• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯
সাদকায়ে ফিতর কী ও কেন

প্রতীকী ছবি

ধর্ম

সাদকায়ে ফিতর কী ও কেন

  • প্রকাশিত ১০ মে ২০২১

সাদকাতুল ফিতর হলো ওই আর্থিক ইবাদত, যা রমজানুল মুবারকের শেষে ঈদুল ফিতরের দিন ঈদগাহে যাওয়ার পূর্বে আদায় করতে হয়। শরীয়তের পরিভাষায় সাদকাতুল ফিতর এমন সাদকাকে বলা হয় যা ইবাদত হিসাবে এবং দয়ার বন্ধন হিসাবে দেওয়া হয়।

ফিতরা কেন দিতে হয়? সাদকাতুল ফিতর দ্বারা আসলে রোজার জাকাতকে বোঝানো হয়েছে। কেননা, জাকাত যেমন মালকে পবিত্র করে ফিতরাও তেমনি রোজাকে পবিত্র করে। অর্থাৎ রোজায় যেসব ত্রুটি-বিচ্যুতি হয় ফিতরা সেসব ত্রুটিকে পূরণ করে, বা মুছে দিয়ে রোজাকে পরিপূর্ণ নেকির উপযুক্ত করে তুলে। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত অর্থাৎ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাদকাতুল ফিতরকে অপরিহার্য করেছেন। অর্থহীন, অশালীন কথা ও কাজে রোজার যে ক্ষতি তা পূরণের জন্য এবং নিঃস্ব লোকের আহার যোগানোর জন্য। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং- ১/২২৭)

সাদকায়ে ফিতর যাদের পক্ষ থেকে দিতে হয় : এই সদকা ছোট-বড় প্রত্যেকের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়। এমনকি ঈদের চাঁদ উদিত হওয়ার পর সুবহে সাদেকের পূর্বে যে সন্তান জন্ম গ্রহণ করে তার পক্ষ থেকেও এই সাদকা ফিতর দিতে হয়।

ঈদের দিন সকালবেলা প্রয়োজনের অতিরিক্ত যিনি নিসাব পরিমাণ সম্পদের (সাড়ে সাত ভরি সোনা বা সাড়ে বায়ান্ন ভরি রুপা বা সমমূল্যের নগদ অর্থ ও ব্যবসাপণ্য) মালিক থাকবেন, তাঁর নিজের ও পরিবারের সবার পক্ষ থেকে ফিতরা আদায় করা তাঁর প্রতি ওয়াজিব। আবার যেহেতু ফিতরা একটি ইবাদত, তাই যাঁরা নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক নন, তাঁদেরও ফিতরা আদায় করা সুন্নত ও নফল। তবে ওয়াজিব নয়। আবু সাঈদ খুদরি (রা.) বর্ণনা করেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন আমাদের মাঝে ছিলেন, তখন আমরা ছোট, বড়, স্বাধীন ব্যক্তি, ক্রীতদাস সবার পক্ষ থেকে সাদকাতুল ফিতর আদায় করতাম এক সা খাদ্য অর্থাৎ এক সা পনির বা এক সা যব বা এক সা খেজুর অথবা এক সা কিশমিশ দিয়ে।’ সাদকা ফিতর আর জাকাতের মাঝে পার্থক্য হলো নিসাবের মালিক হয়ে বছর পূর্ণ হওয়া, না হওয়া। ছদকা ফিতরে বছর পূর্ণ হওয়া শর্ত নয় আর জাকাতে শর্ত।

হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) বর্ণনা করেন, ‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জামানায় আমরা সাদকাতুল ফিতর প্রদান করতাম ‘এক সা’ (তিনকেজি তিন শ গ্রাম প্রায়) খাদ্যবস্তু। তিনি বলেন, ‘তখন আমাদের খাদ্য ছিল যব, কিশমিশ, পনির ও খেজুর।’ (বুখারি, খণ্ড. ১, পৃষ্ঠা-২০৪) তিনি আরো বলেন, ‘আমরা সাদকাতুল ফিতর আদায় করতাম এক সা খাদ্যবস্তু। যেমন : এক সা যব, এক সা খেজুর, এক সা পনির, এক সা কিশমিশ।’ (বুখারি, খণ্ড. ১, পৃষ্ঠা-২০৫)

যেসব জিনিস দিয়ে ফিতরা আদায় করা যায় : ক. আজওয়া (উন্নতমানের) খেজুরের মূল্য প্রতিকেজি ১০০০/- টাকা হলে একজনের সাদকায়ে ফিতর দাঁড়ায় ৩২৫৬/- তিন হাজার দুই শত ছাপ্পান্ন টাকা। (খ) মধ্যম ধরনের খেজুর যার মূল্য প্রতি কেজি ৩০০/- টাকা হলে একজনের সাদকায়ে ফিতর দাঁড়ায় ৯৭৭/- নয়শত সাতাত্তর টাকা।

(গ) কিসমিস প্রতিকেজি ২৩০/- টাকা করে হলে একজনের সাদকায়ে ফিতর দাঁড়ায় ৭৪৮/- (সাত শত আটচল্লিশ) টাকা। ঘ) পনির প্রতি কেজি ৫০০/- টাকা করে ধরা হলে একজনের সাদকায়ে ফিতর দাঁড়ায় ১৬২৮/- (এক হাজার ছয় শত আটাশ) টাকা।

ঙ) গম প্রতি কেজি ৩৫/- টাকা হিসাবে ধরা হলে একজনের সদকায়ে ফিতর দাঁড়ায় ৫৭ টাকা। হাদিসে এ ৫টি দ্রব্যের যে কোনোটি দ্বারা ফিতরা আদায়ের সুযোগ দেওয়া হয়েছে যেন মুসলমানগণ নিজ নিজ সামর্থ্য ও সুবিধা অনুযায়ী এর যে কোনো ১টি দ্বারা তা আদায় করতে পারে। আর যদি টাকা দিয়ে সাদকায়ে ফিতর দেওয়া হয় তাহলে মূল্য হিসাব করতে হবে বতর্মান বাজার-দাম অনুযায়ী।

প্রত্যেকে নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী আদায় করবে। যার অর্থ-সম্পদ বেশি সে সবচেয়ে দামি বস্তু দিয়ে আদায় করবে। আর যার সামর্থ্য কম সে অন্তত প্রায় দুইকেজি গম, বা তার সমপরিমাণ টাকা দিয়ে ছদকাতুল ফিতর আদায় করবে। ইসলামি স্কলারগণের অভিমত হলো, সামর্থ্য অনুযায়ী যে বস্তু দিয়ে আদায় করলে অসহায় ও গরিবের ঈদ-আনন্দে প্রকাশে সুবিধা বেশি হয় সেই জিনিস দিয়ে ফিতরা আদায় করা। যদি নগদ অর্থই তাদের বেশি উপকারে আসে তাহলে তা করাই হলো শরিয়তের চাহিদা। আর যেখানে খাবারের বেশি প্রয়োজন সেখানে খাবার দেওয়া করা। তবে দুঃখের সাথে বলতে হয়, সারা দেশে দেখা যায় প্রায় সব মানুষই আজকাল সর্বনিম্ন ফিতরা আদায় করে থাকেন। যা সাধারণত মাত্র ৬০-৭০ টাকা। বা দুইকেজি আটার দাম। যদি এমন হয় তাহলে অন্যান্য হাদিসের ওপর যেমন আমল বাদ পড়ছে তেমনি অসহায়দের খুব একটা ফায়দাও হচ্ছে না; বরং তাদের ক্ষতিই বেশি হচ্ছে।

ফিতরার সামাজিক ফায়দা : এই ফিতরা গ্রহণের মাধ্যমে অসহায়, অনাথ, নেহায়েত গরিব মানুষগুলো ধনীদের সাথে ঈদানন্দে শামিল হতে পারে খুশি মনে, যেন সামাজিকভাবে কারো মাঝে কোনো প্রকার ভেদাভেদ পরিলক্ষিত না হয়। তারাও যেনো নতুন পোশাকে ঈদানন্দে মেতে উঠতে পারে। আল্লাহপাক আমাদের সবাইকে আমল করার তাওফিক দান করুন।

লেখক : শিক্ষাসচিব, আশরাফুল উলুম মাদরাসা মাতুইয়াল,

যাত্রাবাড়ী, ঢাকা

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads