• সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪২৯

ধর্ম

সামর্থ্যবানদের প্রতি রমজানের বার্তা

  • প্রকাশিত ১৭ এপ্রিল ২০২১

মেহেদী হাসান সাকিফ

 

 

বছরের ঋতুচক্রে প্রতি মাসের ন্যায় মহান প্রভুর স্বীয়  বান্দাদেরকে রহমত, মাগফেরাত, নাজাতের সাগরে অবগাহন করাতে হাজির হয়েছে মাহে রমজান। আল্লাহতায়ালার অন্যতম এক গুণবাচক নাম হচ্ছে আল-হাকিম। আল-হাকিম অর্থ প্রজ্ঞাময়। আল্লাহর এ নামের দাবিই হচ্ছে- তিনি যা কিছু সৃষ্টি করেছেন অথবা যা কিছু বিধিবদ্ধ করেছেন তার প্রত্যেকটার পশ্চাতেই রয়েছে পরিপূর্ণ যুক্তি ও হিকমত। আমরা কখনো এই হিকমত বুঝতে সক্ষম হই। আবার কখনো বুঝতে সক্ষম হই না। আল্লাহ সব মানবজাতিককে ধনী-দরিদ্র দুই শ্রেণিতে বিভক্ত করে সৃষ্টি করেছেন। তিনিই ভালো জানেন কাকে ধনী আর কাকে দরিদ্র হিসেবে সৃষ্টির মধ্যেই তার সীমাহীন কল্যাণ আছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘যিনি সৃষ্টি করেছেন মৃত্যু ও জীবন, তোমাদেরকে পরীক্ষা করার জন্য; কে তোমাদের মধ্যে আমলের দিক থেকে উত্তম? তিনি পরাক্রমশালী, ক্ষমাশীল।’ (সুরা মুলুক আয়াত-২) জীবনের পর রয়েছে মৃত্যু। আল্লাহতায়ালা ক্ষণস্থায়ী এই জীবনের ব্যবস্থা এই জন্য করেছেন, যাতে তিনি পরীক্ষা করতে পারেন যে, এই জীবনের সদ্ব্যবহার কে করে? যে এ জীবনকে ঈমান ও আনুগত্যের কাজে ব্যবহার করবে, তার জন্য রয়েছে উত্তম প্রতিদান এবং যে এর অন্যথা করবে, তার জন্য রয়েছে মর্মন্তুদ শাস্তি। (তাফসির এ আহসানুল কোরআন)

আল্লাহ বলেন, ‘হে বিশ্বাসিগণ! তোমাদের জন্য সিয়ামের (রোজার) বিধান দেওয়া হলো, যেমন বিধান তোমাদের পূর্ববর্তীগণকে দেওয়া হয়েছিল, যাতে তোমরা সংযমশীল হতে পার। (সুরা বাকারা, আয়াত-১৮৩) আমাদের জীবনে তাকওয়া অর্জনের মিশন নিয়ে হাজির হয়েছে মাহে রমজান। এই মিশন বাস্তবায়নের জন্য ধনী-গরিব সবশ্রেণির মানুষকে বেশকিছু দায়িত্ব পালন করতে হয়। আর পাশাপাশি সমাজের সার্মথ্যবান বেশি দায়িত্ব বর্তায়। পবিত্র  কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘এবং তাদের ধন-সম্পদে রয়েছে ভিক্ষুক ও বঞ্চিতের হক। (সুরা যারিয়াত, আয়াত-১৯) এমন দরিদ্র অভাবগ্রস্তকে বোঝানো হয়েছে, যে নিঃস্ব ও অভাবগ্রস্ত হওয়া সত্ত্বেও ব্যক্তিগত সম্মান রক্ষার্থে নিজের অভাব কারো কাছে প্রকাশ করে না। ফলে মানুষের সাহায্য থেকে বঞ্চিত থাকে। (ফাতহুল কাদীর)

রমজান মাস সংযমের মাস। ত্যাগের মাস। আমরা আমাদের  একশ্রেণির  ধনীদের দেখি সারা বছর তো বটেও রমজানের অধিক হতে অধিকতর ভোগবিলাসে মত্ত হতে। রংবেরঙ এর বাহারি ইফতার, সাহরিতে সজ্জিত থাকে তাদের খাবার টেবিল। ইদ শপিং এ তারা ব্যয় করে হাজার হাজার টাকা। রোজা শেষে ইদের ছুটিতেও দেশবিদেশে বেড়াতে যেয়ে ব্যয় করে লক্ষাধিক টাকা। অন্যদিক অসহায় হতদরিদ্র মানুষগণ দুইবেলা পরিতৃপ্তি সহকারে সাহরি ও ইফতারের খাবারেরও ব্যবস্থা করতে পারে না। এই মানুষদের দিকে একবার ফিরে তাকানোরও সময় নেই তাদের। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বারবার দরিদ্র অসহায় মানুষের জন্য কাজ করার তাগিদ দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা আল্লাহর পথে তাদের সম্পদ ব্যয় করে, তাদের উপমা একটি বীজের মতো, যা উৎপন্ন করল সাতটি শীষ, প্রতিটি শীষে রয়েছে একশ দানা। আর আল্লাহ যাকে চান তার জন্য বাড়িয়ে দেন। আর আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ।’ (সুরা বাকারা, আয়াত-২৬১) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, সব সৃষ্টি আল্লাহতায়ালার পরিবারের সদস্যবিশেষ। সৃষ্টজীবের মধ্যে আল্লাহতায়ালার কাছে সবচেয়ে প্রিয় সেই, যে তার পরিবার-পরিজনের প্রতি অনুগ্রহ করে। (বায়হাকী, হাদিস নং-৭৪৪৬)

আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ, রবী, কাতাদাহ ও হাসান রাহিমাহুমুল্লাহ বলেন, তাকওয়ার হক হল, প্রত্যেক কাজে আল্লাহ্‌র আনুগত্য করা, আনুগত্যের বিপরীতে কোনো কাজ না করা, আল্লাহকে সর্বদা স্মরণে রাখা-কখনো বিস্মৃত না হওয়া এবং সর্বদা তাঁর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা-অকৃতজ্ঞ না হওয়া। (ইবন কাসীর) তাকওয়াবিহীন রমজান নিষ্ফল বৃথা। যেহেতু পবিত্র কোরআন ও হাদিসে অসহায় মানুষদের সাহায্যের আদেশ উপেক্ষা করা দুঃখী  মানুষদের দিকে না তাকানো অধিকতর ভোগ নিজেকে নিমজ্জিত রাখা নিঃসন্দেহে তাকওয়াপরিপন্থি কাজ। তাদের রোজা নিষ্ফল উপবাস বৈ অন্যকিছু নয়। আর পরকালে তাদের জন্য পবিত্র কোরআনে কঠোর শাস্তির হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। আল্লাহ বলেন, তোমাদেরকে কিসে ‘সাকার’- এ নিক্ষেপ করেছে?’ তারা বলবে ‘আমরা সালাত আদায়কারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম না। আর আমরা অভাবগ্রস্তকে খাদ্য দান করতাম না। (সুরা মুদ্দাচ্ছির, আয়াত : ৪২-৪৪) তাই সমাজের সার্মথ্যবান মানুষদের উচিত সাধ্যানুযায়ী অসহায় দরিদ্র মানুষের কল্যাণে কাজ করা। অন্যথায় শত নামাজ, হজ্জ ইবাদত বন্দেগি নিয়েও আল্লাহর কাঠগড়ায় আসামি হয়ে দাঁড়াতে হবে।

 

লেখক: প্রাবন্ধিক

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads