• মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ৩১ বৈশাখ ১৪২৯
আমি সব সময় আজকের জন্য বাঁচি

ছবি : সংগৃহীত

শোবিজ

আমি সব সময় আজকের জন্য বাঁচি

  • বিনোদন প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০৬ অক্টোবর ২০২০

টিভি নাটকের এই সময়ের অন্যতম ব্যস্ত অভিনেতা আফরান নিশো। তার অভিনয় জাদুতে মুগ্ধ দর্শক। গল্পের চরিত্র যেমনই হোক, নিজেকে তিনি এমনভাবে উপস্থাপন করেন, যেন তাকে ঘিরেই এ চরিত্রের সৃষ্টি। র্যাম্প মডেলিং থেকে শুরু করে টেলিভিশন বিজ্ঞাপন, সবই তিনি করেছেন। এবার জানা গেল নতুন চমক। ‘মরীচিকা’-য় প্রধান খল চরিত্রে দেখা যাবে সময়ের জনপ্রিয় অভিনেতা আফরান নিশোকে। অফিসিয়ালি বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেননি পরিচালক ও অভিনেতা। তবে এ সিরিজ-সংশ্লিষ্ট বেশ কিছু সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

সত্য ঘটনা অবলম্বনে ‘ছুঁয়ে দিলে মন’খ্যাত পরিচালক শিহাব শাহীন নির্মাণ করছেন ক্রাইম থ্রিলার ‘মরীচিকা’। প্রায় ১৮ বছর আগে এক জনপ্রিয় মডেলের রহস্যময় মৃত্যুকে কেন্দ্র করে এটি নির্মিত হতে যাচ্ছে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে। এখানে জনপ্রিয় অভিনেতা জোভানের সঙ্গে জুটি বেঁধে কাজ করবেন চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি।

পুলিশ অফিসারের চরিত্রে থাকা চিত্রনায়ক সিয়াম আহমেদের বিপরীতে ‘মরীচিকা’-তে দেখা যাবে ফারজানা রিক্তাকে। এরইমধ্যে পরিচালক, কাস্টিং, গল্পের আভাসে বেশ আলোচনায় এসেছে ওয়েব সিরিজটি।

বিগ বাজেটের ‘মরীচিকা’ ওয়েব সিরিজটি খুব শিগগিরই ওটিটি প্লাটফরম ‘চড়কি’-তে মুক্তি পাবে বলে জানা যায়।

ভবঘুরে, মাস্তান, রাজাকার, জোকার, খামখেয়ালি, উচ্ছৃঙ্খল, গোয়েন্দা, ছিঁচকে চোর-আফরান নিশোকে লোকে অনেক নামেই ডাকে। আসলে তিনি কেমন, তা বোঝা দুস্কর। কারণ সবসময় তিনি কোনো না কোনো চরিত্র ধারণ করছেন। ফলে বলা যায় আফরান নিশো একটি প্রহেলিকার নাম। কোনটি তার আসল রূপ আর কোনটি অভিনয়, ধাঁধায় ফেলে দেয় দর্শককে। গত ১০ বছরে টিভি মিডিয়ায় নিজের একটা অবস্থান তৈরি করেছেন, যা বেশ ঈর্ষণীয়।

নিশো বলেন, ‘সৃষ্টিকর্তা আমাকে কাজের সময় বেশি এনার্জি দিয়ে রেখেছেন [হাসি]। ছোটবেলায় মা-বাবাকে সবসময় একই কথা শুনতে হতো- আপনার ছেলের মধ্যে এনার্জি ভরপুর। যতই পরিশ্রম করতাম না কেন, কখনো ক্লান্ত হতাম না। এখনো সে অভ্যাস বিদ্যমান। শুটিংয়ে যতই চাপ থাকুক; বাসায় এসেও পরিবারের জন্য নিজের শতভাগ দিতে চেষ্টা করি। আমি সবসময় আজকের জন্য বাঁচি। কাল কী হবে, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। তবে বিশেষ দিবস ও উৎসব আয়োজনে যেন দম ফেলার ফুরসত থাকে না। তখন নিজের ওপর দিয়ে অন্যরকম চাপ বয়ে যায়। এটাও মাঝেমধ্যে উপভোগ করি।’

সময়ের সঙ্গে সবকিছুই বদলে যায়। বদলেছে নাটক প্রচারের মাধ্যমও। সাধারণত টেলিভিশনে প্রচারের জন্যই নাটক তৈরি হতো এতদিন। ইউটিউব আসার পর সেই নাটকগুলো টেলিভিশনে প্রচারের পর ইউটিউব চ্যানেলে প্রচার হতো। এখনও এধারা চলছে। তবে বছরখানেক ধরে উল্টোচিত্র দেখা গেছে টেলিভিশন মিডিয়ায়। এখন ইউটিউবের জন্যই বানানো হচ্ছে নাটক। এগুলোতে অভিনয় করছেন জনপ্রিয় তারকা শিল্পীরা। অভিনেতা আফরান নিশোও তাদের একজন। নিশো বলেন, ‘সময়ের সঙ্গে বিনোদনের মাধ্যমও বদলে গেছে। দর্শক এখন চাইলেই ইউটিউবে যে কোনো নাটক দেখছেন। এ মাধ্যমে প্রচারিত নাটকে অন্য রকম সাড়া পাওয়া যায়।’

ছোট পর্দায় যার রাজত্ব সেই নিশোকে এখনো দর্শক বড় পর্দায় দেখতে পায়নি। নিশো বলেন, চলচ্চিত্রে আমিও অভিনয় করতে চাই। যে ধরনের চলচ্চিত্রে অভিনয় করতে চাই, সে ধরনের পাচ্ছি না। অভিনয়ের জন্য অনেক প্রস্তাব পেয়েছি। কিন্তু নানা কারণে তা প্রত্যাখ্যান করতে হয়েছে।

চলচ্চিত্র জগৎটি টেলিভিশনের চেয়ে অনেক বড় প্ল্যাটফরম এবং সে প্ল্যাটফরমের জন্য নিজেকে আরও প্রস্তুত করা দরকার। অনেক দিন আগে আমাকে একটি চলচ্চিত্রের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। চরিত্রটি আমার পছন্দ হয়েছিল। প্রস্তুতিতে আমি ছয় মাসের জন্য সময় দেওয়ার অনুরোধ করেছিলাম নির্মাতাকে। তবে চলচ্চিত্র নির্মাতা যেহেতু এতটা সময় পাননি, তাই আমাকে প্রস্তাবটি বাতিল করতে হয়েছিল। আমাকে যে চরিত্রগুলোর প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে সেগুলো আমার জন্য উপযুক্ত হতে হবে। আমি তখনই চলচ্চিত্রে কাজ করব যখন এসব কারণ আমার প্রত্যাশার সঙ্গে মেলে। সবাই খুব তাড়াহুড়ো করে কাজ করতে চায়। আমি তা পারব না। আমি একটা সিনেমা করব, যেন মৃত্যুর আগে বড় গলায় বলতে পারি-এটা আমার সিনেমা।’

নিশোর জন্ম টাঙ্গাইলে। কিন্তু ধূলোমাখা শৈশব সেখানে কাটাতে পারেননি। খুব ছোটবেলায় পরিবারের সঙ্গে পাড়ি জমান ঢাকায়। এরপর রাজধানীতেই কেটেছে তার স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় জীবন। শোবিজে কাজ করবেন, এমনটি কখনো ভাবেননি নিশো। ২০০০ সালে হঠাৎ একটি বুটিক হাউজের মডেল হওয়ার প্রস্তাব পান। এরপর বিভিন্ন পণ্যের মডেল হওয়ার পাশাপাশি র্যাম্পেও কাজ শুরু করেন। ২০০৩ সালে টেলিভিশন বিজ্ঞাপনে তিনি প্রথম কাজ করেন। এরপর দেশসেরা কয়েকজন নির্মাতার বিজ্ঞাপনে তাকে দেখা যায়। গাজী রাকায়েতের পরিচালনায় ‘ঘরছাড়া’ দিয়ে টিভি নাটকে তার অভিষেক। প্রথমে নাটকে সিরিয়াস ছিলেন না নিশো। তবে মানুষের একটা কথাই তার ক্যারিয়ারকে বদলে দিয়েছে। জেদেই নিশো আজ অন্যরকম এক অভিনেতায় পরিণত হয়েছেন। অপেক্ষার ফটোগ্রাফি, আঁধার ও আলো, বাদল দিনের প্রথম কদম ফুল, চলো না বৃষ্টিতে ভিজি, লোটাকম্বল, বিয়ে পাগল, আমি দেবদাস হতে চাই, একটি অনাকাঙ্ক্ষিত প্রেমের গল্প প্রভৃতি নাটকে অভিনয় দিয়ে নিজের জাত চিনিয়েছেন তিনি।

নাটকের ক্যারিয়ার নিয়ে নিশো বলেন, ‘অনেক সময় জেদেরও জয় হয়। এটা আমার ব্যক্তিজীবন থেকেই উপলব্ধি করেছি। আশপাশের লোকের একটা কথা আমাকে বদলে দিয়েছে। ক্যারিয়ারের শুরুতে মডেলিংয়ে বেশ মনোযোগী ছিলাম। এরপর অভিনয়ে আসি। যখন নাটকে কাজ শুরু করি তখন নাকি মানুষ বলত, মডেলরা ভালো অভিনেতা হতে পারে না। ব্যস, এ কথাই জেদ হয়ে চাপল মাথায়। এরপর হয়ে যাই অভিনয়ে মনোযোগী এক মানুষ।’

নিশো আজ তারকা অভিনেতা হয়েছেন। তারকাখ্যাতি কতটা, তার অভিনীত নাটক আর ইউটিউবে থাকা নাটকগুলোর নিচে মন্তব্য পড়লেই বোঝা যায়। ‘লোটাকম্বল’ নাটকে তার অসাধারণ অভিনয় এখনো দর্শকদের মনে গেঁথে আছে। নাটকটি ২০১৪ সালে গাজী টিভিতে প্রচার হয়েছিল। এ নাটকে তিনি প্রথমবার ভার্চুয়াল চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়ের লোটাকম্বল উপন্যাস অবলম্বনে নাটকটি নির্মাণ করেছেন গোলাম মুক্তাদির শান। নিশো বলেন, ‘লোটাকম্বল’ নাটকে চরিত্রটি ছিল অসাধারণ। এ ধরনের নাটকে প্রথম অভিনয় করেছিলাম। চরিত্রটির বাস্তব কোনো অস্তিত্ব নেই। কখনো হাসি, কখনো কেঁদে উঠি, আবার কখনো রেগে যাই। নাটকে কাজ করতে গিয়ে মিশ্র সব অভিব্যক্তি দিতে হয়েছে আমাকে। এ ধরনের নাটকে অভিনয় করা নিয়ে মনে এক ধরনের সংশয় থাকে। আমার ক্ষেত্রেও তেমনটা ছিল। কারণ, কাজটি সবার পছন্দসই হবে তো? কিন্তু নাটকটির দর্শক-সাড়া দেখে সব সংশয় দূর হয়ে গিয়েছিল। অনেকেই বলে থাকেন, নিশো ছোট পর্দায় বেশ জনপ্রিয়। এ অন্যরকম উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার মন্ত্র কি? দেখুন, আমি আমার কাজটি ঠিকঠাক করতে চাই। আমার ভক্তরা বলে যে, তারা আমার অভিনয়কে বাস্তব মনে করে। সম্ভবত, অন্য কারণটি হলো, আমি সর্বদা নানা চরিত্রে দর্শকের সামনে হাজির হওয়ার চেষ্টা করি। আমার মনে আছে, এক প্রবীণ শিল্পী একবার আমাকে বলেছিলেন, যদি আমি বিভিন্ন ধরনের চরিত্রে দর্শকদের সামনে হাজির হই তাহলে সহজে তারা আমার সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে সক্ষম হবে। এটি আমার অভিনয়ের ভিত্তিকে আরও শক্তিশালী করে তুলবে। সেই থেকে আমি ভালো গল্প ও চরিত্র নিয়ে কাজ করার চেষ্টা করেছি। এমনকি আমি নেতিবাচক ভূমিকায়ও অভিনয় করেছি। মূলধারার অনেক অভিনেতা নেতিবাচক ভূমিকা নিতে দ্বিধাবোধ করতে পারে। কিন্তু ভালো গল্পে যে কোনো চরিত্রে অভিনয়ে আমার আপত্তি নেই, বললেন নিশো।

নিশোর পুরো নাম আহমেদ ফজলে রাব্বী নিশো। নিশো নামের জনপ্রিয়তার কাছে এ নামটি অনেকেরই অজানা। পুরো নামের শব্দগুলোর আদ্যাক্ষর নিয়ে নিজেই ‘আফরান নিশো’ রেখেছেন। ব্যক্তিজীবনে সুখী মানুষ তিনি। স্ত্রী, সন্তান নির্ভানকে নিয়ে তার সুখের পৃথিবী। অভিনেতা ছাড়া আর কোনো পরিচয় নেই তার। আর নিজেও চান না অন্য কোনো পরিচয় তার থাকুক। কারণ শুধু অভিনয়কেই ভালোবাসেন তিনি। এই ভালোবাসা নিয়েই যেতে চান বহুদূর।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads