• সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪২৯
উত্তম চরিত্রের গুরুত্ব ও ফজিলত

সংগৃহীত ছবি

ধর্ম

উত্তম চরিত্রের গুরুত্ব ও ফজিলত

  • প্রকাশিত ২২ মার্চ ২০২১

ইসলামে উত্তম চরিত্রের বিশেষ গুরুত্ব ও ফজিলত রয়েছে। মুমিনদের জন্য বিভিন্ন গুণাবলিতে চরিত্রকে সৌন্দর্যমণ্ডিত করা ঈমানের দাবি। কেননা উত্তম চরিত্র ব্যতীত একজন মুমিনের ঈমান পরিপূর্ণ হতে পারে না। ঈমানের পরিপূর্ণতার জন্য উত্তম চরিত্রবান হওয়া অপরিহার্য। এ সম্পর্কে হজরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘ওই মুমিন ঈমানে পরিপূর্ণ যার চরিত্র সর্বোত্তম।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং-৪৬৮২) আমাদের সমাজে মানুষের সর্বোত্তম হওয়ার বিভিন্ন মাপকাঠি রয়েছে। বিভিন্ন জনের কাছে ভিন্ন মাপকাঠিতে ভিন্ন ধরনের মানুষ সর্বোত্তম। কিন্তু ইসলামের দৃষ্টিতে সর্বোত্তম হওয়ার গুরুত্বপূর্ণ মাপকাঠি হচ্ছে উত্তম চরিত্র। এ ব্যাপারে হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) বলেন, ‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অশ্লীল ভাষী ও অসদাচরণের অধিকারী ছিলেন না। তিনি বলতেন, তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তিই সর্বোত্তম যার চরিত্র সর্বোত্তম।’ (সহিহ বুখারি, হাদসি নং-৩৫৫৯)

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিলেন সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী। তিনি কখনো কারো সাথে খারাপ ব্যবহার করেন নি। তিনি নিজে যেমন চরিত্রবান ছিলেন তেমনি চরিত্রবান মানুষদেরকে তিনি ভালোবাসতেন। তাই রাসুলুল্লাহ (সা.) এর প্রিয় মানুষদের কাতারে শামিল হতে চাইলে উত্তম চরিত্রবান হতে হবে। আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) হতে বর্ণিত আরেকটি রেওয়াতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেছেন, ‘আল্লাহর রাসুল (সা.) জন্মগতভাবে বা ইচ্ছাপূর্বক অশ্লীল ভাষী ছিলেন না। তিনি বলেছেন, তোমাদের মধ্যে ওই ব্যক্তিই আমার কাছে  সবচেয়ে প্রিয় যে সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী। (সহিহ বুখারি, হাদিস নং-৩৭৫৯) উত্তম চরিত্রের মাধ্যমেও যে অপরিসীম সওয়াব লাভ হয় তা আমরা অনেকে জানি না। এর সওয়াব এত বেশি যা আমরা কল্পনাও করতে পারি না। কিয়ামতের দিন মানুষের সওয়াব ও গোনাহ পরিমাপের জন্য মিজানে ওজন করা হবে। সেদিন যে আমলের ওজন  সবচেয়ে বেশি ভারী হবে তা হলো উত্তম চরিত্র। এ সম্পর্কে হজরত আবু দারদা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কিয়ামাতের দিন মুমিনের দাঁড়িপাল্লায় উত্তম চরিত্রের চেয়ে বেশি ওজনের আর কোনো জিনিস হবে না। কেননা, আল্লাহতায়ালা অশ্লীল ও কটুভাষীকে ঘৃণা করেন।’ (সুনানে তিরমিযি ২০০২)

উত্তম চরিত্রের সওয়াব ওজনে সবচেয়ে বেশি ভারী হওয়ার রহস্য আরেকটি হাদিস হতে জানা যায়। সে হাদিসে উত্তম চরিত্রের সওয়াবের পরিমাণ বর্ণনা করা হয়েছে। একজন ব্যক্তি সারা দিন সাওম পালন করে ও সারা রাত নফল সালাত পড়ে যেরূপ সওয়াব পায় আল্লাহতায়ালা উত্তম চরিত্রের বদৌলতে সেরূপ সওয়াব দান করেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামক বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই মুমিন ব্যক্তি তার ভালো চরিত্রের মাধ্যমে (দিনে) সাওম পালনকারী ও (রাতে) নামাজ আদায়কারীর মর্যাদা লাভ করতে পারে।’ (সুনানে আবু দাউদঃ ৪৭৯৮)

জান্নাতে মানুষের আমল অনুযায়ী সম্মানজনক জায়গায় অধিষ্ঠিত করা হবে। যার আমল যত ভালো হবে সে তত বেশি সম্মানিত হবে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে উত্তম চরিত্রবানদের জন্য জান্নাতের সর্বোচ্চ স্থানে ঘরের জিম্মাদারী নিয়েছেন। নবীজি বলেন “যে ব্যক্তি ন্যায়সঙ্গত হওয়া সত্ত্বেও ঝগড়া পরিহার করবে আমি তার জন্য জান্নাতের বেষ্টনীর মধ্যে একটি ঘরের জিম্মাদার। আর যে ব্যক্তি তামাশার ছলেও মিথ্যা বলে না আমি তার জন্য জান্নাতের মাঝখানে একটি ঘরের জিম্মাদার। আর যে ব্যক্তি তার চরিত্রকে সৌন্দর্যমন্ডিত করেছে আমি তার জন্য জান্নাতের সর্বোচ্চ স্থানে অবস্থিত একটি ঘরের জিম্মাদার।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং-৪৮০০) আমাদের জন্য সর্বোত্তম চরিত্রের জন্য সর্বোত্তম আদর্শ হলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তার আদর্শ অনুসরণের মাধ্যমেই আমরা সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী হতে পারি। তার সুমহান চরিত্রের ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা করেন, ‘নিশ্চয় আপনি মহান চরিত্রের অধিকারী।’ (সুরা কলম : ৪ )

হজরত আয়েশা (রা.) হতে বর্ণিত, ‘এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট আসার জন্য অনুমতি চাইলে তিনি বললেন, ‘সে গোত্রের কতই না খারাপ লোক।’ অতঃপর তিনি বললেন, তাকে আসতে দাও। যখন সে ভিতরে এলো তখন তার সঙ্গে তিনি নম্রভাবে কথা বললেন। (সে চলে গেলে) হজরত আয়েশা (রা.) বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি এ ব্যক্তির সঙ্গে নম্রভাবে কথা বললেন, অথচ ইতিপূর্বে আপনি তার সম্পর্কে অন্য রকম মন্তব্য করেছিলেন। তিনি বললেন, কেয়ামাতের দিন আল্লাহর নিকট ওই ব্যক্তিই সবচেয়ে খারাপ, যাকে মানুষ তার অশালীন কথার ভয়ে ত্যাগ করেছে। (সুনানে আবু দাউদ : হাদিস নং ৪৭৯১) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও উত্তম চরিত্র গঠনের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করতেন। আম্মাজান হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ দোয়া করতেন, হে আল্লাহ আপনি আমার চরিত্রকে সুন্দর করুন যেমনভাবে আমার দেহাবয়বকে সুন্দর করে গঠন করেছেন। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস নং-৩৮২৩) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদর্শ অনুসরণ করে আমাদের জন্য উত্তম চরিত্র অর্জনের চেষ্টা করা এবং এজন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করা আমাদের কর্তব্য। আল্লাহতায়ালা আমাদের সকলকে উত্তম চরিত্র গঠন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

লেখক :মুহাম্মাদ আবু আখতার

আলেম, প্রাবন্ধিক

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads