• সোমবার, ৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪২৯
পরিবার ও সন্তানদের সময় দিন

প্রতীকী ছবি

ধর্ম

পরিবার ও সন্তানদের সময় দিন

  • প্রকাশিত ১৮ মে ২০২১

আব্দুর রউফ

পৃথিবীতে মহান সৃষ্টিকর্তার এক অমূল্য উপহার সন্তান। এই উপহার আবার পৃথিবীতে সবার ভাগ্যতে জোটে না। সারা জীবন কান্নাকাটি কারো কারো একটি সন্তান জন্ম হয় না। তাই যারা পৃথিবীতে পিতা-মাতা হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করে নিশ্চয় তারা অনেক ভাগ্যবান। পৃথিবীতে এমন অনেক পরিবার পাবেন যাদের বৃদ্ধকালে একটু নিরাপদ আশ্রয় ও সম্পদের উত্তরসূরী থাকে না। আবার এমন দরিদ্র পরিবার পাবেন যারা ঠিকমত তিন বেলা  খেতে পারে না কিন্তু সৃষ্টিকর্তার অনুগ্রহে চার অথবা পাঁচজন সন্তান জন্ম দিয়েছেন। পৃথিবীতে সন্তান যেন পিতা-মাতার জন্য সর্বশেষ্ঠ উপহার। আপনি যতই ধনবান হোন না কেন  মহান সৃষ্টিকর্তা যাকে ইচ্ছা সন্তান দান করেন, আবার যাকে ইচ্ছা করেন না। পবিত্র কোরআনুল কারীমে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলের রাজত্ব আল্লাহতায়ালারই। তিনি যা ইচ্ছা, সৃষ্টি করেন। যাকে ইচ্ছা কন্যাসন্তান দান করেন এবং যাকে ইচ্ছা পুত্রসন্তান দেন। অথবা তাদেরকে দান করেন পুত্র ও কন্যা উভয়ই। কিংবা যাকে ইচ্ছ বন্ধ্যা করে দেন। নিশ্চয় তিনি সর্বজ্ঞ, ক্ষমতাশীল।’ (সুরা শুরা, আয়াত-৪৯, ৫১)

তবে একটা বিষয় মনে রাখতে হবে শুধু সন্তান জন্মদিলেই পিতা-মাতা হওয়া যায় না। পিতা-মাতা হতে হলে জন্মদানের পর থেকে অনেক দায়িত্ব নিতে হয়। সন্তানের যাবতীয় দায়-দায়িত্ব পিতা-মাতার ওপর ন্যস্ত থাকে। সন্তান যেন একজন সৎ, আদর্শ  মানুষ হিসেবে গড়ে উঠে সেই বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ খেয়াল রাখতে হয়। বর্তমান পৃথিবীতে হুু হুু করে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রতিনিয়ত কোটি কোটি সন্তান জন্ম গ্রহণ করছে কিন্তু এত মানুষ বৃদ্ধি পেলেও যেন দিন দিন ভালো সৎ আদর্শিক মানুষের সংখ্যা লোপ পাচ্ছে। সর্বত্রই আজ মুসলিম, হিন্দু, খ্রিস্টান, বৌদ্ধের বসবাস। কোথাও আমরা যেন মানুষ খুঁজে পাচ্ছিনা। বিভিন্ন কারণে আজ আমরা বিভাজন হয়ে গেছি। কেউ মানুষের মতো মানুষ হয়ে গড়ে উঠছে কি না সেদিকে বিন্দুমাত্র খেয়াল নেই। তাই এই পৃথিবীকে যদি শান্তিময় ও সুস্থ করে গড়ে তোলার দায়িত্ব পরিবারকে নিতে হবে।

সন্তানের শৈশব  থেকে যৌবনকাল পর্যন্ত পিতা-মাতাকে তাদের প্রতি অনেক খেয়াল রাখতে হয়। বয়সের দোষে যেন সন্তান যেন বিপথে না চলে যায় সেই দিকে কড়া নজর রাখতে হয়। আধুনিক যুগে এসে আমরা কি আমাদের সন্তানদের পর্যাপ্ত সময় দেই? আধুনিকতা আর অর্থের মোহে পড়ে আমাদের ভবিষৎকে নিজ হাতে নষ্ট করছি। এমন পরিবার পাবেন যাদের সন্তান বাড়ির কাজের বুয়ার  নিকটে বড় হয়। স্বামী-স্ত্রী দুজনেই চাকরি করার কারণে সন্তানদের একটু সময় দিতে পারে না। ফলে এই সন্তানের বেড়ে উঠাতে বিশাল একটা ধাক্কা লাগে। এই সন্তান বড় হয়ে নিঃসঙ্গ থাকতে ভালো বাসে। পিতা-মাতা বৃদ্ধ হলে অসহ্য লাগে। ফলে তাদের বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দেয়। এত কষ্ট করে যে অর্থ উপার্জন করলেন সেই অর্থ আপনাকে বৃদ্ধাশ্রামে ঠিকানা করে দিচ্ছে না তো?

অনেক পরিবার আছে যারা সন্তানকে বাইরের পরিবেশের সাথে মিশতে দেয় না। আবার নিজেরাও সেরকম সময় দেয় না। শুধু ইন্টারনেট, ভিডিও গেইম বা মোবাইল কম্পিউটার কিনে দিয়েই মনে করে পিতা-মাতার দায়িত্ব পালন শেষ। ইন্টারনেট জগতে সেই সন্তানটি কি করছে। কোন অপরাধ জগতের সাথে নিজেকে জড়িয়ে ফেলছে কিনা; সেই বিষয়ে কোনো খেয়াল রাখছি না। শুধু অর্থের মোহে পড়ে সারা জীবন শুধু তা অর্জনে সময় দিয়ে গেলাম। পরিবার তথা সন্তাদের শুধু জন্মদানে, আর টাকা পয়সা দিয়েই মনে করলাম দায়িত্ব শেষ। এজন্য প্রথমে বলেছিলাম শুধু সন্তান জন্মদানে সার্থকতা নেই। সেই সন্তানকে মানুষের মতো মানুষ করে গড়ে তোলাতেই সার্থকতা। সেই দায়িত্বটা আমাদের পরিবার বা পিতা-মাতা কতটুকু পালন করছে তা আলোচনা সাপেক্ষ।

তাই সন্তান জন্মদানে দায়িত্ব শেষ নয় বরং তাকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তোলাই হচ্ছে প্রধান দায়িত্ব। সেই সাথে পিতা-মাতাকে সন্তানের সাথে বন্ধুসুলভ আচরণ করতে হবে। যখন যেটুকু শাসন করা দরকার সেটুকু অব্যাহত রাখতে হবে। কখনো সন্তানকে যদি কেউ কোনো অন্যায়ের জন্য শাসন করে সেটা ভালোভাবে নিতে হবে। কখনো বলা যাবে না। আমার সন্তানকে শাসন করার দায়িত্ব কি আপনাকে দেওয়া হয়েছে। আর আপনার এমন একটি বাক্য সন্তানকে বেয়াদব তৈরিতে যথেষ্ট। তাই সন্তানের খেলার সাথী থেকে শুরু করে কোথায় কার সাথে মেলামেশা করছে সেই বিষয়ে খেয়াল রাখা জরুরি। শিশুকাল থেকে আধুনিক শিক্ষার সাথে ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে বেড়ে উঠে সেদিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। পৃথিবীর প্রতিটি পিতা-মাতা তার কলিজার টুকরো সন্তানকে মানুষের মতো মানুষ করে গড়ে তুলুক। আদর্শ, চরিত্রবান ও সুশিক্ষায় গড়ে তুলুক। সব ধরনের পাপাচার থেকে নিজেকে, পরিবার ও সন্তানদেরকে হেফাজত করে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচিয়ে রাখুক। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনগণ! নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবারবর্গকে রক্ষা কর সেই আগুন থেকে, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর। তাতে নিয়োজিত আছে কঠোর স্বভাব, কঠিন হূদয় ফেরেশতাগণ, যারা আল্লাহর কোনো হুকুমে তার অবাধ্যতা করে না এবং সেটাই করে, যার নির্দেশ তাদেরকে দেওয়া হয়।’ (সুরা আত তাহরীম, আয়াত-৬)

লেখক : শিক্ষার্থী ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়

aroufiubd@gmail.com

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads