কারের মধ্যে গণ্য হবে?) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ সুন্দর, তিনি সৌন্দর্য ভালোবাসেন। অহঙ্কার হচ্ছে, সত্যকে প্রত্যাখ্যান করা ও মানুষকে তুচ্ছজ্ঞান করা। (মুসলিম শরিফ)

২. মিথ্যা  বলা নিষেধ : মহান আল্লাহতায়ালা বলেছেন, ‘তোমরা মূর্তিরূপ অপবিত্রতা থেকে দূরে থাকো এবং মিথ্যা কথা হতে দূরে থাকো।’ (সূরা হজ, আয়াত-৩০) অন্যত্র আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘মিথ্যা তো তারাই বানায়, যারা আল্লাহর নিদর্শনসমূহের ওপর ঈমান রাখে না। বস্তুত তারাই মিথ্যুক।’ (সুরা নাহাল, আয়াত-১০৫) রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘নিশ্চয় সত্যবাদিতা পুণ্যের পথ দেখায়। আর পুণ্য জান্নাতের পথ নির্দেশ করে। (বুখারি, মুসলিম শরিফ)

৩. পরস্পরকে ক্ষমা করতে উদ্বুদ্ধ : মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘তারা যেন ওদেরকে ক্ষমা করে এবং ওদের দোষত্রুটি মার্জনা করে। তোমরা কি পছন্দ করো না যে আল্লাহ তোমাদের ক্ষমা করে দিন? আর আল্লাহ চরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সূরা নুর, আয়াত-২২) এক ব্যক্তি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসে বলল, ‘হে আল্লাহর রাসুল  সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমরা দাসদাসীকে কতবার ক্ষমা করব? এ কথা শুনে তিনি নীরব থাকলেন। অতঃপর লোকটি আবার প্রশ্ন করলেন। কিন্তু তিনি চুপ থাকলেন। অতঃপর তৃতীয়বারে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘প্রত্যেক দিন তাকে সত্তরবার ক্ষমা করো।’ (আবু দাউদ)

৪. গালাগালি করা নিষেধ : রাসুলুল্লাহ  সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘মুসলিমকে গালি দেওয়া ফাসেকি এবং তার সঙ্গে ঝগড়া করা কুফরি।’ (বুখারি, মুসলিম) অন্য হাদিসে আছে, ‘মুমিন কখনো দোষারোপকারী, অভিশাপদাতা, অশ্লীলভাষী ও গালিগালাজকারী হয় না।’ (তিরমিযি, হাদিস নং-২০৪৩)

৫. প্রতিবেশীকে কষ্ট দেওয়া নিষেধ : মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘সে ব্যক্তি মুমিন নয়। আল্লাহর কসম! সে ব্যক্তি মুমিন নয়। জিজ্ঞেস করা হলো, কোন ব্যক্তি হে আল্লাহর রাসুল! রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘যে লোকের প্রতিবেশী তার অনিষ্ট থেকে নিরাপদে থাকে না।’ (বুখারি, মুসলিম)

৬. মানুষকে সমাজসেবী হতে উদ্বুদ্ধ করেছে : মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ সেই ব্যক্তি যে মানুষের জন্য সবচেয়ে বেশি উপকারী।’ তিনি আরো বলেন, ‘ফরজ আমলগুলোর পর আল্লাহর কাছে সবচেয়ে বেশি প্রিয় আমল হলো মুসলিমের মনে আনন্দ ভরে দেওয়া।’

৭. নিরুপায় হলে হারাম জিনিস হালাল হয়ে যায় : আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আল্লাহ যা কিছু তোমাদের ওপর হারাম করেছেন তা হচ্ছে, মৃতদেহ, রক্ত, শূকরের মাংস এবং যে প্রাণীর ওপর আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও নাম নেওয়া হয়েছে। তবে যদি কেউ আল্লাহর আইনের বিরুদ্ধাচরণ করার ইচ্ছা পোষণ না করে অথবা প্রয়োজনের সীমা না ছাড়িয়ে ক্ষুধার জ্বালায় বাধ্য হয়ে এসব খেয়ে নেয়, তাহলে নিশ্চয় আল্লাহ্ ক্ষমাশীল ও করুণাময়।’ ( সুরা নাহল, আয়াত- ১১৫)

৮. অত্যাচারকে নিষিদ্ধ করেছে : মহান আল্লাহ্তায়ালা অত্যাচারীকে পছন্দ করেন না। পরকালে তার জন্য প্রস্তুত করে রেখেছেন কঠিন শাস্তি। আল্লাহ্তায়ালা বলেন, ‘যারা বিশ্বাস করেছে এবং সৎকাজ করেছে, তিনি তাদের প্রতিদান পুরোপুরিভাবে দেবেন। বস্তুত, আল্লাহ্তায়ালা অত্যাচারীদের ভালোবাসেন না।’ (আলে ইমরান, আয়াত- ৫৭) হাদিসে কুদসিতে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে আমার বান্দারা আমি নিজের ওপর জুলুমকে হারাম করেছি এবং তোমাদের মাঝেও তা হারাম করছি। সুতরাং, তোমরা একে অন্যের প্রতি জুলুম করো না।’ (মুসলিম শরিফ)

৯. অঙ্গীকার পালনে আদেশ : আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমরা অঙ্গীকার পালন করো, নিশ্চয় অঙ্গীকার সম্পর্কে তোমাদের জিজ্ঞেস করা হবে।’ (সূরা বনি ইসরাঈল, আয়াত-৩৪) অঙ্গীকার বা চুক্তি পালন না করা মুনাফিকের লক্ষণ। মুসলিমের মাঝে সে দোষ থাকতে পারে না। এমনকি শত্রুপক্ষের সঙ্গেও যে চুক্তি করা হয় তা পালনীয়।

১০. আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখার নির্দেশ : রাসুলুল্লাহ  সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম     বলেন, ‘যে ব্যক্তি পছন্দ করে যে তার রিযিক প্রশস্ত হোক এবং আয়ু বৃদ্ধি হোক, সে যেন আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখে।’ (বুখারি, মুসলিম) দয়াল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেন, ‘আত্মীয়তার বন্ধন (আল্লাহর) আরশে ঝুলানো আছে, সে (আত্মীয়তার বন্ধন) বলে, যে ব্যক্তি আমাকে (আত্মীয়তার বন্ধন) বজায় রাখবে, সে ব্যক্তির সঙ্গে আল্লাহ্ সম্পর্ক বজায় রাখবেন এবং যে ব্যক্তি আমাকে (আত্মীয়তার বন্ধন) ছিন্ন করবে, সে ব্যক্তির সঙ্গে আল্লাহও সম্পর্ক ছিন্ন করবেন।’ (বুখারী শরীফ) সূত্র: মাসিক মদীনা, তরজুমান ও জিজ্ঞাসা।

 

লেখক : প্রাবন্ধিক, ইসলামী লেখক, সংগঠক ও সমাজকর্মী, কুমিল্লা

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads