• রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জৈষ্ঠ ১৪২৯
বিশ্বে আক্রান্ত দেড় লাখ ছাড়িয়েছে

সংগৃহীত ছবি

বিদেশ

করোনা ভাইরাস

বিশ্বে আক্রান্ত দেড় লাখ ছাড়িয়েছে

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত ১৬ মার্চ ২০২০

বিশ্বজুড়ে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৫৬ হাজার ৫৩৬ জনে। এর মধ্যে পাঁচ হাজার ৮৩৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। চিকিৎসা গ্রহণের পর সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৭৫ হাজার ৯২২ জন। উৎপত্তিস্থল চীনে সরকারি হিসাবেই এ পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ৮০ হাজার ৮২৪। এর মধ্যে তিন হাজার ১৯৯ জনের মৃত্যুর কথা স্বীকার করেছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। চিকিৎসা গ্রহণের পর সুস্থ হয়ে উঠেছে ৬৬ হাজার ৯১১ জন। খবর : বিবিসি, আলজাজিরা ও সিএনএন।

ইতালিতে আক্রান্তের সংখ্যা ২১ হাজার ১৫৭। এর মধ্যে এক হাজার ৪৪১ জনের মৃত্যু হয়েছে। সুস্থ হয়ে উঠেছেন এক হাজার ৯৬৬ জন। ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর তালিকায় উপরের সারিতে থাকা অন্য দেশগুলোর মধ্যে ইরান, দক্ষিণ কোরিয়া, স্পেন, জার্মানি, ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্র, সুইজারল্যান্ড ও ব্রিটেনের নাম উল্লেখযোগ্য।

ইতোমধ্যেই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ইতালিতে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে প্রায় সব দোকান। ভারতও প্রায় সব ধরনের ভিসা বন্ধ করেছে। টুইটার তার কর্মীদের জানিয়ে দিয়েছে, অফিসে না এসে বাড়ি থেকে কাজ করতে। পণ্য ও মানুষের চলাচলে এত রকম নিষেধাজ্ঞা জারি হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বাণিজ্য। আশঙ্কা করা হচ্ছে, করোনা মহামারীর জের ধরে শিগগিরই বিশ্ব অর্থনীতিতে ঘনিয়ে আসতে পারে বিপর্যয়। শুরু হতে পারে ভয়াবহ মন্দা।

করোনার কারণে বেশ কিছু শহর ও এলাকাকে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। বাতিল করা হয়েছে বিভিন্ন এয়ারলাইনস কোম্পানির বিমান চলাচল। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বিভিন্ন স্পোর্টস ইভেন্ট। দোকানে ভিড় করে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সংগ্রহ করছেন। তাদের আশঙ্কা, কিছুদিন পর দোকানপাট একেবারে বন্ধ হয়ে যাবে। ইয়ারদেনি রিসার্চ ইনকরপোরেটের প্রতিষ্ঠাতা এড ইয়ারদানি লিখেছেন, করোনা মহামারীর জেরে শিগগিরই শুরু হতে পারে অর্থনৈতিক মন্দা।

আক্রান্ত বিশ্বনেতা : মহামারী রূপ নেওয়া করোনা ভাইরাসে বিশ্বজুড়ে রাজনীতিবিদ ও তাদের পরিবারের সদস্যরাও আক্রান্ত হচ্ছেন। ফলে অনেক রাষ্ট্রনেতা নিজেরা করোনা আক্রান্ত কি-না তা জানতে পরীক্ষা করছেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শরীরে ভাইরাসটি পাওয়া যায়নি। তবে মিয়ামির মেয়র ফ্রান্সিস সুয়ারেজ ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্ত ব্যক্তিদের সংস্পর্শে আসার পরে নয়জন আইনপ্রণেতাও কোয়ারেন্টাইনে আছেন।

কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর স্ত্রী সোফি ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। তাকে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন রাখা হয়েছে। কোয়ারেন্টাইন থেকে ট্রুডো দায়িত্ব পালন করছেন। কোনো লক্ষণ না দেখা যাওয়ায় ভাইরাসটির জন্য তাকে পরীক্ষা করা হয়নি। ফ্রান্সে চারজন রাজনীতিবিদ আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে সংসদ সদস্য, পার্লামেন্টের এক কর্মকর্তা, সংস্কৃতিমন্ত্রী এবং প্রতিবেশ প্রতিমন্ত্রী রয়েছেন।

স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজের স্ত্রী আক্রান্ত। তবে তারা দুজনই সুস্থ আছেন এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা অনুসরণ করছেন। যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাওয়া ব্রাজিলের একটি প্রতিনিধি দলের তিন সদস্য আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছে। এরা হলেন- ওয়াশিংটনে ব্রাজিলের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স, একজন সিনেটর ও প্রেসিডেন্টের প্রেসসচিব।

ব্রিটেনের স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ভাইরাসটিতে আক্রান্ত। কয়েকদিন আগেই প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন তার সঙ্গে বৈঠক করেন। তবে নিজের মধ্যে কোনো লক্ষণ নেই বলে এখনই পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবেন না বলে জানিয়েছেন তিনি। সংক্রমিত এক রোগীর সংস্পর্শে আসার পর ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট রডরিগো দুতার্তেকে পরীক্ষা করে ফলাফল নেতিবাচক এসেছে।

ইরান সরকারের আট শতাংশ সদস্য ভাইরাসটিতে আক্রান্ত। ২৯০ সাংসদের মধ্যে ২৩ জনের শরীরে ভাইরাস মিলেছে। দুই সাংসদ আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। ইরানের বেশ কয়েকজন ভাইস প্রেসিডেন্টও আক্রান্ত। অস্ট্রেলিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর শরীরে ভাইরাস পাওয়া গেছে। এক সপ্তাহ আগে যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাটর্নি জেনারেল উইলিয়াম বার, হোয়াইট হাউজের জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা ইভাঙ্কা ট্রাম্প ও হোয়াইট হাউজের কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে তার বৈঠক হয়। এদিকে একদিনের চীন সফর থেকে ফিরে আসার পর মঙ্গোলিয়ার রাষ্ট্রপতি খালতমাজিন বাতুলগাসহ অন্য কর্মকর্তাদের দুই সপ্তাহের কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। যদিও তাদের পরীক্ষায় নেতিবাচক ফল এসেছে।

স্বাভাবিক হচ্ছে চীন : করোনার প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় প্রায় দুই মাস অবরুদ্ধ ছিল চীন। নতুন করে আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার কমে আসায় ধীরে ধীরে জীবনযাপন স্বাভাবিক হচ্ছে দেশটিতে। রোববার সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট এ তথ্য জানায়। নতুন করে আক্রান্ত হওয়ার হার কমতে থাকায় অবরুদ্ধ অবস্থার অবসান ঘটছে দেশটিতে। কর্মীরা কাজে ফিরতে শুরু করেছেন। কারখানা, স্কুল, জনসমাগম এবং পর্যটন স্থানগুলো খুলতে শুরু করেছে। আক্রান্ত কমে আসায় স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে পারছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। ভ্রমণের ওপর কঠোর বিধিনিষেধ শিথিল করায় হুবেই প্রদেশের অনেক বাসিন্দা, যারা অন্য অঞ্চলে অবস্থান করছিলেন, তারা ঘরে ফিরতে পারবেন।

এপ্রিলে আসছে ভ্যাকসিন : চীনের সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন প্রস্তুত। চিকিৎসার প্রয়োজনে আগামী এপ্রিলের মধ্যেই তা বাজারে আনা হবে। সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের বরাতে এ খবর জানিয়েছে দ্য নিউইয়র্ক পোস্ট। এর আগে, চীনের আটটি ইনস্টিটিউট পাঁচ দফা চেষ্টার মাধ্যমে কভিড-১৯ রোগ প্রতিরোধে ভ্যাকসিন উদ্ভাবনে সক্ষম হয় বলে খবর বের হয়। চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনের সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ডেভেলপমেন্ট সেন্টারের পরিচালক ঝেং ঝংওয়ে জানিয়েছেন, জরুরি অবস্থার মধ্যেই স্বাস্থ্যগত গবেষণায় এ ভ্যাকসিন সংযুক্ত হবে। তারপর ১২ থেকে ১৮ মাসের মধ্যে ভ্যাকসিনটি মানবদেহের জন্য উপযোগী কি না, তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads