• বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ১ জৈষ্ঠ ১৪২৯

বিশ্ব

শেষ পর্যন্ত চলবে লড়াই

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত ০৪ মার্চ ২০২২

এবার শেষ পর্যন্ত লড়াইয়ের হুংকার দিলো রাশিয়া। কারণ তারা মনে করছে, কিছু বিদেশি নেতা রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তাই এমন কিছু হলে মস্কো লড়াই চালিয়ে যাবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ। মস্কোয় এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি আবারো বলেন, এখন পর্যন্ত রাশিয়ার পারমাণবিক যুদ্ধের কোনো চিন্তা নেই।

এদিকে, এক প্রতিবেদনে বিবিসি জানায়, রাশিয়ার সর্বাত্মক হামলার মুখে ইতিমধ্যে ইউক্রেন ছেড়ে পালিয়ে গেছেন ১০ লাখ শরণার্থী। মাত্র এক সপ্তাহে বিপুল সংখ্যক এসব মানুষ ইউক্রেনের প্রতিবেশী দেশগুলোতে পালিয়ে যায়।

আর অভিযানের সপ্তম দিনে এক ভিডিও বার্তায় ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেন, যেখানেই রুশ সেনা যাবে, সেখানেই তাদের নির্মূল করা হবে। তার দাবি, গত এক সপ্তাহে ৯ হাজারের মতো রুশ সেনা নিহত হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ খেরসান শহরের নিয়ন্ত্রণ হারানোর পর পরই বক্তব্য রাখেন ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট।

ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, দখলদাররা ইউক্রেনীয়দের কাছ থেকে শুধু একটি জিনিস পাবে, তা হচ্ছে প্রতিরোধ। তীব্র প্রতিরোধ। এমন প্রতিরোধ যে তারা সারা জীবন মনে রাখবে। তারা মনে রাখবে দেশপ্রেমের যুদ্ধ কী। এর জবাবে রুশ রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে লাভরভ ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে একজন ‘জাতিগত ইহুদি’ এবং ‘তিনি এমন একটি সমাজের নেতৃত্ব দিচ্ছেন, যেখানে নাৎসিবাদ লালন করা হয়’ বলে অভিযোগ করেন। তবে এসব অভিযোগের ব্যাপারে কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেননি তিনি।

তিনি বলেছেন, ইউক্রেন সংকটের একটি সমাধান পাওয়া যাবে এবং এ বিষয়ে তার কোনো সন্দেহ নেই। ইউক্রেনীয় এবং রুশ কর্মকর্তাদের মধ্যে নতুন করে আলোচনা শুরু হতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

তবে পশ্চিমাদের সাথে আলোচনা অবশ্যই পারস্পরিক সম্মানের ভিত্তিতে হতে হবে বলে জানিয়েছেন সের্গেই লাভরভ। পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর বিরুদ্ধে আধিপত্যবাদ টিকিয়ে রাখার অভিযোগও করেছেন তিনি। বলেছেন, অনেক সদিচ্ছা থাকলেও কাউকে নিজের স্বার্থ ক্ষুণ্ন করতে দিতে পারে না রাশিয়া। তিনি হুশিয়ারি দেন, রাশিয়ার জন্য হুমকি এমন কোনো স্থাপনা ইউক্রেনকে রাখতে দেবে না মস্কো। ইউক্রেনের কাছ থেকে উদ্ভূত সামরিক হুমকিও মস্কো সহ্য করবে না। ইউক্রেনের ওপর রাশিয়ার অধিকার আছে বলেও বিশ্বাস করেন তিনি।

কোনো ধরনের প্রমাণ সরবরাহ না করে রাশিয়ার এই পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ইউক্রেনের কেমিক্যাল ও বায়োলজিক্যাল ল্যাবরেটরির নিয়ন্ত্রণ হারানোর আশঙ্কায় যুক্তরাষ্ট্র উদ্বিগ্ন বলে রাশিয়ার কাছে তথ্য আছে। এছাড়া ব্রিটেন সেখানে সামরিক ঘাঁটি গড়ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

এদিকে, রাজধানী কিয়েভ ও অন্যান্য শহরে গতকাল বৃহস্পতিবারও একাধিক শক্তিশালী বিস্ফোরণের খবর পাওয়া গেছে প্রত্যক্ষদর্শীদের ধারণ করা ভিডিও ফুটেজের বরাতে বিবিসি জানায়, বিস্ফোরণের বারবার কিয়েভের আকাশ আলোকিত হয়ে ওঠে। তবে হামলার লক্ষ্য কী ছিল, কিংবা এতে কতজন হতাহত হয়েছেন, তা জানা যায়নি।

কিয়েভের কেন্দ্রস্থলের একটি রেলস্টেশনের কাছে বড় ধরনের একটি বিস্ফোরণের কয়েক ঘণ্টা পরই এসব বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। রাশিয়ার সেনাদের গোলাবর্ষণ থেকে রক্ষা পেতে রেলস্টেশনটির কাছে কিয়েভের শত শত মানুষ আশ্রয় নিয়েছিলেন। স্টেশনের কাছে শক্তিশালী বিস্ফোরণের পর তাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

ইউক্রেনের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক উপদেষ্টা বলেন, আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা দ্বারা বাধা দেওয়ার পরই একটি ক্ষেপণাস্ত্রের ধ্বংসাবশেষ পড়ে যাওয়ার কারণে বেশ কিছু অবকাঠামোর ক্ষতি হয়েছে। কিয়েভের মেয়র ভিতালি ক্লিতিশ্চকো বলেছেন, বিস্ফোরণের ঘটনায় কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।

এদিকে শত শত সাঁজোয়া যান নিয়ে কিয়েভ অভিমুখে অগ্রসর হওয়া ৪০ মাইল দীর্ঘ রুশ সেনাদের একটি বহর এখন পথে থমকে রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগের মুখপাত্র জন কিরবি বলেছেন আমাদের ধারণা অনুযায়ী, গত ২৪ থেকে ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে তারা তেমন কোনো অগ্রগতি করতে পারেনি।’

জন কিরবি বলেন, রাশিয়ার সেনারা পুনরায় দলবদ্ধ হওয়া ও কতটা অগ্রগতি হওয়ার কথা ছিল, আর কতটা অগ্রগতি করতে হবে, তা মূল্যায়নের জন্য আটকে গেছে বলে মনে হচ্ছে। এ ছাড়া পর্যাপ্ত সামরিক সরঞ্জাম ও দীর্ঘ মেয়াদে যুদ্ধ করার জন্য চ্যালেঞ্জ এবং ইউক্রেনের পক্ষ থেকে প্রতিরোধ গড়ে ওঠার বিষয়টি ভেবে দেখছে।

যাচাই করা হয়নি এমন কিছু প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে বিবিসি আরও জানিয়েছে, রাশিয়ার সেনাদের খাবার ও জ্বালানি তেল ফুরিয়ে যাওয়ার দিকে। ইউক্রেনের যেসব এলাকার নিয়ন্ত্রণ রুশ সেনাদের হাতে, সেসব এলাকার কর্মকর্তাদের দাবি, রুশ সেনাদের খাবার মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে। সুপার মার্কেটে লুট চালাচ্ছেন তারা।

দুই দিন ধরেই এই রুশ সাঁজোয়া যানের বহরের কথা শোনা যাচ্ছে। সর্বশেষ জানা যাচ্ছিল, এই বহরটি কিয়েভের মাত্র ১৫ মাইল উত্তর-পশ্চিমে রয়েছে। কিন্তু এখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, রুশ সাঁজোয়া যানের ৪০ মাইল দীর্ঘ এই বহর কিয়েভ যাওয়ার পথে কোনোভাবে আটকে গেছে।

অন্যদিকে, রুশ দখলে চলে যাওয়া ইউক্রেনের গুরুত্বপূর্ণ বন্দরনগরী খারসনের মেয়র ইগর কয়খায়ভে নাগরিকদের গুলি না করার আকুতি জানিয়েছেন। একই সঙ্গে রুশ সেনাদের আরোপ করা বিধিনিষেধ মেনে চলারও নির্দেশনা দিয়েছেন।

গত বুধবার রাতে শহরটি দখলে নেয় রুশ সেনারা। মেয়র ইগর বলেন, রুশ বাহিনী শহরের একটি কাউন্সিল সভায় হামলা চালিয়েছে। তারা শহরে কারফিউ দিয়েছে। নাগরিকদের আহ্বান জানাচ্ছি, আপনারা তাদের নির্দেশনাগুলো মেনে চলেন। কৃষ্ণ সাগরঘেঁষা শহরটিতে তিন লাখ মানুষের বাস। শহরটির অবস্থান মস্কোর দখলকৃত ক্রিমিয়ার কাছে।

পশ্চিমা সংবাদমাধ্যমগুলোয় বলা হচ্ছে, খারসনের দখল পেতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়েছে পুতিন বাহিনী। তবে ঠিক কত রুশ সেনা হতাহত হয়েছে, তা জানা যায়নি। প্রতিরোধ লড়াইয়ে বেসামরিক নাগরিকসহ অন্তত ৩০০ ইউক্রেনীয় নিহত হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

সমর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খারসনের পর রুশ বাহিনীর পরবর্তী লক্ষ্য হতে যাচ্ছে আরেক বন্দরনগরী ওডেসা। সেখানে ইউক্রেনের প্রধান বন্দর ও নৌঘাঁটি রয়েছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads