• রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪২৯

ধর্ম

ঋণ সম্পর্কে ইসলামের নির্দেশনা

  • প্রকাশিত ২৮ মার্চ ২০২১

নাঈম কাসেমী

 

 

 

করজে হাসানাহ তথা ‘উত্তম ঋণ’ দেওয়া অনেক সাওয়াবের কাজ। কখনো কখনো দান করা থেকেও বেশি। কারো কাছে ঋণ থাকলে তা পরিশোধে উদাসীন হওয়া হারাম কাজ। যত দ্রুত সম্ভব ঋণ পরিশোধ করে দেওয়া উচিৎ। কারণ মানুষের জীবনের কোনো নিশ্চয়তা নেই। হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদিসে ইরশাদ করেন, ‘সক্ষম ব্যক্তির ঋণ আদায়ে গড়িমসি করা তার মানহানি ও শাস্তিকে বৈধ করে দেয়।’ (আবু দাউদ) অন্যত্র নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি কারো কাছ থেকে ঋণ গ্রহণ করে এবং তা আদায় করার নিয়ত রাখে। আল্লাহ তার পক্ষ থেকে তা পরিশোধ করে দেন অর্থাৎ পরিশোধ করা সহজ করে দেন। আর যে ব্যক্তি ঋণ নিয়ে তা আদায় করার নিয়ত রাখে না। আল্লাহতায়ালা তাকে ধ্বংস করেন।’ (বুখারি) ঋণ পরিশোধ করার নিয়ত থাকলে আল্লাহতায়ালা সাহায্য করেন। বস্তুত আল্লাহ চান মুমিন যেন পাপমুক্ত ও পরিচ্ছন্ন জীবনযাপন করে। আর এ পরিচ্ছন্ন অবস্থায়ই যেন তার মৃত্যু হয়। এ জন্য পাপ ও ঋণমুক্ত থাকা অপরিহার্য।

কারো ঋণের বোঝা হালকা করার ফজিলত : নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘এক ব্যক্তি মানুষকে ঋণ দিতো। তারপর তা আদায় করার জন্য লোক পাঠাত। সে আদায়কারীকে বলে দিত, অভাবী লোকদের ঋণ মাফ করে দেবে। তাহলে আশা করা যায়, আল্লাহ আমাদের মাফ করে দেবেন। এ ব্যক্তি যখন আল্লাহর কাছে গিয়ে পৌঁছল, আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেন। (বুখারি ও মুসলিম)। তাই সম্ভব হলে দুর্বল লোকদের ঋণ মাফ করে দেওয়া। এটা অনেক সাওয়াবের কাজ। আর মাফ না করতে পারলেও পর্যাপ্ত সুযোগ দেওয়া। আরেক হাদিসে হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘জানাযার জন্য এক ব্যক্তিকে হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে আনা হলো। নবীজি জিজ্ঞেস করলেন, এ ব্যক্তির কি কোনো ঋণ আছে? জবাবে বলা হলো, হ্যাঁ আছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন, ঋণ শোধ করার মতো সম্পদ কি সে রেখে গেছে? জবাবে বলা হলো, না রেখে যায়নি। তখন নবীজি বললেন, তোমরা এ ব্যক্তির জানাযা পড়ো, আমি পড়ব না। এ অবস্থা দেখে হজরত আলী (রা.) বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমি এ ব্যক্তির ঋণ আদায়ের ভার নিচ্ছি। অতঃপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার জানাযা পড়িয়েছেন।’ অন্য বর্ণনায় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘হে আলী! আল্লাহ তোমাকে আগুন থেকে বাঁচিয়ে রাখুন। যেভাবে তুমি তোমার একজন মুসলিম ভাইকে আগুন থেকে বাঁচালে। যে মুসলিম অপর মুসলিমের ঋণ পরিশোধ করে দেবে, শেষ বিচারের দিন আল্লাহ তাকে মাফ করে দেবেন।’ (শরহে সুন্নাহ)

ঋণ পরিশোধ না করার গোনাহ মারাত্মক। এটা হলো বান্দার হক। তাই ঋণদাতা তাকে ক্ষমা না করলে আল্লাহতায়ালা ক্ষমা করবেন না। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘মুমিনের আত্মা তার ঋণের কারণে ঝুলন্ত অবস্থায় থাকবে। অর্থাৎ জান্নাতে যেতে পারবে না, যতক্ষণ তার ঋণ পরিশোধ করা না হবে। (তিরমিযি শরিফ) হজরত মোহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে জাহাশ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা মসজিদে নববীর সম্মুখে যেখানে জানাযা রাখা হতো, সেখানে বসা ছিলাম। তখন হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও আমাদের মাঝে বসা ছিলেন। আমরা দেখলাম, তিনি আকাশের দিকে চোখ তুলে তাকালেন, তারপর দৃষ্টি অবনমিত করে কপালে হাত রেখে বললেন, সুবহানাল্লাহ! কী কঠিন বিষয় অবতীর্ণ হলো। বর্ণনাকারী বলেন, আমরা একদিন ও একরাত চুপ থাকলাম। এ সময়ের মধ্যে ভালো ছাড়া মন্দ কিছুই দেখলাম না। বর্ণনাকারী  মোহাম্মদ বলেন, (দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর) আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট আরজ করলাম, কী কঠিন বিষয় অবতীর্ণ হয়েছে? নবীজি ইরশাদ করেন, ঋণ সম্পর্কীয় কঠিন বিধান। সেই সত্তার শপথ যার হাতে আমার প্রাণ। যদি কোনো ব্যক্তি আল্লাহর পথে শহীদ হয়, তারপর পুনর্জীবিত হয়ে আবার আল্লাহর রাস্তায় শহীদ হয়, তারপর পুনর্জীবিত হয়ে আবার আল্লাহর রাস্তায় শহীদ হয় তথা তিনবার শাহাদাতের মর্যাদা লাভ করে, আর তার জিম্মায় অনাদায়ী ঋণ থেকে যায়, তাহলে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না, যতক্ষণ তার সেই ঋণ পরিশোধ না করা হয়। (আবু দাউদ) অন্যত্র রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, শহীদের সব গোনাহই ক্ষমা করে দেওয়া হবে। মাফ হবে না শুধু ঋণ। (সহিহ মুসলিম)

প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, এক মুমিনের ওপর আরেক মুমিনের হক হলো ছয়টি। তন্মধ্যে একটি হলো-মৃত ব্যক্তির জানাযায় উপস্থিত হওয়া এবং তার কাফন-দাফনের ব্যবস্থা করা। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জানাযায় উপস্থিত হয়ে আগত ব্যক্তিদের উদ্দেশে প্রশ্ন করতেন, এ ব্যক্তির কোনো ঋণ আছে কি না? যদি প্রত্যুত্তরে বলা হতো আছে, তাহলে তিনি বলতেন তার ঋণ পরিশোধের সামর্থ্য আছে কি না? যদি বলা হতো আছে, তাহলে ওয়ারিশদের বলতেন তা পরিশোধ করে দাও। অতঃপর জানাযা পড়াতেন। আর যদি বলা হতো পরিশোধ করার মতো সামর্থ্য তার নেই, তখন তিনি বলতেন, এ ঋণ পরিশোধ করার দায়িত্ব আমার, আমি নবী ও রাষ্ট্রের দায়িত্বশীল হিসেবে তা প্রদান করব।

উপরে বর্ণিত ঋণ অনাদায়ের ভয়াবহতা থেকে আমাদেরকে শিক্ষাগ্রহণ করতে হবে। যাতে ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে কবরে যেতে না হয়। প্রথমত চেষ্টা করা, ধার করজা থেকে বেঁচে থাকা। আর যদি ধার করতেই হয় তাহলে সব সময় তা লিখে রাখা ও আদায় করতে সচেষ্ট থাকতে হবে। কারণ, বান্দার হক আল্লাহ মাফ করেন না। মৃত্যুর পর তো ওয়ারিশগণ যার যার সম্পদ বণ্টন করে নিয়ে যাবে। তারা ঋণ পরিশোধ না করলে সেই শাস্তি নিজেকেই পেতে হবে।

 

লেখক : মুহাদ্দিস, জামিয়া শায়খ আবদুল মোমিন মোমেনশাহী

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads