• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪২৯
শবেবরাতে বাড়াবাড়ি ছাড়াছাড়ি নয়

ফাইল ছবি

ধর্ম

শবেবরাতে বাড়াবাড়ি ছাড়াছাড়ি নয়

  • প্রকাশিত ২৯ মার্চ ২০২১

একটি বরকতময় রাত হচ্ছে ১৫ শাবানের রাত। হাদিসে এ রাতকে লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান বা মধ্য শাবানের রাত বলা হয়েছে। আমাদের দেশে এ রাত শবেবরাত নামে পরিচিত। বর্তমান সমাজে এ রাত নিয়ে অনেক বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ি দেখা যায়। একদল লোক এ রাতে নানাধরণের বিদআতি কর্মকাণ্ড করে থাকে। যেমন : ফরজ ওয়াজিবের মতো গুরুত্ব দিয়ে সম্মিলিতভাবে মসজিদে রাত জাগরণ, মিলাদ মাহফিলের আয়োজন, মসজিদ কমিটির উদ্যোগে হালুয়া-রুটি ও খিচুড়ি-বিরিয়ানী পাকানো এবং তা বণ্টন করা, পটকা ফুটানো, আতশবাজি করা, আলোকসজ্জা করা ইত্যাদি। আবার আরেকদল লোক এ রাতের ফজিলত সম্পূর্ণ অস্বীকার করে। তাদের দাবি হলো, ‘ইসলামে শবেবরাত বলতে কিছু নেই। এ বিষয়ে যত বর্ণনা আছে সব জাল কিংবা দুর্বল।’

শবেবরাতের ব্যাপারে আমাদের এ ধরনের বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ি কাম্য নয়। শবেবরাতে বিদআতি কর্মকাণ্ড যেমন উচিত নয়, তেমনি শবেবরাতের ফজিলত অস্বীকার করাও ঠিক নয়। এ রাতের ফজিলতের ব্যাপারে যেমন জয়িফ হাদিস আছে, তেমনি সহিহ হাদিসও আছে। ফুকাহায়ে কিরামের মতে, কোনো আমলের ফজিলতের ক্ষেত্রে জয়িফ হাদিস গ্রহণযোগ্য যদি এর সপক্ষে কোনো সহিহ হাদিস থাকে এবং বিপরীতে কোনো সহিহ হাদিস না থাকে। এ রাতের ফজিলতের বিপক্ষে কোনো সহিহ হাদিস নেই; বরং এর পক্ষে সহিহ হাদিস আছে।

শবেবরাতের ফজিলত সম্পর্কে কয়েকজন সাহাবির সূত্রে একটি সহিহ হাদিস বর্ণিত হয়েছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘আল্লাহতায়ালা মধ্য শাবানের রাতে তার সৃষ্টির প্রতি রহমতের দৃষ্টি দেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যতীত সকলকে ক্ষমা করে দেন।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং-১৩৯০, সহিহ ইবনে হিব্বান, শুয়াবুল ঈমান লিল-বায়হাকী : ৬২০৪) এ সহিহ হাদিস হতে প্রমাণিত হয়, শবেবরাত অন্যান্য সাধারণ রাতের মতো নয়। এটা অত্যন্ত ফজিলতময় রাত। এ রাতে আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের প্রতি বিশেষ রহমতের দৃষ্টি দেন এবং তাদের গোনাহসমূহ ক্ষমা করেন। তবে এ ফজিলত লাভের জন্য দুটি দোষ থেকে মুক্ত থাকা জরুরি। তা হলো শিরক ও হিংসা-বিদ্বেষ। যাদের মধ্যে এ দুটি দোষ থাকবে তারা এ রাতে আল্লাহর রহমত ও মাগফিরাত লাভ করতে পারবে না। তাই শবেবরাতের ফজিলত লাভ করতে হলে শিরক ও হিংসা-বিদ্বেষ হতে দূরে থাকা আবশ্যক।

হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, ‘এক রাতে আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (বিছানায়) না পেয়ে তাঁর খোঁজে বের হলাম। আমি লক্ষ করলাম, তিনি জান্নাতুল বাকীতে (মদিনার কবরস্থানে) তার মাথা আকাশের দিকে তুলে আছেন। তিনি বলেন, হে আয়েশা! তুমি কি আশঙ্কা করেছো যে, আল্লাহ ও তাঁর রাসুল তোমার প্রতি অবিচার করবেন? আয়িশা (রা.) বলেন, তা নয়, বরং আমি ভাবলাম যে, আপনি হয়তো আপনার কোনো স্ত্রীর কাছে গেছেন। তিনি বলেন, মহান আল্লাহ মধ্য শাবানের রাতে দুনিয়ার নিকটবর্তী আকাশে অবতরণ করেন এবং কালব গোত্রের মেষপালের পশমের চাইতেও অধিক সংখ্যক লোকের গুনাহ মাফ করেন। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং-১৩৮৯) অনেকেই উল্লিখিত হাদিস শবেবরাতে কবর জিয়ারতের দলিল হিসেবেও পেশ করেন। তবে তা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মতো ঘোষণা না দিয়ে একাকী গোপনীয়ভাবে করতে হবে। ঘোষণা দিয়ে জামাআতবদ্ধভাবে এ রাতে কবর জিয়ারতকে ওলামায়ে কিরাম বিদআত বলেছেন।

হজরত আলী বিন আবু তালিব (রা.) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যখন মধ্য শাবানের রাত আসে তখন তোমরা এ রাতে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়ো এবং এর দিনে রোজা রাখ। কেননা এ দিন সূর্য অস্তমিত হওয়ার পর আল্লাহ পৃথিবীর নিকটতম আকাশে নেমে আসেন এবং বলেন, কে আছো আমার নিকট ক্ষমাপ্রার্থী, আমি তাকে ক্ষমা করবো। কে আছো রিযিকপ্রার্থী আমি তাকে রিযিক দান করবো। কে আছো রোগমুক্তি প্রার্থনাকারী, আমি তাকে নিরাময় দান করবো। কে আছ এই প্রার্থনাকারী। ফজরের সময় হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত [তিনি এভাবে আহ্বান করেন]।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং-১৩৮৮)

উল্লিখিত হাদিস হতে শবেবরাতে নামাজ ও দোয়ার এবং পরের দিন রোজা রাখার নির্দেশের প্রমাণ পাওয়া যায়। তবে হাদিসে নামাজের নির্দিষ্ট রাকাতসংখ্যা ও বিশেষ কোনো সূরা দিয়ে নামাজ পড়ার ব্যাপারে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় না। আর এ রাতের নফল নামাজ পরিবারের লোকজনসহ ঘরে একাকী পড়াই ভালো। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং সাহাবা তাবেয়ীদের যুগে এ রাতে দলবদ্ধভাবে মসজিদে নামাজ আদায় ও কবর জিয়ারত কিংবা হালুয়া-রুটি ও শিন্নী বিতরণ, আলোকসজ্জা, আতশবাজি ইত্যাদির প্রমাণ পাওয়া যায় না। তাই এসব থেকে দূরে থাকা কর্তব্য।

লেখক :মুহাম্মাদ আবু আখতার

আলেম, প্রাবন্ধিক

abuakhtariu@gmail.com

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads