• শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জৈষ্ঠ ১৪২৯

শোবিজ

ফজলুল হক স্মৃতি পুরস্কার পেলেন সুচন্দা ও রাফি

  • বিনোদন প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ২৯ ডিসেম্বর ২০১৯

বাংলা চলচ্চিত্রের অগ্রদূত পুরুষ প্রয়াত ‘ফজলুল হক স্মৃতি পুরস্কার-২০১৯ পেয়েছেন চলচ্চিত্র পরিচালনায় বিশিষ্ট চলচ্চিত্র অভিনেত্রী কোহিনূর আখতার সুচন্দা এবং চলচ্চিত্র সাংবাদিকতায় রাফি হোসাইন। গত ২৭ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় রাজধানীর ওয়েস্টিন হোটেলে আয়োজিত এক আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানে এ দুজনের হাতে পুরস্কার তুলে দেন প্রধান অতিথি জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান। উত্তরীয় ও সনদ তুলে দেন সুজাতা, সালাউদ্দীন জাকী এবং ফজলুল হকের মেয়ে কেকা ফেরদৌসী। অনুষ্ঠানে দেখানো হয় ফজলুল হকের বর্ণাঢ্য জীবন ও কর্ম নিয়ে ৩০ মিনিটের একটি প্রামাণ্যচিত্র ‘সম্মুখযাত্রী’। এটি পরিচালনা করেছেন শহীদুল আলম সাচ্চু। সেখানে কিংবদন্তিতুল্য ব্যক্তিত্বরা ফজলুল হকের বর্ণিল কর্মজীবন নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন। এরপর ফজলুল স্মৃতি পুরস্কারপ্রাপ্ত প্রয়াত ব্যক্তিদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

এ অনুষ্ঠানে পরিবারের পক্ষে কেকা ফেরদৌসী ঘোষণা দেন আগামী বছর থেকে ‘ফজলুল হক স্মৃতি পুরস্কার’ প্রদানের জন্য নতুন কমিটি হবে। যার নেতৃত্ব দেবেন ফজলুল হকের দুই নাতনি মেঘনা ও মোহনা। ফজলুল হক ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম চলচ্চিত্রবিষয়ক পত্রিকা ‘সিনেমা’র সম্পাদক এবং বাংলাদেশের প্রথম শিশুতোষ চলচ্চিত্র ‘প্রেসিডেন্ট’-এর পরিচালক, প্রথম আইপিএস এবং প্রথম ডেভেলপমেন্ট ব্যবসার উদ্ভাবক। তার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ২০০৪ সাল থেকে এ পুরস্কার দিয়ে আসছে ‘ফজলুল হক স্মৃতি কমিটি’।

পুরস্কার গ্রহণের পর কোহিনূর আখতার সুচন্দা বলেন, ‘ফজলুল হক বাংলা চলচ্চিত্রে ইতিহাস সৃষ্টিকারী একজন ব্যক্তিত্ব ছিলেন। তাকে আমার স্যালুট। রক্ষণশীল, কুসংস্কারে ভরা জাতিকে চলচ্চিত্রের মাধ্যমে জাগিয়ে ছিলেন তিনি। ওই মানুষটিকে স্মরণ করে আমাকে সম্মাননা জানানোর জন্য আমি কৃতজ্ঞ। আজকের এই পুরস্কারপ্রাপ্তির আনন্দ আমি আপনাদের বোঝাতে পারব না।’ রাফি হোসাইন বলেন, ‘ফজলুল হক প্রয়াত হলেও এই পুরস্কার তাকে বাঁচিয়ে রাখবে যুগ-যুগান্তর, তার স্মৃতি চলচ্চিত্র জগতের আজীবন প্রেরণা হয়ে নাড়া দেবেন। তার সহধর্মিণী রাবেয়া খাতুন এবং সুযোগ্য উত্তরসূরি ফরিদুর রেজা সাগরকে ধন্যবাদ। ফরিদুর রেজা সাগরের কাছে কোনো আবদার নিয়ে গেলে তিনি কখনোই না করেননি। তিনি শুধু নামেই নন, মননেও একজন মহৎ মানুষ। এ পুরস্কার পেয়ে আমি ভীষণভাবে সম্মানিত বোধ করছি।’

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ইমপ্রেস টেলিফিল্ম ও চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর, ইমপ্রেস গ্রুপের পরিচালক ও ফজলুল হকের মেয়ে কাকলীর স্বামী জহির উদ্দিন মাহমুদ মামুন, চলচ্চিত্র পরিচালক বাচসাসের সাবেক সভাপতি আবদুর রহমান, বাংলাদেশ পরিচালক সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজার, ছড়াকার আমীরুল ইসলাম, অভিনেতা আল মনসুর, চিত্রনায়ক ওমর সানী, মৌসুমী, চম্পা, প্রযোজক ও পরিবেশক সমিতির সভাপতি খোরশেদ আলম খসরু, অনিমা রায়, রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাসহ বিভিন্ন অঙ্গনের বিশিষ্টজনেরা।

১৯৩০ সালের ২৬ মে বগুড়ার এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জনগ্রহণ করেন ফজলুল হক এবং ১৯৯০ সালের ২৬ অক্টোবর তার মৃত্যু হয়। তিনি ছিলেন এ দেশের প্রথম সিনেমাবিষয়ক পত্রিকা ‘সিনেমা’র সম্পাদক ও প্রকাশক। ১৯৫০ সালে বগুড়া থেকে পত্রিকাটি প্রথম প্রকাশ হয়। পরবর্তী সময়ে প্রকাশনা ঢাকায় স্থানান্তিত হয়। ষাটের দশকের শুরুতে ফজলুল হক এদেশে প্রথম শিশুতোষ চলচ্চিত্র ‘প্রেসিডেন্ট’ তৈরি করেছিলেন যা তৎকালীন সময়ে পুরস্কৃতও হয়েছিল। ‘প্রেসিডেন্ট’ ছবিতে শিশুনায়কের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন শিশুসাহিত্যিক ফরিদুর রেজা সাগর। এ ছবিতে আরেকটি শিশুর চরিত্রে অভিনয় করেছেন বিশিষ্ট রন্ধনশিল্পী কেকা ফেরদৌসী। চলচ্চিত্রটিতে অভিনয় করে সেই সময়ে পুরস্কৃতও হয়েছিলেন ফরিদুর রেজা সাগর। ‘প্রেসিডেন্ট’ ছবিটি যখন নির্মিত হয়, তখন ঢাকায় প্রযোজিত সিনেমার সংখ্যা মাত্র কয়েকটি। পরে তিনি ‘উত্তরণ’ নামে আরো একটি সিনেমা পরিচালনা করেন। এ সিনেমায় অভিনয় করেছিলেন আনোয়ারসহ অনেকে।

ফজলুল হকের সহধর্মিণী বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক রাবেয়া খাতুন। জ্যেষ্ঠপুত্র ফরিদুর রেজা সাগর বিশিষ্ট শিশুসাহিত্যিক ও টিভি ব্যক্তিত্ব এবং ইমপ্রেস টেলিফিল্ম, চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ছোট ছেলে ফরহাদুর রেজা প্রবাল বাংলাদেশ টেলিভিশনের একসময়ের জনপ্রিয় উপস্থাপক ও বর্তমানে অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী স্থপতি, বড় মেয়ে কেকা ফেরদৌসী বিশিষ্ট রন্ধনবিদ ও ছোট মেয়ে ফারহানা মাহমুদ কাকলী একজন সুগৃহিণী।

২০০৪ থেকে প্রবর্তিত এই পুরস্কার ইতোমধ্যে পেয়েছেন ফজল শাহাবুদ্দীন ও আহমদ জামান চৌধুরী (২০০৪), চাষী নজরুল ইসলাম ও হুমায়ূন আহমেদ (২০০৫), সাইদুল আনাম টুটুল ও রফিকুজ্জামান (২০০৬), সুভাষ দত্ত ও হীরেন দে (২০০৭), আবদুর রহমান ও গোলাম রাব্বানী বিপ্লব (২০০৮), সৈয়দ শামসুল হক ও আমজাদ হোসেন (২০০৯), চিন্ময় মৃৎসুদ্দী ও মোরশেদুল ইসলাম (২০১০), ই আর খান ও অনুপম হায়াৎ (২০১১), নাসির উদ্দিন ইউসুফ ও গোলাম সারওয়ার (২০১২), নায়করাজ রাজ্জাক ও রেজানুর রহমান (২০১৩), সৈয়দ সালাহউদ্দীন জাকী ও আরেফিন বাদল (২০১৪), মাসুদ পারভেজ ও শহীদুল হক খান (২০১৫), আজিজুর রহমান ও মোস্তাফা জব্বার (২০১৬), আবদুল লতিফ বাচ্চু ও নরেশ ভূঁইয়া (২০১৭), মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ও শফিউজ্জামান খান লোদী (২০১৮), কোহিনূর আখতার সুচন্দা ও রাফি হোসাইন (২০১৯)।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads