• বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ২ জৈষ্ঠ ১৪২৯
রমজানে তাকওয়া অর্জন হোক সবার প্রাণে

প্রতীকী ছবি

ধর্ম

রমজানে তাকওয়া অর্জন হোক সবার প্রাণে

  • প্রকাশিত ২৪ এপ্রিল ২০২১

ইসলামে পাঁচটি স্তম্ভ। তম্মধ্যে অন্যতম স্তম্ভ হলো সাওম তথা রোজা। আরবি বারো মাসের মধ্যে নবম মাস হচ্ছে পবিত্র মাহে রমজান। সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত নিয়তের সঙ্গে পানাহার, স্ত্রী সহবাস ও সব প্রকার খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকাকে সাওম বলা হয়। এই পবিত্র রমজান ফরজ হয় দ্বিতীয় হিজরির শাবান মাসে। এ সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের জন্যে রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর। আশা করা যায় তোমাদের মধ্যে তাকওয়ার গুণ ও বৈশিষ্ট জাগ্রত হবে।’ (সুরা বাকারা, আয়াত-১৮৩) এ আয়াত থেকে আমরা বুঝতে পারি যে, রোজার বিধান দেওয়া হয়েছে তাকওয়া অর্জনের জন্য। আত্মসংযম এর জন্য। গুনাহ বর্জন করে আল্লাহর প্রতি ভয়ভীতি প্রদর্শন করার মধ্যদিয়ে সন্তুষ্টি অর্জন করার জন্য।

রমজান মাসের ফজিলত অতুলনীয়। যা আমরা কখনো কল্পনা করতে পারবো না। হাদিস শরিফে এরশাদ হয়েছে, হজরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘোষণা করেছেন, যে ব্যক্তি রমজান মাসে রোজা রাখবে ঈমান ও চেতনাসহকারে (সওয়াবের আশায়), তার পূর্ববর্তী গুনাহ মাফ হয়ে যায়।’ (বুখারি ৩য় খণ্ড-সিয়াম পৃ-২৪২) এই রমজান মাসে রোজাদারের জন্য রয়েছে পরকালে প্রশান্তি। বিশেষ করে রোজাদারের জন্য রয়েছে দুটি খুশি বা পুরস্কার। একটি হচ্ছে ইফতারের সময়। আর অন্যটি হচ্ছে আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ লাভের সময়। এই দুটি সময় হচ্ছে একজন রোজাদারের জন্য সবচেয়ে বেশি খুশির। হাদিস শরিফে এরশাদ হয়েছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত; রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আদম সন্তানের প্রতিটি নেক আমলের সওয়াব দশগুণ হতে সাতশ গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়। কিন্তু আল্লাহতায়ালা বলেছেন, রোজা এই সাধারণ নিয়মের ব্যতিক্রম। কেননা তা একান্তভাবেই আমারই জন্যে। অতএব আমিই এর প্রতিফল দেব। রোজা পালনে আমার বান্দা আমারই সন্তোষ বিধানের জন্য স্বীয় ইচ্ছা বাসনা ও নিজের পানাহার পরিত্যাগ করে থাকে। রোজাদারের জন্য দুটি আনন্দ। একটি ইফতারের সময় এবং অন্যটি তার মালিক-মনিব আল্লাহর সাথে সাক্ষাতলাভের সময়। নিশ্চয়ই জেনে রেখো রোজাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহর নিকট সুগন্ধি হতেও অনেক উত্তম।’ (বুখারি ৩য় খণ্ড-সিয়াম পৃ-২৩৮)

এই পুণ্যময় মাসে যারা রোজা পালন করবে না তাদের জন্যে রয়েছে কঠোর শাস্তি। তাদের জন্য রয়েছে দুঃখ বেদনা। হজরত আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘একদিন আমি স্বপ্নে দেখলাম যে, একটি সমপ্রদায় উল্টোভাবে ঝুলছে। তাদের গলাটি ফাড়া এবং তা থেকে রক্ত ঝরছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম এরা কারা? বলা হলো, এরা ওইসব ব্যক্তি যারা বিনা উজরে রমজান মাসের সিয়াম ভঙ্গ করেছিল।’ (সহিহ ইবনে খুযাইমাহ) উক্ত হাদিস দ্বারা বুঝা যায় ইচ্ছাকৃতভাবে রোজা ভঙ্গ করলে কঠোর শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে। তবে ইসলামে বিশেষ কারণবশত রোজা না রাখার অনুমতি প্রদান করেছে। এছাড়া ইচ্ছাকৃতভাবে রোজা ভঙ্গ করা যাবে না। আম্মাজান হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হামজা ইবনে আমর আসলামী (রা.) বেশি বেশি রোজা রাখত। একদা সে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করল, রাসুল আমি কি সফর অবস্থায় রোজা রাখতে পারি? মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, যদি চাও রাখতে পারো, আর যদি না চাও ভাঙতে পারো।’ (বুখারি ও মুসলিম)

রমজান মাসে পরকালের সম্বল গড়ে তুলতে হবে আমাদের। কেননা, এই পুণ্যময় মাসে আমাদের আমলে পরিপূর্ণতা আনতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। কারণ এই মাস হচ্ছে রহমত, বরকত ও নাজাতের মাস। কাজেই আমাদের বেশি বেশি দুরুদ শরিফ পাঠ করতে হবে। সহিহভাবে কোরআন তেলাওয়াত করতে হবে এবং অন্যকে শিক্ষা দিতে হবে। দান-সদকা করতে হবে। জাকাত আদায় করতে হবে ইতেকাফ পালন করতে হবে। অন্যায় বা খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে। তাই আসুন এই পুণ্যময় মাসে আমাদের আমলে জিন্দেগি গড়ে তুলি, পরকালের সম্বল গড়ে তুলি।

মু. সায়েম আহমাদ

লেখক : সভাপতি, বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরাম, ঢাকা কলেজ শাখা

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads