• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯

ধর্ম

ইতেকাফের গুরুত্বপূর্ণ ১১ আমল

  • প্রকাশিত ০৬ মে ২০২১

তানভীর সিরাজ

ইতেকাফ মাদানি জীবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদত। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদিনায় হিজরত করে প্রতিবছরই ইতেকাফ করতেন। ইমাম যুহরি বলেন, ‘ইতেকাফের মতন গুরুত্বপূর্ণ আমলকে লোকদের ছেড়ে দেওয়া দেখলে আমি অবাক হই। অথচ আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাঝেমধ্যে অন্যান্য আমল বাদ দিলেও, মদিনা শরিফ হিজরতের পর আজীবন মসজিদে নববিতে ইতেকাফ করেন।’ (শামেলা) আর যেই বছর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুনিয়া থেকে বিদায় নেবেন সেই বছর ২০দিন ইতেকাফ করেন। হজরত আবু হুরাইরা (রা.) বলেন, ‘আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রত্যেক রমজানে দশদিন এতেকাফ করতেন। আর যে বছর তাঁর ওয়াফাত সে বছর তিনি ২০দিন ইতেকাফ করেন।’ (বুখারি শরিফ, হাদিস নং-২০৪৪)

ইতেকাফে কিছু গুরুত্বপূর্ণ আমল

১. নফল নামাজ : যত পারা যায় নফল নামাজ পড়া। যেমন ইশরাক, চাশত, আওয়াবীন, তালাতুত তাওবা ইত্যাদি। কারণ রমজানে এক একটি নফলের জন্যে তো এক একটি ফরজের সাওয়াব দেওয়া হয়। তাই তার প্রতি গুরুত্ব দেওয়া দরকার। এখনই তার সময়। সামনে কোথায় থাকি তার ঠিকঠিকানা নেই। মাটির ওপরে, নাকি তার নিচে।

২. ওমরি কাজা : ফরজ ও ওয়াজিব নামাজ যাদের অনেক কাজা রয়েছে তারা সেইসব নামাজের কাজা আদায় করতে পারেন এই ইতেকাফে। এটি তাদের জন্য সুবর্ণ সুযোগ।

৩. কোরআন তেলাওয়াত : রমজান  কোরআনের মাস। কোরআন তেলাওয়াত এই মাসের দাবি। প্রতিদিন ১ পারা, ১০ পৃষ্ঠা। যারা হাফিজ তারা ১ খতম বা ১৫ পারা এভাবে আমল করতে পারেন। তবে যারা তেলাওয়াত করতে পারেন না, তারা অন্তত বিজ্ঞ কারো কাছে বসে পূর্ণ মনোযোগিতার সাথে কোরআন শ্রবণ করতে পারেন। প্রতি অক্ষরে ১০ নেকি। আর রমজানে ৭ গুণ ১০ সমান ৭০ গুণ নেকি! তাহলে অগণিত নেকির ভাগী হচ্ছেন ইতেকাফরত ব্যক্তি। আলা হজরত শাহ আবদুর রহীম সাহেব রায়পুরী (রহ.) প্রায় পুরোরাত তিলাওয়াতে অতিবাহিত করতেন। এমনকি তিনি রমজানে ২৪ ঘণ্টায় ১ ঘণ্টার বেশি ঘুমাতেন না। (আকাবির কা রমজান, পৃ.২৯)

৪. জিকির : যারা তেলাওয়াত পারেন না, শ্রবণের মতো তেমন কোনো ব্যক্তিও যদি পাওয়া না যায়, তা হলে শুধ কোরআন শরিফের প্রতি লাইনে লাইনে হাত বুলিয়ে যাবেন তিনি, আর পরিতাপের সাথে মনে মনে বলবেন ‘আমি কতইনা হতভাগা, আল্লাহ্, আমাকে মাফ করেন!’ আল্লাহ তাকে নেকি থেকে বঞ্চিত করবেন না বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞ আলিম সমাজ, ইনশাআল্লাহ।

৫. দরূদ পাঠ : শুয়ে, হাঁটতে আর বসতে দরূদ পাঠ করতে পারি। প্রতিবার দরূদে পাঠকারীর নাম নবীর রাওয়াতে পেশ করা হয়। আল্লাহর রহমত ১০গুণ করে তার জন্য হয় আর ফেরেশতারাও তার জন্য দোয়া করেন। যে ব্যক্তি যতবেশি দরূদ পড়বে, সে ব্যক্তি ততবেশি হাশরের মাঠে (নবীর) কাছে থাকবে। অন্য হাদিসে আছে-যে ব্যক্তি ১০০বার দরূদ পড়বে, তার দু’চোখের মাঝে  লেখে দেওয়া হবে, সে জাহান্নাম ও মুনাফেকি থেকে মুক্ত! আপনি যে কোনো দরূদ পড়তে পারেন। ছোট আঁকারে ৩টি দরূদ বলছি। ক) ‘সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।’ খ) ‘আল্লাহুম্ম ছল্লি আ’লা মুহাম্মদিন’। গ) ‘জাযাকাল্লাহু আন্না মুহাম্মাদিন’।

৬. লাইলাতুল কদর : শবে কদরকে বেজোড় (২১, ২৩, ২৫, ২৭, ২৯ তারিখ) রাতে তালাশ করা। পারলে এই রাতসমূহে জেগে ইবাদত করা। সহিহ হাদিসে এই রাতগুলোতে শবেকদরকে তালাশ করতে বলা হয়েছে। সহজে শবেকদর, শবেবরাত ইত্যাদি বড় বড় রাতের ফযিলত যদি কেউ লাভ করতে চায় তাহলে অবশ্যই সেদিনের মাগরিব, এশা আর ফজরের নামায জামাতের সাথে আদায় করা। অসুস্থ হলে ঘরে বা যেখানে থাকেন, এসব নামাজের প্রতি যত্নবান হওয়া সেখানে।

৭. তালিম : ইতিকাফে ব্যক্তিদের মধ্যে ভালো আলিম থাকলে হাদিসের তালিম করা যায়। যার সহজ মাধ্যম হলো শায়খুল হাদিস আল্লামা (জাকারিয়া (র.)-এর ‘ফাযায়েলে আমাল’ পাঠ। মুফতি আজম আল্লামা মুফতি ফয়জুল্লাহর.-এর ‘ফয়জুল কালাম’ও তালিমের তালিকায় রাখা যায়। তার সূচিপত্রটি বেশ উপকারী।

৮. জীবন্তিকা জীবনী পাঠ  : ওলি আল্লাহদের জীবনী পাঠ করা। তাঁরা কীভাবে ইতেকাফে আল্লাহতায়ালার ইবাদত করেছেন, কীভাবে দোয়া আর মুনাজাত করেছেন আর কীভাবে লাইলাতুল কদর অনুসন্ধান করেছেন এবং রাত জেগেছেন, তা ভালোভাবে শ্রবণ করে করে নিজের জীবনকে তাঁদের সাথে মিলানো।

৯. নামাজের প্রস্তুতি : আযানের অন্তত দশ মিনিট আগে পাকপবিত্র হয়ে মসজিদে অবস্থান করা, নবাগত মুছল্লিদের যেন কোনো সমস্যা না হয়। যাতে ইতিকাফকারীর দিলও প্রশান্তি পায়। নামাজের অপেক্ষমাণ মুছল্লিদের জন্য ফিরিশতাগণ রহমতের ও মাগফিরাতের দোয়া করেন এবং যদি নামাজের পর আরো বেশিক্ষণ থেকে আমলে মশগুল থাকেন নামাজি ব্যক্তি তাহলে ‘তার তাওবা যেন আল্লাহপাক কবুল করেন’ সেই দোয়াও করেন ফিরিশতাগণ। ফিরিশতাদের দোয়া আল্লাহ কবুল করেন।

১০. তাহাজ্জুদ ও তাসবিহ : রহমতের আশা আর আযাবের ভয় দিলে রেখে তাহাজ্জুদ ও সালাতুত তাসবিহ যতো পারা যায় আদায় করা। কারণ এসব নামাজ সবসময় পড়া হয় না ইতিকাফে এর প্রতি গুরুত্ব দেওয়া খুব দরকার। উক্ত দুই নামাজ আদায় করে বান্দা যা-ই চান, আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত তাই দান করেন।

১১। ঈদের রাত : ঈদের রাতে ইবাদত বন্দেগীর অনেক বেশি ফজিলত। তিরমিযি ও সুনানে ইবনে মাজাহসহ অসংখ্য হাদিসের কিতাবে উল্লেখ আছে, যে ব্যক্তি দুই ঈদের রাত্রে আল্লাহর সন্তুষ্টিলাভের উদ্দেশ্যে ইবাদত করবে কিয়ামতের দিন ঐ ব্যক্তির অন্তরকে আল্লাহ জীবিত রাখবেন (প্রশান্তি দান করবেন), যেদিন সমস্ত অন্তর মৃত্যুবরণ করবে। তাই ইতেকাফকারীদের কাছে অনুরোধ তারা যেন চাঁদ দেখার সাথে সাথে মসজিদ থেকে বের না হয়ে ঈদের দিন সকালে মসজিদ থেকে বের হন। যাতে করে ঈদের রাতের ফজিলত অর্জন করতে পারেন। আল্লাহপাক সবাইকে আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

লেখক : শিক্ষাসচিব, আশরাফুল উলুম মাদরাসা,

মাতুয়াইল, যাত্রাবাড়ী, ঢাকা

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads