• শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জৈষ্ঠ ১৪২৯

ধর্ম

বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়ুক ইসলামের মর্মবাণী

  • প্রকাশিত ২৯ জুন ২০২১

মুফতি হেলাল উদ্দিন হাবিবী

 

‘তাবলিগ’ শব্দটি আমাদের সকলের কাছে পরিচিত। এর আভিধানিক অর্থ পৌঁছানো। ইসলামের শাশ্বত বাণী মানুষের নিকট পৌঁছে দেওয়াকে তাবলিগ বলে। মহান রাব্বুল আলামিন এ ধরনীতে এক লক্ষ বা দুই লক্ষ চব্বিশ হাজার পয়গম্বর প্রেরণ করেছেন। সবাই তাঁর একাত্ববাদের তাবলিগ করেছেন। এরই ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হজরত  মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ ধরাপৃষ্ঠে আগমন করে সম্পূর্ণ প্রতিকূলতার মাঝেও শান্তি, কল্যাণ ও একাত্ববাদের প্রচার করেছেন। বিশ্বময় ছড়িয়ে দিয়েছেন ইসলামের মর্মবাণী। যার ফলে আইয়্যামে জাহেলিয়্যাত পরিণত হয়েছিল সোনালী যুগে।

 

বিদায় হজের ভাষণে বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘোষণা করেছিলেন, আমার পক্ষ হতে একটি বাণী হলেও পৌঁছে দাও। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এ নির্দেশ পালনার্থে যুগে যুগে সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়িন, তাবে তাবেয়িন, হাক্কানি পীর-মাশায়েখ ও ইসলামী মনীষীগণ পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে জীবনের শেষ নিঃশ্বেষ পর্যন্ত ইসলামের তাবলিগ করে গেছেন। সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ করাই ছিল তাঁদের মিশন এবং ভিশন।

মহান রাব্বুল আলামিন স্বয়ং তাঁর প্রিয় বান্দাদের শান্তি ও কল্যাণের দিকে তাবলিগ করে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন, ‘আর আল্লাহ শান্তির ঘর তথা জান্নাতের দিকে আহ্বান করেন এবং যাকে ইচ্ছা সরলপথ প্রদর্শন করেন।’ (সুরা ইউনুস, আয়াত-২৫) মহান আল্লাহ তায়ালা তাঁর প্রিয়বন্ধু হজরত  মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বিশ্বময় দাওয়াতের নির্দেশ প্রদান করে বলেন, ‘আপনি বুঝাতে থাকুন, নিশ্চয় বুঝানো ঈমানদারগণের উপকারে আসবে।’ (সুরা জারিয়াত,আয়াত-৫৫) পবিত্র কোরআনের অন্যত্র আল্লাহতায়ালা আরো ইরশাদ করেন, ‘হে নবী! আপনি আপনার রবের দিকে জ্ঞানগর্ভ কথা ও উত্তম উপদেশ দ্বারা দাওয়াত দিন এবং তাদের সাথে বিতর্ক করুন উত্তম পন্থায়।’ (সুরা নাহল, আয়াত-১২৫)

 

যারা মানুষকে শান্তি, কল্যাণ ও একাত্ববাদের দাওয়াত দেয় এবং ইসলামের দিকে আহ্বান করে, তাদের প্রশংসা করে মহান রাব্বুল আলামিন পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন, ‘তার চেয়ে উত্তম কথা কার? যে আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেয়, নেক আমল করে এবং বলে আমি মুসলমান।’ (সুরা হা-মীম সিজদা, আয়াত-৩৩) আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমরাই শ্রেষ্ঠ উম্মত, মানবজাতির কল্যাণের জন্য তোমাদের আবির্ভাব ঘটানো হয়েছে; তোমরা সৎকাজের

আদেশ করবে, অসৎ কাজে নিষেধ করবে এবং আল্লাহকে বিশ্বাস করবে।’ (সুরা-৩ আলে ইমরান, আয়াত-১১০) মহান আল্লাহতায়ালা আরো ইরশাদ করেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা নিজেদেরকে ও তোমাদের পরিবার-পরিজনকে  সেই অগ্নি থেকে রক্ষা কর; যার ইন্ধন হবে মানুষ এবং পাথর, যাতে পাষাণ হূদয়, কঠোর স্বভাবের ফেরেশতাগণ নিয়োজিত আছে, তারা কোনো বিষয়ে আল্লাহতায়ালার অবাধ্য হয় না, আর তারা সেটাই করে যা তাদেরকে নির্দেশ করা হয়।’ (সুরা তাহরিম, আয়াত-৬) হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘তোমরা মানুষের সাথে নম্র ব্যবহার করো, রূঢ় আচরণ করো না, সুসংবাদ দাও, ভীতসন্ত্রস্ত করো না।’ (বুখারি, মুসলিম)

ইসলামের বাণী প্রচার করতে গিয়ে আমাদের প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কতইনা কষ্ট, নির্যাতনের স্বীকার হয়েছেন। সুদীর্ঘ তের বছর মক্কার কাফেরদের নির্মম নির্যাতন হাসিমুখে বরণ করেছেন। অবরুদ্ধ জীবন কাটিয়েছেন। মক্কা ও তায়েফে কাফেরদের পাথরের আঘাতে বার বার রক্তাক্ত হয়েছিল তাঁর পবিত্র দেহ মোবারক। ওহুদের ময়দানে শহীদ হয়েছিল তাঁর দুই-দুইটি দাঁত মোবারক। ক্ষুধার যন্ত্রণায় পেটে একাধিক পাথর বাঁধতে হয়েছিল। তদুপরি এক মুহূর্তের জন্য তিনি একাত্ববাদের দাওয়াত বন্ধ করেননি।

 

হজরত মুনিব আজাদী (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জাহিলিয়্যাতের যুগে দেখেছি, তিনি বলছিলেন, “হে মানবজাতি! তোমরা বলো ‘আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নাই’ তাহলে সফলকাম হবে। একথা শুনে কেউ তাঁর পবিত্র চেহারা মোবারকে থু থু নিক্ষেপ করছিল, আবার কেউ তাঁর ওপর মাটি নিক্ষেপ করছিল, আর কেউ তাকে গালি দিচ্ছিল। এভাবে দিনের অর্ধেক কেটে গেল। তারপর একটি মেয়ে তাঁর নিকট পানির পাত্র নিয়ে আগমন করলো। তিনি সেই পানি দ্বারা নিজের চেহারা ও উভয় হাত ধৌত করলেন এবং বললেন, হে আমার মেয়ে! তুমি তোমার পিতার ব্যাপারে অপমৃত্যু ও অপমানের আশঙ্কা করবে না। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, এই মেয়েটি কে? লোকজন বললো, ইনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কন্যা যয়নব (রা.)। তিনি একজন সুশ্রী বালিকা ছিলেন।” (তাবরানী, মাজমায়ে যাওয়ায়েদ)

দাওয়াত ও তাবলিগের মাধ্যমে ইসলাম নামক বটবৃক্ষে ডাল-পালা ছড়ায়, পাতা গজায়; যদিও মহান এ কাজ অত্যন্ত কঠিন ও বিপদসংকুল। সর্বশেষ এবং সর্বশ্রেষ্ঠ নবীর উম্মত হিসেবে এ পবিত্র দায়িত্ব আজ আমাদের ওপর অর্পিত। তাই জীবনের শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত ইসলামের মর্মবাণী প্রচারে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা ব্যয় করা আমাদের একান্ত কর্তব্য। মহান আল্লাহতায়ালা আমাদেরকে দাওয়াতি কাফেলায় শামিল হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

 

 

লেখক : খতিব, মাসজিদুল কোরআন জামে মসজিদ, যাত্রাবাড়ী, ঢাকা

প্রিন্সিপাল, মারকাজুল উলূম আজিজিয়া মাদরাসা, যাত্রাবাড়ী, ঢাকা

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads