• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯

ধর্ম

আদর্শ পুরুষের বৈশিষ্ট্য

  • প্রকাশিত ০৭ জানুয়ারি ২০২২

মুফতি উবায়দুল হক খান

 

মানবিক উন্নত বৈশিষ্ট্যের অধিকারী, নৈতিকতার বিশেষণে ভূষিত ও উত্তম চারিত্রিক গুণে গুণান্বিত মানুষকেই আদর্শ মানুষ বলা যায়। এই আদর্শ মানুষই সমাজের মূলভিত্তি। এদের দ্বারাই সমাজ সুন্দরভাবে চলে। মানবতা হয় উপকৃত। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের কল্যাণে সে নিবেদিত হয়। এসব গুণে কোনো পুরুষ গুণান্বিত হলে তাকেই আদর্শ পুরুষ বলে। আদর্শ সন্তানের জন্য যেমন আদর্শ মায়ের দরকার, আদর্শ পরিবার গঠনের জন্য যেমন আদর্শ নারী-পুরুষ দরকার; তেমনি আদর্শ সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনের জন্য আদর্শ পুরুষ দরকার। কারণ সমাজ ও রাষ্ট্রের নেতৃত্বে থাকে পুরুষরাই।

দীন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আল্লাহ যেমন পুরুষদের কেই নবুওয়াত ও রেসালাতের দায়িত্ব দিয়ে পাঠিয়ে ছিলেন, তেমনি তিনি পুরুষদের কেই কর্তৃত্বশীল করেছেন। তাই দেশ-জাতি, সমাজ-রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য পুরুষদেরকে আদর্শ হিসেবে গড়ে উঠতে হবে। তাহলে তাদের দ্বারা ব্যক্তি, সমাজ-রাষ্ট্র সবাই কল্যাণ লাভ করবে, সবাই সুখ-শান্তিতে বসবাস করতে পারবে।

আদর্শ পুরুষের কতিপয় বৈশিষ্ট্য: হজরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সাত শ্রেণির লোককে আল্লাহ তাআলা তাঁর ছায়া দিবেন যেদিন তাঁর ছায়া ছাড়া আর কোনো ছায়া থাকবে না। এক. ন্যায়পরায়ণ শাসক।

দুই. সেই যুবক যে আল্লাহর ইবাদতে বড় হয়েছে। তিন. সে ব্যক্তি যার অন্তর সর্বদা মসজিদের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকে, সেখান থেকে বের হয়ে আসার পর তথায় ফিরে না যাওয়া পর্যন্ত। চার. এমন দুই ব্যক্তি যারা আল্লাহর ওয়াস্তে পরস্পরকে ভালোবাসে। আল্লাহর ওয়াস্তে উভয়ে মিলিত হয় এবং তাঁর জন্যই পৃথক হয়ে যায়। পাঁচ. এমন ব্যক্তি যে নির্জনে আল্লাহকে স্মরণ করে আর তার দুই চক্ষু অশ্রু বিসর্জন দিতে থাকে। ছয়. এমন ব্যক্তি যাকে কোনো সম্ভ্রান্ত সুন্দরী নারী আহ্বান করে আর সে বলে, আমি আল্লাহকে ভয় করি। সাত. সে ব্যক্তি, যে গোপনে দান করে। এমনকি তার বাম হাত জানতে পারে না তার ডান হাত কি দান করে। (সহিহ বুখারি ও মুসলিম শরিফ) এই হাদিসে বর্ণিত সাত শ্রেণির মানুষের মধ্যে ন্যায়-পরায়ণ নেতা-শাসক ও মসজিদের সঙ্গে অন্তর সম্পৃক্ত থাকা কেবল পুরুষের জন্য নির্দিষ্ট। বাকি গুণগুলো নারী-পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। নিম্নে প্রত্যেকটি গুণের সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা আলোচনা করা হলো।

 

ন্যায়পরায়ণ শাসক : ন্যায়পরায়ণ শাসক বা নেতা দুনিয়ার জন্য নেয়ামত। কারণ, তার মাধ্যমে মানুষ শান্তি ও কল্যাণ লাভ করে। সুতরাং সমাজ বা দেশের নেতৃত্ব দিতে কিংবা শাসন করতে সর্বদা সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা আদর্শ পুরুষের জন্য অবশ্য কর্তব্য।

 

যৌবনকালের ইবাদত : যৌবনকাল মানব জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়। এই সময় ইবাদত করা অত্যন্ত কঠিন। এ কারণে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কিয়ামতের মাঠে পাঁচটি জিনিস জিজ্ঞেস করার পূর্বে আদম সন্তানের পা নড়াচড়া করার সুযোগ পাবে না। তন্মধ্যে একটি হচ্ছে, প্রত্যেক ব্যক্তি তার যৌবনকাল কোন পথে অতিবাহিত করেছে। (তিরমিজি শরিফ)

 

অন্তর সর্বদা মসজিদের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকা : যার অন্তর মসজিদের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি সালাত আদায়ের পর মসজিদে বসে আল্লাহ যিকির [স্মরণ] করে, সে ব্যক্তি সেই দিনের মতো নিষ্পাপ হয়ে যায় যেদিন তার মা তাকে জন্ম দিয়েছিল। (তিরমিজি শরিফ)

 

আল্লাহর ওয়াস্তে পরস্পরকে ভালোবাসা : এমন দুই ব্যক্তি যারা আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় পরস্পরকে ভালোবাসে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, এমন মানুষকে আল্লাহ ভালোবাসেন, ফেরেশতাগণ ভালোবাসেন এবং সব মানুষ ভালোবাসেন। (সহিহ বুখারি ও মুসলিম শরিফ)

 

নির্জনে আল্লাহকে স্মরণ করা : যে ব্যক্তি নির্জনে আল্লাহর ভয়ে অশ্রু বিসর্জন দেয় বা কাঁদে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর ভয়ে কাঁদে, তার জাহান্নামে যাওয়া অনুরূপ অসম্ভব যেমন গাভির বাঁট থেকে দুধ বের হওয়ার পর পুনরায় ভেতরে ঢুকানো অসম্ভব। (তিরমিজি শরিফ)

 

সম্ভ্রান্ত সুন্দরী নারীর অবৈধ আহ্বানে সাড়া না দেওয়া : যে ব্যক্তি যেনা-ব্যভিচারে লিপ্ত হয় না। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি দুটি জিনিসের জামিন হবে, আমি তাকে জান্নাতে নিয়ে যাওয়ার জামিন হব। তার একটি হচ্ছে যেনা থেকে মুক্ত থাকতে হবে। অপরটি হচ্ছে পরনিন্দা হতে মুক্ত থাকতে হবে। (সহিহ বুখারি ও মুসলিম শরিফ)

 

গোপনে দান করা : যারা গোপনে দান করে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, জান্নাত পাওয়ার জন্য দান-সদাকাহ হচ্ছে দলিল। (সহিহ বুখারি ও মুসলিম) এসব গুণের অধিকারী মানুষই হচ্ছে আদর্শ পুরুষ। আল্লাহ তাআলার বাণী, যারা দীনের ব্যাপারে তোমাদের সঙ্গে যুদ্ধ করে না এবং তোমাদেরকে ঘর-বাড়ি হতে বের করে দেয় না, এমন অমুসলিম লোকদের সঙ্গে কল্যাণকর ও সুবিচারপূর্ণ ব্যবহার করতে আল্লাহ তোমাদেরকে নিষেধ করেন না। সুবিচারকারীদের আল্লাহ পছন্দ করেন। (সুরা মুমতাহানা : ৮) ওই আয়াতে মহান আল্লাহ সুবিচারকে আদর্শ পুরুষের বৈশিষ্ট্য হিসেবে উল্লেখ করেছেন। আর এ সুবিচার শুধু মুসলিমের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট নয়। বরং যেসব অমুসলিম মুসলমানদের প্রতি জুলুম-নির্যাতন করে না তাদের সঙ্গেও ন্যায়ানুগ আচরণ ও সুবিচার করার জন্য আল্লাহ বলেছেন। সুবিচার আল্লাহর কাছে পছন্দনীয় বৈশিষ্ট্য।

 

লেখক : মুহাদ্দিস ও শিক্ষা সচিব, জামিআতুস সুফফাহ আল ইসলামিয়া হামিউস সুন্নাহ গাজীপুর

সহ-অর্থ সম্পাদক, বাংলাদেশ ইসলামী লেখক ফোরাম

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads