• সোমবার, ৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪২৯

ধর্ম

সর্বোত্তম মানুষ যারা

  • প্রকাশিত ০২ এপ্রিল ২০২১

নাঈম কাসেমী

 

 

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মানুষকে সর্বশ্রেষ্ঠ প্রাণী হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। গোটা সৃষ্টির মধ্যে মানুষই একমাত্র সৃষ্টি, যাকে আল্লাহ তায়ালা সুমহান মর্যাদার আসনে সমাসীন করেছেন। তাকে আশরাফুল মাখলুকাত তথা সৃষ্টির সেরা জীব বলে ঘোষণা করেছেন। এ মর্যাদা তিনি আর কাউকে দেননি। তবে এই মর্যাদা অক্ষুণ্ন রাখতে হলে কিছু বিধিনিষেধ মেনে চলতে হয়। যেগুলো আল্লাহ ও তাঁর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিস্তারিতভাবে বলে দিয়েছেন। এই বিধিনিষেধগুলো মানার দ্বারা একজন মানুষ ফেরেশতা থেকেও উচ্চ মর্যাদায় সমাসীন হতে পারেন। আবার যদি কেউ এগুলো না মানে, তাহলে সৃষ্টির সেরা মানুষটি লাঞ্ছিত অপমানিত হয়ে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে। নিজ গুণ ও বৈশিষ্ট্যের কারণে মানবসমাজের একজন অন্যজনের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করে থাকেন। এমনি কিছু বৈশিষ্ট্যের বিবরণ রাসুলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিভিন্ন হাদিসে উল্লেখ করেছেন। পরিচয় দিয়েছেন শ্রেষ্ঠ মানুষদের। আলোচনা করেছেন শ্রেষ্ঠ মানুষের বিভিন্ন গুণাবলির কথা। হাদিসে বর্ণিত শ্রেষ্ঠ হওয়ার অনেক বৈশিষ্ট্যের মধ্য থেকে এখানে কিছু বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা হলো

 

গুনাহমুক্ত জীবন গড়া : আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর রাসুল! সর্বোত্তম মানুষ কে? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ওই ব্যক্তি (সর্বোত্তম), যার অন্তর পাপমুক্ত, পরিষ্কার। কারো প্রতি কোনো আক্রোশ ও বিদ্বেষ নেই এবং যে সত্যবাদী হয়। (তিরমিযি শরিফ)।

 

চরিত্র সুন্দর : আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তি সে, যার চরিত্র সবচেয়ে বেশি সুন্দর (বুখারি শরিফ)।

 

প্রতিবেশীর সাথে ভালো আচরণ করা :  আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, সঙ্গী হিসেবে আল্লাহ তায়ালার কাছে সেই ব্যক্তি উত্তম, যে নিজের সঙ্গীদের কাছে ভালো এবং প্রতিবেশী হিসেবে আল্লাহ তায়ালার কাছে সেই ব্যক্তি শ্রেষ্ঠ, যে আপন প্রতিবেশীর কাছে ভালো। (তিরমিযি শরিফ)

 

লেনদেনে স্বচ্ছ থাকা : আবু হুরায়রা (রাজি.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ওই ব্যক্তি, যে নিজ পাওনাদারের পাওনা উত্তমভাবে আদায় করে (বুখারি শরিফ)।

 

কোরআনুল কারীম শিখা ও শেখানো :  উসমান (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ওই ব্যক্তি, যে নিজে কোরআন শিক্ষা করে এবং অন্যকে তা শিক্ষা দেয় (বুখারি শরিফ)।

 

কল্যাণকামী হওয়া : আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, একদা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবায়ে কেরামদের একটি দলের মধ্যে উপবিষ্ট অবস্থায় বললেন, তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তি কে, আমি কি তা তোমাদের বলব? সাহাবায়ে কেরামরা নীরব রইলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ কথা তিনবার বললেন। অতঃপর জনৈক সাহাবি আরজ করলেন, অবশ্যই বলুন হে আল্লাহর রাসুল! রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তি হলো, যার কাছ থেকে সবাই মঙ্গলের আশা করে এবং তার অনিষ্ট থেকে নিরাপদ থাকে। আর তোমাদের মধ্যে নিকৃষ্টতম ব্যক্তি হলো, যার কাছ থেকে মঙ্গলের আশা করা যায় না এবং তার অনিষ্ট থেকে মানুষ নিরাপদ নয়। (তিরমিজি শরিফ)

 

আল্লাহর পথে জিহাদ করা : আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর রাসুল! সর্বোত্তম মানুষ কে? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ওই মুমিন, যে নিজ জানমাল নিয়ে (দীন-ধর্ম রক্ষায়) আল্লাহর পথে জিহাদ করে (বুখারি শরিফ)।

 

আল্লাহর ভয় অন্তরে থাকা : আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করা হলো, শ্রেষ্ঠ মর্যাদার অধিকারী কে? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, মানুষের মধ্যে আল্লাহ তায়ালার কাছে শ্রেষ্ঠ মর্যাদার অধিকারী ওই ব্যক্তি, যে আল্লাহকে বেশি ভয় করে (বুখারি শরিফ)।

 

ওয়াদা পূর্ণ করা : আবু সাঈদ (রা.) থেকে বর্ণিত : একবার আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ঘরের পাশে বসা ছিলাম। তখন নবীজি বের হয়ে ইরশাদ করেন, ‘আমি কি বলব, তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম মানুষ কে? সাহাবায়ে কেরাম আরজ করলেন, হ্যাঁ, হে আল্লাহর রাসুল! রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম মানুষ হলো, যে প্রতিশ্রুতি পূরণে অধিক প্রতিজ্ঞাবদ্ধ (মেশকাত শরিফ)।

 

পরিবারের সাথে সদাচারী হওয়া : আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ওই ব্যক্তি, যে নিজের পরিবারের কাছে ভালো (তিরমিজি শরিফ)।

 

পিতা-মাতার অবাধ্য না হওয়া : হাদিসে পাকে হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, পিতা-মাতার সন্তুষ্টির মাঝে আল্লাহর সন্তুষ্টি নিহিত। আর পিতা-মাতার অসন্তুষ্টির মাঝে আল্লাহর অসন্তুষ্টি নিহত। অন্য হাদিসে উল্লেখ রয়েছে- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, পিতা-মাতা তোমার জান্নাত অথবা জাহান্নাম (তিরমিজি শরিফ)।

 

হাদিসের বিশাল ভান্ডারে এরকম আরো অনেক বৈশিষ্ট্য উল্লেখ রয়েছে। এসব বর্ণনার কোনোটিই পারস্পরিক সাংঘর্ষিক নয়। প্রতিটিই নিজ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ বহন করে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন যে নসিহত উপযুক্ত মনে করেছেন, তখন সেই নসিহত করেছেন। তাই আমাদের উচিত হলো, মুসলিম হিসেবে উল্লিখিত প্রতিটি গুণ অর্জনে সচেষ্ট থাকা। সেই সাথে কোরআন ও হাদিসে আরো যেই গুণাবলির কথা রয়েছে সেগুলোও জীবনে বাস্তবায়ন করার মাধ্যমে নিজেকে আল্লাহর প্রিয়পাত্রে পরিণত করা। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের আমাদের সবাইকে তাঁর প্রিয় বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত করে নিন। আমীন।

 

লেখক : মুহাদ্দিস, জামিয়া শায়খ আবদুল মোমিন, মোমেনশাহী

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads