• মঙ্গলবার, ৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪২৯
ইসলামে নারীর মর্যাদা

প্রতীকী ছবি

ধর্ম

ইসলামে নারীর মর্যাদা

  • প্রকাশিত ১১ এপ্রিল ২০২১

ইসলামপূর্ব যুগে আরবের জাহেলিয়াতে সমাজব্যবস্থা ছিল দুঃসহনীয়। তখন আরবে মেয়েদের জীবন্ত পুঁতে ফেলা হতো, পরিবারে মেয়েরা পরিচিতি পেত অলক্ষ্মী হিসেবে এবং পিতার কাছে বিবেচিত হতো একপ্রকার বোঝা। ইসলামী যুগে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নারীকে মানবীয় মর্যাদায় সম্মানিত করেছেন। তার মেহনতি প্রচেষ্টায় নারীদের ঘৃণা, অবহেলা, নির্যাতন ও হত্যার মতো নিকৃষ্ট কাজ বন্ধ হওয়ার বিপরীতে নারীরা পেয়েছে প্রাপ্য অধিকার, পেয়েছে মুক্তির আনন্দ। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বক্ষেত্রেই নারীর সম্মান ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করেছেন। কন্যা হিসেবে নারীকে দিয়েছেন সর্বোচ্চ মর্যাদা। তিনি বলেন, ‘যে ঘরে কন্যাসন্তান প্রথমে জন্মগ্রহণ করবে সেই ঘরে আল্লাহ রহমত নাজিল করবেন।’ অন্যত্র ঘোষণা করেন, ‘যার একটি কন্যাসন্তান আছে সে একটি জান্নাতের মালিক।’ হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, ‘যে বাবা -মা কন্যাদের ব্যাপারে সমস্যার সম্মুখীন হয় এবং তাদের সঙ্গে উত্তম আচরণ করে, বিচারের দিবসে এই কন্যারাই তার জন্য জাহান্নামের আগুনের অন্তরায় হবে।’

একজন কন্যা আবার নির্দিষ্ট সময় পর হয় একজনের স্ত্রী। স্ত্রী হিসেবেও নারীর সর্বোচ্চ অধিকার নিশ্চিত করেছেন হজরত মোহাম্মদ মুস্তফা (সা.)। ইসলামের দৃষ্টিতে একজন স্বামী তার স্ত্রীর মোহরানা পরিপূর্ণভাবে আদায় করার পাশাপাশি খাদ্য, বস্ত্র, চিকিৎসা ও বাসস্থানের ব্যবস্থা করবে। স্ত্রীর মন প্রফুল্ল রাখার চেষ্টা করবে। স্ত্রীর হাত খরচ কিংবা বিভিন্ন সময়ে উপহার দেবে। পর্দা রক্ষা করে ঘুরতে ও নিকট আত্মীয়স্বজনের সাথে দেখা করার সযোগ দেবে। সর্বদা স্ত্রীর সাথে ভালো ব্যবহার করবে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে সর্বাধিক ভালো মানুষ তারাই, যারা তাদের স্ত্রীদের সাথে ভালো ব্যবহার করে।’ (তিরমিজি)

ইসলামে একজন নারী প্রথমে কন্যার মর্যাদা এরপর পায় স্ত্রীর মর্যাদা। পরবর্তীকালে এই নারীই আবার পায় একজন মায়ের মর্যাদা। একদিন হজরত মুয়াবিয়া ইবনে জাহিমা আসসালামী (রা.) রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খেদমতে হাজির হয়ে বললেন, ‘ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমি জিহাদ করতে ইচ্ছুক। এ ব্যাপারে আপনার পরামর্শ কী? জবাবে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমার মা আছেন? তিনি বললেন, জ্বি, আছেন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, মায়ের সেবায় নিয়োজিত থাকো, কেননা তার পায়ের নিচেই জান্নাত।’ এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে জিজ্ঞেস করল, ‘ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমার কাছে কে উত্তম ব্যবহার পাওয়ার বেশি হকদার?’ তিনি বললেন, মা। লোকটি বলল, তারপর কে? তিনি বললেন, তোমার মা। সে বলল, তারপর কে? তিনি বললেন, তোমার মা। সে বলল, তারপর কে? তিনি বললেন, তোমার বাবা।’ (বুখারি-মুসলিম)

মায়ের মনে কষ্ট দিলে, তার ভালো কথা অমান্য করলে সে যতবড় ব্যক্তি হোক না কেন, তার জান্নাতে প্রবেশ করা কঠিন হয়ে যাবে। কেননা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত। আবার রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নারীকে তার পিতা, মাতা, স্বামী, ভাই, সন্তান ও অন্যান্য সব আত্মীয়ের কাছ থেকে নিশ্চিত করেছেন নারীর প্রাপ্য অধিকার। ইসলামে নারীকে উত্তরাধিকার সূত্রে সম্পদের মালিকানা করে দেওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। বিবাহের ক্ষেত্রে নারীকে দেওয়া হয়েছে প্রথমে সম্মতি দেওয়ার সুযোগ। নারীকে পর্দা রক্ষা করে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে। নারীর অর্থনৈতিক সম্পদে স্বামীসহ অন্য কেউ হস্তক্ষেপ করতে পারবে না এমনটাও কোরআনে বর্ণনা করা হয়েছে। আল কোরআনে বর্ণনা আছে, ‘যা কিছু পুরুষরা অর্জন করবে তা তাদেরই অংশ হবে, আবার নারীরা যা কিছু উপার্জন করবে, তা তাদের অংশ থাকবে।’ (সুরা নিসা-৩২)

ইসলামপূর্ব যুগে নারীরা ছিল অন্ধকারে আচ্ছন্ন, ইসলাম তাদের দিয়েছে জীবনে চলার সকলক্ষেত্রে সর্বোচ্চ মর্যাদা। জ্ঞান অর্জন সম্পর্কে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বর্ণনা করেন, ‘প্রত্যেক মুসলমানের জন্য জ্ঞান অর্জন করা ফরজ।’ (ইবনে মাজাহ) শিক্ষা ক্ষেত্রে ইসলাম পুরুষের সাথে নারীকে সমান ধর্মীয় জ্ঞানের পাশাপাশি জাগতিক বৈষয়িক জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চা করার নির্দেশ প্রদান করেছেন। উম্মুল মুমিনিনদের মধ্যে সর্বাধিক হাদিস বর্ণনা করেছেন আয়েশা (রা.)। ধর্মীয় বিষয়ে আয়েশার পাশাপাশি উম্মুল মুমিনিন হাফসাও অনুসন্ধিৎসু ছিলেন। জ্ঞানার্জনে তাঁর এমন আগ্রহ দেখে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর জন্য শিক্ষার ব্যবস্থা করেন। শাফা বিনতে আবদুল্লাহ আদাওয়্যা নামে এক শিক্ষিত নারীকে তাঁর শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ করেন। এ নারী তত্ত্বাবধানে থেকে তিনি লিখতে পড়তে এবং চিকিৎসাবিদ্যায় পারদর্শিতা অর্জন করেন। অন্যদিকে আয়েশা (রা.) হাদিস বর্ণনার পাশাপাশি ইসলামী আইন, ফিকহ, ইতিহাস, বংশলতিকা, কবিতা ও চিকিৎসাবিজ্ঞানে পারদর্শী ছিলেন। ফাতেমা বিনতে আব্বাস ছিলেন একজন ইসলামী আইনবিদ। তিনি মিসর ও দামেস্কের প্রভাবশালী নেত্রী ছিলেন।

ইসলামে এতসব বিধিবিধানে নারীর মর্যাদা রক্ষার কথা থাকলেও ইসলামী দেশ হিসেবে বাংলাদেশের সর্বত্র এই নিয়ম পরিপূর্ণভাবে পালিত হচ্ছে না। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নারীরা প্রতিনিয়তই ধর্ষণ, অত্যাচার, অবহেলা কিংবা নায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সংসার জীবনে নারীরা পাচ্ছে না প্রাপ্য মর্যাদা। একক পরিবারের দোহাইয়ে বৃদ্ধাশ্রমই হচ্ছে কারো কারো বেঁচে থাকার সর্বশেষ ঠিকানা। তাই বর্তমান সময়ে অসহায়, বিপথগামী নারীদের পথে ফেরাতে, নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় সকলে মিলে কাজ করতে হবে। অবহেলার বিপরীতে নারীদের দেওয়া প্রাপ্য সম্মান আগামী দিনে অনেকাংশেই কমিয়ে আনবে নারী-পুরুষ বৈষম্য। এই নারীরাই কারো মেয়ে কারো স্ত্রী আবার কারো মমতাময়ী মা। নারী-পুরুষ বৈষম্য দূরীকরণে, একটি সুস্থ, সুন্দর ইসলামিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায়, ইসলামের দেওয়া নির্দেশ সম্পূর্ণরূপে পালন করা ছাড়া আমাদের কোনো বিকল্প নেই।

লেখক :নাইমা সুলতানা

শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads