• বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ১ জৈষ্ঠ ১৪২৯
সিরাত অধ্যয়নের গুরুত্ব

সংগৃহীত ছবি

ধর্ম

সিরাত অধ্যয়নের গুরুত্ব

  • প্রকাশিত ০৩ নভেম্বর ২০২১

দৈনন্দিন জীবনে অনেক গল্প-উপন্যাস পড়ি আমরা। পড়ি অনেক মনীষীর জীবনীও। কিন্তু প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনী পড়েছি কয়জনে? নজরুলের বিষের বাঁশি, রবীন্দ্রনাথের অপরিচিতা, শেষের কবিতা, গীতাঞ্জলি, চোখের বালি, বঙ্কিমচন্দ্রের ‘বিড়াল’ গল্প, সৈয়দ মুজতবা আলীর প্রবাস বন্ধু, শেখ মুজিবের অসমাপ্ত আত্মজীবনী পড়ে নাই যে, এমন লোক আমাদের মাঝে খুব কমই পাওয়া যাবে। কিন্তু নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনী পড়েছে এমন লোক খুঁজে পাওয়া আমাদের মাঝে খুবই দুষ্কর, যা আমাদের জন্য অত্যন্ত দুঃখজনক।

বিশ্বকবি হওয়ায় যদি রবীন্দ্রনাথের গীতাঞ্জলি পড়তে পারি, বিদ্রোহী কবি হওয়ায় যদি নজরুলের রাজবন্দির জবানবন্দি, বিদ্রোহী কবিতা পড়তে পারি, বাংলাদেশ নামক ছোট্ট একটা ভূখণ্ডের স্থপতি হওয়ায় যদি শেখ মুজিবের অসমাপ্ত আত্মজীবনী পড়তে পারি তাহলে যাঁকে সৃষ্টি না করলে আল্লাহ তায়ালা আমাকে আপনাকে সৃষ্টি করতেন না। সৃষ্টি করতেন না সৌরজগৎ, গ্রহ-নক্ষত্র, নভোমণ্ডল-ভূমণ্ডল কোনকিছুই। যাঁর উসিলায়ই সৃষ্টি করেছেন আল্লাহ গোটা মহাবিশ্বকে। সেই মহামানব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পূত-পবিত্র জীবনীটা যদি আমরা না পড়তে পারি, তাঁর জীবনী মোবারক পড়তে যদি দৈনিক এক ঘন্টা-আধাঘন্টা সময় ব্যয় করতে না পারি, তাহলে আমাদের মতো বড় হতভাগা আর কে আছে! যে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সারা জীবন আমাদের জন্য ইয়া উম্মাতি বলে বলে কাঁদছেন। যাঁকে ভালো না বাসলে ঈমানদারের ঈমানে পূর্ণতা আসে না। যাঁর জীবনাদর্শে রয়েছে মানবজাতির জন্য শান্তি ও মুক্তি। যাঁর জীবনাদর্শের ব্যাপারে স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা কসম খেয়ে বলেছেন ‘নিশ্চয় আপনি মহান চরিত্রের ওপর অধিষ্ঠিত।’ (সূরা ক্বলাম, আয়াত নং: ০৪) অন্যত্র আল্লাহ তাআলা বলেছেন ‘রাসূলের মাঝে রয়েছে তোমাদের জন্য উত্তম আদর্শ।’ (সূরা আহযাব, আয়াত নং: ২১)

একজন মুমিন-মুসলমান হয়ে শ্রেষ্ঠনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শ্রেষ্ঠ উম্মত হয়ে যদি তাঁর জীবনীটা না পড়তে পারি, তাঁর সম্পর্কে না জানতে পারি তাহলে এর চেয়ে দুঃখজনক ও লজ্জাজনক দুর্ভাগ্য আমাদের জন্য আর কিছুই হতে পারে না। লোকমুখে শুনেছি প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুব মমতাময়ী দরদী ছিলেন। ছিলেন খুবই দয়ালু। সবার প্রতি ভালোবাসা প্রদর্শন করতেন। কিন্তু কেমন ছিল অন্যের প্রতি তাঁর ভালোবাসা প্রদর্শন? কেমন ছিল তাঁর আচার-ব্যবহার? কেমন ছিল তাঁর কথাবার্তা? কীভাবে তিনি মানুষের সাথে কথা বলতেন? কেমন মানুষ হলে একাই তিনি পুরো বিশ্বকে জয় করতে পারেন! কেমন আদর্শের ব্যক্তি হলে মুমিনদের জন্য তাঁকে ভালোবাসা, তাঁর আদর্শ লালন করা আবশ্যক হয়ে যায়! ভেবে দেখেছেন কী কখনো? না ভাবলে একটু ভাবুন।

যাঁর আদর্শে অনুপ্রাণিত পাষণ্ড হৃদয়ের মানুষগুলো পর্যন্ত সোনার মানুষে পরিণত হয়েছে। যাঁর জীবনী পড়তে গিয়ে অসংখ্য অমুসলিম কালেমা পড়ে মুসলমান হয়েছে। আশ্রয় নিয়েছে ইসলামের সুশীতল ছায়ার নিচে। যাঁর মুখের কথার দ্বারা কেউ কোনদিন কষ্ট পাননি। যাঁর ব্যবহারে কেউ কোনদিন ব্যথিত হননি। যাঁর হাত দ্বারা কেউ কোনদিন আঘাতপ্রাপ্ত হননি। পেয়েছেন মুক্তির দিশা, কল্যাণ ও সমৃদ্ধির পথ। আসুন না, সেই নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনীটা পড়ি। তাঁর জীবনী বিষয়ক অনেক গ্রন্থ রয়েছে লাইব্রেরিগুলোতে।

পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করার জন্য যদি রবীন্দ্র, নজরুলের কাব্য-উপন্যাস, গল্প-প্রবন্ধ পড়তে পারি, একটা সরকারি চাকরি পাওয়ার জন্য যদি শেখ মুজিবের অসমাপ্ত আত্মজীবনী পড়তে পারি তাহলে আমাদের জীবন গঠন করার জন্য, কাল কঠিন কেয়ামতের ময়দানে নবীজির শাফায়াত পাওয়ার জন্য নবীজির জীবনীটা কী কিনে বা সংগ্রহ করে পড়তে পারবো না? একজন মুসলিম ও নবির উম্মত হিসেবে এটা আমাদের উপর দায়িত্ব। পড়লেই তবে তাঁর সম্পর্কে আমরা জানতে পারবো। আর তাঁর সম্পর্কে যত বেশি জানতে পারবো তত বেশি তাঁর প্রতি আমাদের ভালোবাসা বৃদ্ধি পাবে। তাই আসুন আমরা প্রিয় নবীজির জীবনী পড়ি, তাঁর জীবনাদর্শ অনুযায়ী আমাদের জীবন গঠন করি। আল্লাহ তাওফিক দান করুন। আমিন।

লেখক :ইমরান নাজির

শিক্ষার্থী, বায়তুশ শরফ আদর্শ কামিল মাদরাসা, চট্টগ্রাম।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads