• সোমবার, ৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪২৯
প্রতিবেশীর প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্য

সংগৃহীদ ছবি

ধর্ম

প্রতিবেশীর প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্য

  • প্রকাশিত ৩১ মার্চ ২০২১

মানুষ সামাজিক জীব। সমাজ জীবনে একে অপরের সাথে মিলেমিশে চলতে হয়।  কোরআন ও হাদিসে একে অপরের তথা প্রতিবেশীর হক আদায়ের ব্যাপারে অত্যধিক গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে। প্রতিবেশী কারা? হজরত হাসান (রহ.) কে প্রতিবেশী সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেছেন, নিজ ঘর হতে সম্মুখের চল্লিশটি, পশ্চাতের চল্লিশটি, ডান পাশের চল্লিশটি ও বাম পাশের চল্লিশটি যাদের ঘর রয়েছে এরাই প্রতিবেশী। প্রতিবেশীর প্রতি আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য অনেক। বিপদে-আপদে অতি সহজে সহযোগিতার হাত বাড়ানোর একমাত্র কাছের লোক হলো প্রতিবেশী। তাই তাদের প্রতি আমাদের কিছু দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে।

প্রথমত, প্রতিবেশীকে নিরাপদে বসবাস করার অধিকার দিতে হবে। সুতরাং তাকে হাত কিংবা মুখ অথবা অন্য কোনো উপায়ে কষ্ট দেওয়া যাবে না। হাদিসে এসেছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহর কসম! সে ব্যক্তি মুমিন নয়। আল্লাহর কসম! সে ব্যক্তি মুমিন নয়। আল্লাহর কসম! সে ব্যক্তি মুমিন নয়। জিজ্ঞেস করা হলো, কোন ব্যক্তি? হে আল্লাহর রাসুল! তিনি বললেন, যে লোকের প্রতিবেশী তার অনিষ্ট থেকে নিরাপদে থাকে না।’ অন্যত্র বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘ওই ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না, যার অনিষ্ট থেকে তার প্রতিবেশী নিরাপদে থাকে না।’ (বুখারি, হাদিস নং-৬০১৬, মুসলিম, হাদিস নং-১৮১)

দ্বিতীয়ত, প্রতিবেশী অভুক্ত থাকলে তার খাদ্যের ব্যবস্থা করতে হবে। সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যদি প্রতিবেশীর খাদ্যের ব্যবস্থা না করে তাহলে গুনাহগার হতে হবে। হাদিসে এসেছে হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি শুনেছি- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘সে মুমিন নয়, যে ভরপেট খায় অথচ তার পাশে তার প্রতিবেশী অনাহারে থাকে।’ (বুখারির আদাব-১১২, তাবারানী- ১২৫৭৩, হাকেম, বাইহাকী-২০১৬০, সহিহুল জামে-৫৩৮২)

তৃতীয়ত, কোনো প্রতিবেশী যদি ভুলবশত কিংবা অনিচ্ছাকৃতভাবে কোনো অপরাধ করে ফেলে, তাহলে অবশ্যই সে দোষ গোপন করে প্রতিবেশীর মান-সম্মান রক্ষা করতে হবে। এ প্রসঙ্গে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যদি কোনো মুসলমান ব্যক্তি অপর কোনো মুসলমানের দোষ গোপন করে তাহলে আল্লাহ কেয়ামতের দিন সেই ব্যক্তির দোষ গোপন করবেন।’

চতুর্থত, প্রতিবেশীকে সুখে-দুঃখে সাহায্য-সহযোগিতা করা অপর প্রতিবেশীর নৈতিক দায়িত্ব। বিশেষ করে প্রতিবেশী যখন বিপদে পড়ে যায় তখন তার সাহায্য এগিয়ে যাওয়া উচিত।

পঞ্চমত, প্রতিবেশীর সাথে সদ্ব্যবহার করতে হবে। কোরআনুল কারীমে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেছেন, ‘এবং তোমরা আল্লাহরই ইবাদত করো এবং তাঁর সাথে কোনো বিষয়ে অংশীদার স্থাপন করোনা; এবং মাতা-পিতার সাথে সদ্ব্যবহার করো এবং আত্মীয়-স্বজন, পিতৃহীন, দরিদ্র, সম্পর্কবিহীন প্রতিবেশী, পার্শ্ববর্তী সহচর ও পথিক এবং তোমাদের দাস-দাসীদের সাথেও সদ্ব্যবহার করো; নিশ্চয়ই আল্লাহ অহংকারী আত্মাভিমানীকে ভালোবাসেন না।’ (সুরা নিসা, আয়াত- ৩৬)

ষষ্ঠত, প্রতিবেশীকে সম্মান করতে হবে। কারণ অপরকে সম্মান করলে নিজে সম্মান লাভ করতে পারে। হাদিসে এসেছে হজরত আবু শুরায়হ খুযায়ী (রা.) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন প্রতিবেশীর সাথে সদ্ব্যবহার করে। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন তার মেহেমানের খাতির করে এবং যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালের প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন ভালো কথা বলে, অথবা নীরব থাকে।’ (মুসলিম, হাদিস নং-১৮৫, কিছু শব্দ বুখারির)

এছাড়াও প্রতিবেশীর প্রতি আরো কিছু দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। সেগুলো হলো- কোনো প্রতিবেশী অসুস্থ হলে দ্রুত তার আরোগ্যের জন্য দোয়া করা এবং সরাসরি তার সেবা-শুশ্রূষা করা আবশ্যক। প্রতিবেশীর সাথে দেখা হলে তার সাথে সালাম ও কুশলাদি বিনিময় করা। প্রতিবেশীর সাথে ঝগড়া-বিবাদ না করা ইত্যাদি। সর্বোপরি, প্রতিবেশীর সাথে সদ্ভাব বজায় রাখা প্রত্যেক মুসলমানের দায়িত্ব ও কর্তব্য।

লেখক :মো. জোবাইদুল ইসলাম

শিক্ষার্থী, সুফিয়া নুরিয়া ফাজিল মাদরাসা, মিরসরাই, চট্টগ্রাম

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads