• মঙ্গলবার, ৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪২৯
ইবাদতের মাস রমজান

সংগৃহীত ছবি

ধর্ম

ইবাদতের মাস রমজান

  • প্রকাশিত ১১ এপ্রিল ২০২১

রমজান, এই শব্দটি আমরা যখন শুনি ঠিক তখনই আনন্দের ঢেউ মনের মাঝে বইতে থাকে। তখন খুশির  আর কোনো অন্ত থাকে না। প্রভুর কাছে মুমিন শুকরিয়া জ্ঞাপন করতে থাকে এই বরকতপূর্ণ মাস পেয়ে। পক্ষান্তরে মুনাফেক ব্যক্তি রমজান মাস পেয়ে মনঃক্ষুণ্ন করে সারাদিন কষ্টের মাঝে কাটে তার তনুমন। অস্থির হয়ে যায় এ মাস পেয়ে। যখন এই বরকতপূর্ণ মাস চলে যেতে থাকে, সে প্রফুল্ল হতে থাকে। তার মনে আনন্দের জোয়ার বইতে থাকে রমজান বিদায়ের মুহূর্তকাল দেখে। এই হলো মুনাফেক ব্যক্তির মনের করুণাবস্থা। আর মুমিন ব্যক্তির অবস্থা হলো এরূপ- প্রতিটি মুমিনই মন বাগানে হরেক রকম ফুলের গাছ রোপণ করতে থাকে। স্বপ্নের বাগানে দেখতে থাকে চমৎকার নানা জাতের সুন্দর সুন্দর ফুলগুলোকে। কিন্তু কিছু পরগাছা এসে গাছগুলোকে সেখানে নিজের ভাগ বসাতে চায়। আর মুমিন সেই গাছগুলোকে তওবা ইস্তিগফারের দ্বারা দূর করে দেয়। আর শেকড় থেকে পরগাছাকে মূলোৎপাটন করার দৃষ্টান্ত হলো গুনাহের সব আগাগোড়া একেবারে পরিত্যাগ করা। আর গাছকে পরিচর্যার উপমা হলো নেককাজ দিয়ে মন সতেজ রাখা। গুনাহের নাপাকি থেকে অন্তর দূরে রাখা। ফলে সেই বাগানে সুসজ্জিত হবে রংবেরঙের নানান ফুল। মুমিনের মনের অবস্থাটা এমনই।

আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন : রমজান মাস হলো সেই মাস, যাতে নাজিল করা হয়েছে কোরআন, যা মানুষের জন্য হেদায়েত এবং সত্যপথ যাত্রীদের জন্য সুস্পষ্ট পথ নির্দেশ আর ন্যায় ও অন্যায়ের মাঝে পার্থক্য বিধানকারী। (আল বাকারা : ১৮৫)। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, রমজান মাস যখন শুরু হয় তখন এই রমজান মাসেই জান্নাতের সব দরজা খুলে দেওয়া হয়, জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং শয়তানকে শৃঙ্খলে আবদ্ধ করা হয়। (বুখারি-৩০৩৫)

উপরের হাদিস স্পষ্ট করে দিল রমজানের মাহাত্ম্য, গুরুত্ব কত অধিক। একজন মুমিন ব্যক্তির জন্য আমল করার জন্য রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এই বাণীই যথেষ্ট।

রমজান হলো মুমিনের ইবাদতের মাস। আল্লাহ তায়ালার নৈকট্য অর্জনের মাস। এ মাসে আল্লাহ তায়ালার রহমত বান্দার ওপর বৃষ্টির ন্যায় প্রবাহিত হতে থাকে। যার কোনো ইয়াত্তা নেই। এ মাসে মুমিনের অন্তর ব্যাকুল ও পাগলপারা থাকে জান্নাত পাওয়ার আশায় ও জাহান্নাম থেকে মুক্তিলাভের কামনায়। এই মাস গুনাহ মাফের মাস। ওলী হওয়ার মাস। কিন্তু দুঃখ এবং আফসোসের কথা হলো- এ মাসকে আমরা অন্তর দিয়ে উপলব্ধি করি না। এ মাসের ফাজায়েল জেনে তদানুসারে আমল করতে একশ্রেণির মানুষ পুরোপুরি অনাগ্রহী। তাদের দিনের পুরোটা অংশ কেটে যায় হেলায় খেলায়। কারো কাটে মোবাইলে আবার কারো কাটে অনলাইনে আনন্দ বিনোদনের মাঝে। অথচ কোরআন নাজিলের মাসে কোরআন তেলাওয়াতের পাশাপাশি তওবা ইস্তিগফার ও জিকির আসকারের মধ্যে সময় অতিবাহিত করা উচিত ছিল। কিন্তু তা না করে অন্য কাজে সময় ব্যয় হচ্ছে। সে মুহূর্তকে অযথা বললে মোটেও ভুল হবে না।

এ মাস হলো আল্লাহ তায়ালার সাথে সম্পর্ক গড়ার মাস। পূর্ববর্তী আকাবির তারা রমজানকে যথাযথভাবে মূল্যায়ন করতেন। তাদের প্রতিটি কাজ ছিল রুটিনমাফিক। প্রত্যেক মুহূর্তকে সে অনুসারে অতিবাহিত করতেন।

হয়তো কোরআন তেলাওয়াত অথবা জিকির আসকার কিংবা কোনো ওয়াজিফা ইত্যাদি। একটি মুহূর্ত এমন হতো না যে সেই মুহূর্তটি অযথা। উপরোক্ত বিষয়গুলো থেকে প্রতীয়মান হয় যে, তাদের কাছে রমজানের গুরুত্ব কী পরিমাণ ছিল। রহমত মাগফিরাত নাজাত এই তিন অংশে ভাগ করা হয়েছে এ মাসকে। দিবারাত্রির প্রতিটি অংশই হচ্ছে ইবাদত করার সুবর্ণ মুহূর্তকাল। সুতরাং আমাদের করণীয় হলো এ মাসের মূল্যায়ন করে তার আহকামগুলো যথাযথ আদায় করে রমজানের বরকত, ফজিলত অর্জন করা। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা আমাদের আমলি জিন্দেগি দান করুন। আমিন।

লেখক :মাওলানা শামসুল আরেফীন

আলেম, প্রাবন্ধিক

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads