• সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪২৯

ধর্ম

রমজান ইবাদতের বসন্তকাল

  • প্রকাশিত ১৭ এপ্রিল ২০২১

এহসান বিন মুজাহির

 

মহান আল্লাহতায়ালা নিয়ম অনুযায়ী কোনো মাসকে অন্য মাসের ওপর, কোনো দিবসকে অন্য দিবসের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন। তেমনি পবিত্র রমজানুল মোবারক হলো উৎকৃষ্ট মাসের অন্যতম একটি মাস। এ মাসে রাত-দিন সর্বদা মুমিনদের ওপর রহমত বর্ষিত হয়। আমলের সওয়াব বহুগুণে বর্ধিত হয়। জান্নাতের দুয়ার খুলে দেওয়া হয়। জাহান্নামের দুয়ার বন্ধ করে দেওয়া হয়। পাপিষ্ঠ শয়তানকে শৃঙ্খলিত করা হয়। রহমত, মাগফিরাত ও মহামুক্তি দেওয়া হয় বান্দাদের। রমজানে রয়েছে শবে কদরের রাত, যা সহস্র মাসের  চেয়েও শ্রেষ্ঠ। এসব বৈশিষ্ট্যের অপূর্ব সমাহার মাহে রমজান। রমজান মাসকে ইবাদতের বসন্তকাল বলা যায়। এ মাসের কল্যাণ মুক্তিপাগল বিশ্বাসী মানুষদের শুদ্ধতার নির্ঝরনী ফোয়ারায় স্নিগ্ধ করে তাদের হূদয়কে। প্রতিটি মুমিন হূদয়ে এ মাসটি বয়ে আনে জান্নাতি সমীরণ। আল্লাহপাক এ মাসে দিনে-রাতে মুমিনদের ওপর অবারিত রহমতের বারিধারা বর্ষণ করেন। ইবাদতপাগল মুমিনদের জন্য মাগফিরাতের সব আয়োজন প্রস্তুত করে রাখেন। এককথায় এ মাসটি ইবাদতের উর্বর মৌসুম। ইবাদতের এ উর্বর সময়কে বান্দা যথাযথ ঐকান্তিকতার সাথে কাজে লাগাতে পারলে সামান্য সাধনা, ক্ষুদ্র পরিশীলনী ও অনুশীলনী দ্বারা প্রশান্তির বারিধারায় স্নাত হয়ে হাসিল করতে পারবে মহান আল্লাহর মহাসন্তুষ্টি।

রমজান শব্দটি আরবি। ‘রমজুন’ শব্দ থেকে উৎগত হয়েছে। শাব্দিক অর্থ হচ্ছে, জ্বালিয়ে দেওয়া, ভষ্মীভূত হওয়া। যেহেতু রোজা পালনের মাধ্যমে মানুষের মনের ক্রোধ, কু-প্রবৃত্তি, হিংসা-বিদ্বেষ সব কিছু ভষ্মীভূত হয়ে যায়, তাই রোজার এ মাসকে রমজান মাস বলা হয়। হিজরতের দ্বিতীয় বর্ষে রমজান মাসব্যাপী রোজা রাখার নির্দেশ প্রদান করা হয়। সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত খানাপিনা ও বৈধ  জৈবিক চাহিদা পূরণ থেকে বিরত থাকার নামই সিয়াম সাধনা বা রোজা। ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে অন্যতম একটি স্তম্ভ রোজা। রোজার ফজিলত সম্পর্কে মহান আল্লাহতায়ালা কোরআন কারীমে এরশাদ করেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর রমজানের রোজা ফরজ করা হয়েছে যেভাবে তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর ফরজ করা হয়েছিল, যাতে করে তোমরা মুত্তাকি হতে পার।’ (সুরা বাকারা, আয়াত-১৮৩) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, রমজান মাস শুরু হলেই রহমতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া, জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া এবং শয়তানদেরকে শিকলে আবদ্ধ করা হয়’ (বুখারি, হাদিস নং-১৮৯৮)

হজরত কাব ইবনে উজরা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে বললেন, তোমরা মিম্বরের নিকট সমবেত হও। আমরা সবাই তথায় উপস্থিত হলাম। যখন তিনি মিম্বরের প্রথম সিড়িঁতে পা রাখলেন, তখন বললেন, আমীন, যখন দ্বিতীয় সিঁড়িতে পা রাখলেন বললেন, আমীন, যখন তিনি তৃতীয় সিঁড়িতে পা রাখলেন বললেন, আমীন। হযরত কা’ব ইবনে উজরা (রা.) বলেন, যখন তিনি (মিম্বর থেকে) অবতরণ করলেন, আমরা জিজ্ঞেস করলাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আজ (মিম্বরে উঠার সময়) আমরা আপনাকে এমন কিছু কথা বলতে শুনেছি, যা পূর্বে কখনো  শুনিনি। উত্তরে তিনি বললেন, জিবরাইল (আ.) আমার নিকট আগমন করেছিলেন, যখন আমি প্রথম সিঁড়িতে পা রাখলাম, তখন তিনি বললেন, ধ্বংস হোক ওই ব্যক্তি যে রমজান মাস পেল, তবুও তার গুনাহ মাফ হলো না। আমি বললাম, আমীন। যখন দ্বিতীয় সিড়িঁতে পা রাখলাম তখন বললেন, ধ্বংস হোক ওই ব্যক্তি যার নিকট আপনার নাম উচ্চারিত হলো অথচ সে আপনার প্রতি দরূদ পাঠ করলো না। আমি বললাম আমীন। যখন তৃতীয় সিঁড়িতে পা রাখলাম, তখন বললেন, ধ্বংস হোক ওই ব্যক্তি যে বৃদ্ধ পিতা-মাতা উভয়কে অথবা একজনকে পেলো অথচ তারা উভয় তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাতে পারল না। অর্থাৎ তাদের খেদমতের মাধ্যমে নিজেকে জান্নাতবাসী করতে পারলো না। আমি বললাম, আমীন। (মুসলিম হাদিস নং-২৫৫১) হজরত আবু হুরয়রা (রা.) বলেন, রমজান মাস লাভকারী ব্যক্তি যে উত্তমরূপে সিয়াম ও কিয়াম (রোজা, তারাবী ও অন্যান্য আমল) পালন করে, তার প্রথম পুরস্কার এই যে, সে রমজান শেষে গুনাহ থেকে ওই দিনের মতো পবিত্র হয় যেদিন মায়ের গর্ভ থেকে ভূমিষ্ঠ হয়েছিল। (মুসলিম, হাদিস : ৮৯৬৬)

হজরত সালমান ফারসি (রা.) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শাবান মাসের শেষ দিন আমাদেরকে সম্বোধন করে এরশাদ করেন, ‘হে লোক সকল! তোমরা মনোযোগ দিয়ে শুনে রাখ, তোমাদের সামনে এমন একটি মাস সমাগত। যে মাস মহাপবিত্র, রহমত-বরকত ও নাজাতে ভরপুর। এই মাসের রোজাকে আল্লাহ তায়ালা তোমাদের উপর ফরজ করেছেন। যে লোক এই মাসে আল্লাহর সন্তুষ ও তার নৈকট্যলাভের উদ্দেশ্যে রোজা রাখবে আল্লাহ তার পূর্ববর্তী সমস্ত গোনাহ মাফ করে দিবেন। (বুখারি : ২৪১৮) হজরত আবু সাঈদ খুদরী (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, আল্লাহতায়ালা রমজান মাসের প্রত্যেক দিবস ও রাত্রিতে অসংখ্য ব্যক্তিকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করেন। প্রত্যেক মুমিন বান্দার একটি করে দুআ কবুল করেন। (মুসনাদে আহমদ: ৭৪৫০)। মহান আল্লাহতায়ালা আমাদেরকে পবিত্র এই মাসের যথাযথ হক আদায় করে রোজা, তারাবিহসহ অন্যান্য নফল ইবাদতে আত্মনিয়োগ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

 

লেখক : সাংবাদিক, কলামিস্ট ও প্রিন্সিপাল, শ্রীমঙ্গল আইডিয়াল স্কুল, মৌলভীবাজার

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads