• বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ১ জৈষ্ঠ ১৪২৯
সন্ত্রাস দমনে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি

প্রতীকী ছবি

ধর্ম

সন্ত্রাস দমনে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি

  • প্রকাশিত ১০ এপ্রিল ২০২১

ইসলাম বিশ্বজনীন শান্তি, সমপ্রীতি ও মানবজাতির জন্য কল্যাণকামী পূর্ণাঙ্গ একটি জীবনব্যবস্থা। ইসলাম সন্ত্রাসবাদে বিশ্বাসী নয়; বরং শান্তিকামিতায় বিশ্বাসী। ইসলাম ও মুসলমানরা সর্বদা শান্তি চায়। তাছাড়া কারো অকল্যাণ কামনা ও অহিত চিন্তা ইসলাম কখনো অনুমোদন করে না; বরং ইসলামের নির্দেশ হলো-তুমি নিজের জন্য যা ভালোবাস, তা তোমার অপর ভাইয়ের ক্ষেত্রেও পছন্দ কর। ইসলামপ্রিয় মুসলমানের পরিচয় দিয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘প্রকৃত মুসলমান সেই ব্যক্তি, যার হাত ও মুখ থেকে অন্য মুসলমান নিরাপদ থাকে।’ (বুখারি ও মুসলিম) কিন্তু সন্ত্রাসীরা সেটা চায় না। বরং তারা সর্বদা মানুষের অকল্যাণে নিয়োজিত। তাদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের ফলে সমাজজীবনের শান্তি-শৃঙ্খলা, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা বিনিষ্ট হয়ে যায়। যার প্রভাব ব্যক্তি জীবন থেকে নিয়ে রাষ্ট্রীয় জীবনেও এসে পড়ে। আর সন্ত্রাসী সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তারা দুনিয়ায় ধ্বংসাত্মক কাজ করে বেড়ায়, আল্লাহ ধ্বংসাত্মক কাজে লিপ্ত ব্যক্তিদের ভালোবাসেন না।’ (সুরা মায়েদা, আয়াত-৬৪)

তাই সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। আর তা হতে হবে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গিতে। যদি এমনটা করা যায় তাহলে সন্ত্রাস নির্মূল হবেই ইনশাআল্লাহ। পক্ষান্তরে অন্যায়ভাবে মানুষ হত্যা, তাদের জানমালের ক্ষতিসাধন ও রাষ্ট্রীয় সম্পদ বিনষ্ট করাকে কবিরা গুনাহ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘নরহত্যা বা দুনিয়ায় ধ্বংসাত্মক কাজ করা হেতু ব্যতীত কেউ কাউকে হত্যা করলে সে যেন দুনিয়ার সব মানুষকে হত্যা করল; আর কেউ কারও প্রাণ রক্ষা করলে সে যেন দুনিয়ার সব মানুষের প্রাণ রক্ষা করল।’ (সুরা মায়েদা , আয়াত-৩২)

আর তাই সন্ত্রাস প্রতিরোধে ইসলাম কী বলে সে সম্পর্কে আমাদের জানতে হবে, বুঝতে হবে এবং সে মতে সন্ত্রাস প্রতিরোধে প্রদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। তবেই আমরা সন্ত্রাসমুক্ত একটি দেশ গড়ে তুলতে পারব। নিম্মে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে কয়েকটি বিষয় আলোকপাত করা হলো। (১) নৈতিক শিক্ষা প্রদান : সন্ত্রাসের মূল কারণ হলো নৈতিক শিক্ষা না থাকা। আর নৈতিক শিক্ষা না থাকার ফলে সমাজ এখন সন্ত্রাসবাদে পরিণত হয়েছে। যদি জাগতিক শিক্ষার সাথে যদি ধর্মীয় শিক্ষা প্রদান করা হত তাহলে সন্ত্রাসের জন্ম হত না। কারণ শিক্ষার সাথে যখন ধর্মীয় অনুভূতি যুক্ত হবে তখন সে শিক্ষায় শিক্ষিত কোনো লোক বা জনগোষ্ঠী সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত হবে না। (২) দুটি ভয় অন্তরে জাগ্রত করা : প্রতিটি মানুষের অন্তরে যদি আল্লাহর ভয় আর আখেরাতের ভয় জাগ্রত করা যায় তাহলে কোনো লোক বা জনগোষ্ঠী সন্ত্রাসবাদে লিপ্ত হবে না। (৩) সর্বস্তরে ইনসাফ কায়েম বা প্রতিষ্ঠা করা : দলমত নির্বিশেষে প্রশাসনের সকল স্তরে এবং সমাজে ইনসাফ কায়েম করতে পারলে সন্ত্রাসবাদ অনেকটা কমে আসবে। শুধু তাই নয়, নিরপেক্ষভাবে সকল দলের সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করতে হবে। এভাবে ইনসাফ কায়েম করতে পারলে সন্ত্রাস চিরতরে নির্মূল হয়ে যাবে। (৪) রাষ্ট্রক চার দফা মূলনীতি পালন করা: মহান আল্লাহ তায়ালা একজন রাষ্ট্রপ্রধানের চারটি কাজের কথা সূরায়ে হজ্জের ৪১ নং আয়াতে বলেছেন-সরকার কঠোরভাবে এ চারটি (১. নামাজ কায়েম, ২. জাকাত আদায়, ৩. সৎকাজে আদেশ, ৪. মন্দকাজে নিষেধ) দায়িত্ব পালন করলে সমাজ থেকে সন্ত্রাস নির্মূল হবে। (৫) সন্ত্রাসীদের উপযুক্ত শাস্তি কার্যকরণ : ইসলামী শরিয়ত সন্ত্রাসের সমস্ত পথ বন্ধ করার পাশাপাশি সন্ত্রাসীদেরও শায়েস্তা করার বিধান নিশ্চিত করেছে। কারণ সন্ত্রাসীদের উপযুক্ত শাস্তি না দিলে সন্ত্রাসের মাত্রা দিন দিন বেড়েই চলবে। তাই স্থায়ী শাস্তি স্থাপনের জন্য ইসলাম চুরি, হত্যা, যেনা ইত্যাদি জঘন্য অপরাধের সুনির্দিষ্ট বিধান রেখেছে। যদি তা যথাযথ কার্যকর করা হয় তাহলে সমাজ থেকে সন্ত্রাসের উৎসগুলো মিটে যাবে। (৬) গণসচেতনতা তৈরি : সমাজ থেকে সন্ত্রাস নির্মূল করতে হলে সমাজের সকল শ্রেণির মানুষকে সচেতন হতে হবে। সন্ত্রাসবাদীদের বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধ হতে হবে। কঠোরহস্তে অন্যায় কাজ প্রতিরোধ করতে পারলে সন্ত্রাস তিরোহিত হবে। কারণ সচেতন নাগরিকদের সুসংগঠিত শক্তি ও সামাজিক প্রতিরোধের সামনে সন্ত্রাসীদের পেশীশক্তির পরাজয় সুনিশ্চিত। (৭) শান্তিকামী রাষ্ট্রসমূহের ঐক্যবদ্ধ অবস্থান: শান্তিকামী রাষ্ট্রসমূহ শান্তি ও সমৃদ্ধির পক্ষে ঐক্যবদ্ধ অবস্থান নিতে পারলে সাম্রাজ্যবাদী সন্ত্রাসীচক্র পৃথিবীর দেশে দেশে সন্ত্রাস সৃষ্টির সুযোগ পাবে না। তৃতীয় বিশ্বের উন্নয়নশীল মুসলিম দেশসমূহ নিজেদের ঐক্য প্রয়াস এবং প্রতিরক্ষাব্যবস্থা জোরদার করার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসীচক্রের কবল থেকে নিরাপত্তা লাভ করতে পারবে।

সুতরাং, উপরিউক্ত বিষয়গুলোর প্রতি যদি আমরা গভীরভাবে মনযোগী হতে পারি এবং সেমতে সমাজ, রাষ্ট্র ও দেশ পরিচালনা করতে পারি; তাহলে সমাজ, রাষ্ট্র ও দেশে কখনই সন্ত্রাসবাদ সৃষ্টি হবে না ইনশাআল্লাহ।

মুস্তাকিম আল মুনতাজ

লেখক : আলেম, শিক্ষক ও প্রাবন্ধিক

নির্বাহী সম্পাদক, মাসিক ছন্দপাতা

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads