• মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪২৯
জুলুমের পরিণতি ভয়াবহ

প্রতীকী ছবি

ধর্ম

জুলুমের পরিণতি ভয়াবহ

  • প্রকাশিত ২৩ মে ২০২১

মো. হুসাইন আহমদ

সৃষ্টির শুরু থেকেই আল্লাহপাক কিছু নীতিমালা নির্ধারণ করে রেখেছেন। পৃথিবীর রঙ্গমঞ্চে অনেক উত্থান-পতনের ঘটনা ঘটবে; কিন্তু এসব নীতিমালায় কোনো পরিবর্তন হবে না। যুগে যুগে তার এমন অমোঘ বিধি-বিধান এবং নির্দেশনাসমূহের বাস্তবায়ন লিপিবদ্ধ হয়ে আছে পৃথিবীর ইতিহাসে। যে কয়েকটি বিষয় আল্লাহপাক নিজের জন্যও নিষিদ্ধ করে রেখেছেন-সেসবের মধ্যে সর্বপ্রথম বিষয়টি হচ্ছে, জুলম বা অন্যায়। ভাষাবিদদের ঐক্যমতে কোনো বস্তুকে তার আসল স্থানে না রেখে অন্য স্থানে রাখার নাম হলো জুলুম। মুসলিম শরিফে বর্ণিত হাদিসে কুদসীতে আল্লাহপাক আমাদের লক্ষ্য করে বলেছেন, ‘হে আমার বান্দারা! আমি নিজেই আমার ক্ষেত্রে জুলুম হারাম করে নিয়েছি। এ বিষয়টিকে তোমাদের পরস্পরের জন্যও নিষিদ্ধ করে দিলাম। তোমরা একে অন্যের ওপর জুলুম করো না।’

আজকের সমাজজীবন থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রতিনিয়ত লক্ষ করলে দেখা যায়, একেবারে সাধারণ থেকে সাধারণ বিষয়ে একে অন্যের ওপর বিরাজমান জুলুম কিংবা শাসকের পক্ষ থেকে দেশের জনগোষ্ঠীর ওপর অবৈধভাবে শাসনক্ষমতা প্রয়োগের ভয়াবহতা। যা আল্লাহপাকের কাছে এক অমার্জনীয় অপরাধ। আর এর কঠিন শাস্তি ও পরিণতির প্রতি সতর্ক করে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা জুলুম বা অন্যায় করা থেকে বিরত থাকো। এই জুলুম কিয়ামতের দিন ঘোর অন্ধকার হয়ে দেখা দেবে।’ (সহিহ মুসলিম) তিনি অন্যায় থেকে বিরত থাকার পাশাপাশি মজলুম ব্যক্তির প্রার্থনার শক্তি সম্পর্কেও সজাগ করেছেন আমাদের। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘মজলুমের বদদোয়া থেকে বেঁচে থাকো। যদিও সে কাফের হয়। কারণ তার  দেয়া সরাসরি আল্লাহর কাছে পৌঁছে যায়।’

পৃথিবীতে আজ প্রতিনিয়ত কতো কতো জালেমের অন্যায়-অত্যাচার আর অবৈধ শক্তির ভয়ে মানুষ আতঙ্কিত ও ভীত। কতো অসহায় মানুষ দুহাত তুলে জালেমের ধ্বংস প্রার্থনা করছেন। অথচ এর প্রতিফলন তাৎক্ষণিক ঘটছে না। অশ্রু শুকিয়ে আশার প্রদীপ নিভে যাচ্ছে। অথচ জালেমের জুলুম অব্যাহত থেকে যাচ্ছে। এর রহস্য কী? কেন মহান স্রষ্টার এমন নীরবতা? হ্যা, উম্মতের এমন ব্যথাতুর কৌতূহলের জবাব দিয়েই আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলে গেছেন, ‘আল্লাহপাক জালিমকে ছাড় দিতে থাকেন, তারপর যখন ধরেন তখন আর তাকে কোনো সুযোগ দেন না।’ (বুখারি)

পবিত্র কোরআনুল কারীমে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘জালেমরা যা করছে সে সম্পর্কে তোমরা আল্লাহকে উদাসীন ভেবো না, তিনি তাদের ছাড় দিয়ে যাচ্ছেন ওই দিন পর্যন্ত যেদিন চোখগুলো সব আতঙ্কে বড় বড় হয়ে যাবে।’ (সুরা ইবরাহীম, আয়াত-৪৩) অন্য এক আয়াতে তিনি স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন, ‘এমনই ছিল তোমার রবের ধরপাকড়-যখন তিনি ধরেছিলেন ওই জালেম বসতিগুলোকে- নিশ্চয়ই তার ধরা অনেক কঠিন যন্ত্রণাময়।’ (সুরা হুদ, আয়াত-১০২) পবিত্র  কোরআনে জালেম বা অন্যায়কারীর ওপর আল্লাহপাকের পক্ষ থেকে অভিশাপ ও কঠিন শাস্তির বর্ণনা সম্বলিত অনেক আয়াতই রয়েছে।

কারো ওপর যে কোনো ধরনের অন্যায়ের পেছনে যে ধরনের স্বার্থই থাকুক-চাই তা সামাজিক, রাজনৈতিক বা ইসলামের নামে হলেও তা মহান শক্তিমান আল্লাহপাকের কাছে অন্যায় এবং অমার্জনীয় অপরাধ। অন্যের ওপর অন্যায় কিংবা জুলুম এতোই নিন্দনীয় যে স্বয়ং জালেমও তার জন্য বিষয়টিকে মেনে নিতে পারে না। একজন ঘোরতর জালেমও অন্যের কাছে নিজের ক্ষেত্রে ন্যায়ের কামনা করে থাকে।

আল্লাহপাকের কিছু অলঙ্ঘনীয় বিধানসমূহের একটি অন্যতম বিধান হলো-তিনি জালেম মুসলমানের বিপক্ষে মজলুম কাফেরকেও সাহায্য করেন। তবুও তিনি জালেমকে কোনো ছাড় দেন না। জুলুমের শাস্তি এতো ভয়াবহ ও দ্রুত যে, দুনিয়া থেকেই এর সূচনা হয়। আখেরাতে এর পরিণতি কতো মারাত্মক ও ভয়াবহ তা স্বয়ং আল্লাহপাকই জানেন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক হাদিসে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, ‘রোজ হাশরের মাঠে কোনো জালেম শাসক রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুপারিশ পাবে না।’

তাই ক্ষমতার দাপটে ব্যক্তিবর্গ অস্ত্র কিংবা শক্তিবলে প্রজা অথবা জনসাধারণ, অসহায় মুসলমানদের ওপর যে কোনো অন্যায় বা অবৈধ কার্যকলাপ চাপিয়ে দিয়ে সমর্থকদের নিকট থেকে ক্ষণিকের হাততালি পাওয়া যায়। কিন্তু চিরস্থায়ী পরকালের সূচনায় কাল কিয়ামতের মাঠে তারা বঞ্চিত হবে সব ধরনের দয়া ও করুণা থেকে। একটি ছাগলও যদি অন্যায়ভাবে আরেকটি ছাগলকে শিং দিয়ে সামান্য আঘাত করে থাকে-পরম শক্তিমান সেদিন দুটি ছাগলকেই জীবিত করে জুলুমের শিকার নির্বাক প্রাণীকেও সুযোগ করে দেবেন শিংধারী ছাগলকে আঘাত করে তার প্রতিশোধ নিতে। অবলা প্রাণীর বেলায় যদি এই হয় দেনা-পাওনার হিসাব; তাহলে সৃষ্টির সেরা জীব মানুষের ক্ষেত্রে জালেম-মজলুমের হিসাব নিকাশ কতোটা নিখুঁত ও ভয়াবহ হবে তা সহজেই অনুমেয়। তাই আজ যারা পৃথিবীর বুকে অন্যায়ভাবে জুলুম নির্যাতন, গুম, হত্যা করছে, তারা এর ভয়াবহ পরিণতির সম্মুখীন হবেই।      

অতঃপর যুগ যুগান্তরের অসহায় নির্যাতিত নিপীড়িত মানুষগুলোর জন্য এই অভয় বাণীই সবচেয়ে বড় সান্ত্বনা ও বেঁচে থাকার প্রেরণা যে, আল্লাহপাকের সাহায্য সদাসর্বদা মজলুমের সঙ্গে থাকে। তার সাহায্যও অতি সন্নিকটে। তাই হে জালেমগণ! এখনো সময় আছে, আল্লাহর বান্দাদের ওপর জুলুম করা থেকে বিরত হও। আল্লাহর কাছে তাওবা করো। তোমাদের জন্য এখনো তাওবার দরজা খোলা আছে। তাওবা করলে তোমাদের সব অপরাধ ক্ষমা করে দেওয়া হবে। ‘হে আল্লাহ! আপনি মজলুমদের দোয়া কবুল করুন। জালেমদের পতনকে ত্বরান্বিত করুন। দুর্বল ও অসহায়দেরকে সাহায্য করুন। আমিন ইয়া রাব্বাল আলামিন।

লেখক : শিক্ষার্থী, দাওরায়ে হাদিস,

দারুস-সুন্নাহ মাদরাসা, টাঙ্গাইল

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads