• সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪২৯
কথাবার্তায় সতর্কতা কাম্য

প্রতীকী ছবি

ধর্ম

কথাবার্তায় সতর্কতা কাম্য

  • প্রকাশিত ২৩ মার্চ ২০২১

সৃষ্টিজীবের মধ্য থেকে মানুষ একটি সামাজিক জীব। সমাজেই তার বসবাস। সমাজ থেকে আলাদা হয়ে সে জীবন-যাপন করতে পারে না। আর সমাজে চলতে গেলে একেবারে ঘরমুখো হয়েও থাকা যায় না। তাই আনন্দ-বিনোদনের জন্য মাঝে মাঝে ভ্রমণে বের হতে হয়। সময়ে সময়ে বন্ধু-বান্ধবদের আড্ডায় উপস্থিত হতে হয়। আবার কখনো কখনো দিন শেষে চায়ের আড্ডায় উপস্থিত হয়ে আড্ডাকে আনন্দময় ও প্রাণবন্ত করার জন্য চায়ে চুমুকে চুমুকে বিভিন্ন রসাত্মক গল্প ও উপমা পেশ করা হয়। ওই গল্প বা উপমাগুলো যেমনি শিক্ষণীয়, সত্যাশ্রয়ী ও উপভোগ্য হয়, তেমনি এর অনেকগুলো হয় মিথ্যা, উদ্ভট ও বানোয়াট কল্পকাহিনী। আমরা এ ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন ও গাফেল। বরং কেউ যদি কখনো এ ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করে তখন আমরা আত্মসমর্থন করে বলি, এটা নির্দোষ মিথ্যা এ আর তেমন কিছু না এবং এতে গুনাহ হবে না। আসলেই কি নির্দোষ মিথ্যা বলতে কিছু আছে?

মিথ্যা বলা এমন একটি স্বভাব, যা সব ধর্ম বর্ণের মানুষের কাছে ঘৃণিত ও নিন্দিত। এমনকি যে মিথ্যা বলে স্বয়ং তার কাছেও ঘৃণিত ও অপছন্দনীয়। মিথ্যা বলার ভয়াবহতা সম্পর্কে মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কালামে ইরশাদ করেন : মিথ্যা বলার জন্য তাদের রয়েছে মর্মদন্ত শাস্তি। (সুরা বাকারা : ১০) রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘তোমরা মিথ্যা পরিহার করো। কেননা মিথ্যা পাপের পথে পরিচালিত করে। আর পাপ মানুষকে জাহান্নামে পৌঁছে দেয়।’ (তিরমিজি শরিফ : ১৯৭১) অন্যত্র রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘ধ্বংস তাদের জন্য, যারা কথা বলে এবং মানুষকে হাসানোর জন্য মিথ্যা বলে। তার জন্য ধ্বংস, তার জন্য ধ্বংস।’ (আবু দাউদ শরিফ : ৪৯৯০)

আমাদের সমাজে আরেকটি সাধারণ প্রবণতা হলো বাবা-মা, ভাই-বোন বা মুরুব্বি শ্রেণির কেউ কেউ ছোট ছোট বাচ্চাদের সাথে বিভিন্নভাবে বিভিন্ন বিষয়ে মিথ্যা বলে থাকে। যেমন ছোট শিশুকে কাছে ডাকার জন্য, বা তার থেকে কোনো জিনিস হাসিল করার জন্য, বিভিন্ন জিনিসের প্রলোভন দিয়ে থাকে, অথচ বাস্তবে তাকে কিছুই দিবে না। এই যে ছোট শিশুদের সাথে এমন প্রতারণার আচরণ করার দ্বারা তাদের শুভ্র ও কোমল হূদয়ে আমরা কিসের বীজ বপন করে দিলাম? মিথ্যা ও প্রতারণার বীজ। আমাদের কাছ থেকে তারা কি শিক্ষা পেল? তারা শিক্ষা পেল, এভাবে ধোঁকা ও প্রতারণা করা যায়। তারা যখন ধীরে ধীরে বড় হবে তখন মানুষের সাথে তারাও মিথ্যা বলবে এবং প্রতারণা করবে। মানুষকে ধোঁকা দিবে, যা আমাদের থেকেই তারা শিখেছে। আর তাদের এ অপশিক্ষা পরিবার, সমাজ ও দেশের জন্য যে কত ভয়ংকর ও ক্ষতিকর, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এভাবে শিশুদের সাথে মিথ্যা প্রতারণা করার ব্যাপারে হাদিস শরিফে বড় ভয়াবহ শাস্তির কথা এসেছে।

কিশোর সাহাবি হজরত আবদুল্লাহ বিন আমের রাযি. বলেন: একদিন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের বাড়িতে বসা ছিলেন। এমতাবস্থায় আমার আম্মা আমাকে ডেকে বললেন। এদিকে এসো, তোমাকে একটি জিনিস দিব। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেলেন, তুমি কি তাকে কিছু দিতে চাও? আমার আম্মা উত্তরে বললেন : জি, আমি তাকে একটি খেজুর দিতে চাই! রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, তুমি যদি তাকে কিছু না দিতে তবে তোমার নামে একটি মিথ্যার গুনাহ লেখা হতো। (আবু দাউদ শরিফ : ৪৯৯১) অন্যত্র রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন : ‘যে ব্যক্তি কোনো শিশুকে ডাকলো এদিকে আসো! কিছু দেওয়ার জন্য অতঃপর তা দিল না তবে তা মিথ্যা। (মুসনাদে আহমদ : ৯৮৩৬)

আমরা হাসি, মজাক বা ইয়ার্কির ছলে অবলীলায় মিথ্যা বলে থাকি। অথচ হাদিসে মিথ্যাকে কবিরা গুনাহের মধ্যে সবচেয়ে বড় গুনাহ সাব্যস্ত করা হয়েছে। মিথ্যা বলাকে মুনাফিকের অন্যতম আলামত ও নিদর্শন বলা হয়েছে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,  মুনাফিকের নিদর্শন তিনটি- ১. যখন কথা বলে মিথ্যা বলে। ২. আমানত রাখলে খেয়ানত করে। ৩. প্রতিশ্রুতি দিলে তা ভঙ্গ করে। (বুখারি শরিফ : ২৫৬২) পক্ষান্তরে মিথ্যা পরিহারকারীর ফজিলত ও পুরস্কার সম্পর্কে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন : ‘আমি তার জান্নাতের নিশ্চয়তা প্রদান করব। যে মিথ্যা পরিহার করবে এমনকি হাসির ছলে বলাটাও।’ (আবু দাউদ শরীফ : ৪৮০০) তাই আসুন, আমরা মিথ্যা পরিহার করি এবং রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শের অনুসরণ করি। তিনিই সদা অনুসরণীয় ব্যক্তিত্ব। তাঁর হাসি-মজাক ও রসিকতা ছিল নির্মল ও অনিন্দ্য সত্যনির্ভর। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে বিষয়টি বুঝে আমল করার তাওফিক দান করুন। আমীন।

লেখক :সাইফুল্লাহ বিন কাসিম

প্রাবন্ধিক

saifullahbinkasim49@gmail.com

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads