• মঙ্গলবার, ৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪২৯
দুর্নীতি নয়, জনগণের সেবা করতে এসেছি

সোমবার রাতে রাষ্ট্রপতি ভাষণ সম্পর্কে আনীত ধন্যবাদ প্রস্তাব এবং একাদশ জাতীয় সংসদের সমাপনী বক্তব্য রাখছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

ছবি: পিআইডি

বাংলাদেশ

সংসদে শেখ হাসিনা

দুর্নীতি নয়, জনগণের সেবা করতে এসেছি

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১২ মার্চ ২০১৯

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ বিশ্বব্যাংক এনেছিল, প্রমাণ করতে পারেনি। আমরা দুর্নীতি করতে আসিনি, জনগণের সেবা করতে এসেছি। দুর্নীতি অনেক কমিয়ে আনতে পেরেছি। চেষ্টা করে যাচ্ছি দুর্নীতি দূর করে উন্নয়ন করতে। দুর্নীতি যথেষ্ট কমাতে পেরেছি বলেই এত উন্নয়ন-সমৃদ্ধি দৃশ্যমান হয়েছে। মানুষের মধ্যে দুর্নীতির বিরুদ্ধে চেতনা সৃষ্টি করছি। কারণ অসৎ উপায়ে বিরিয়ানি খাওয়ার চেয়ে সৎভাবে বসবাস করে নুন খেলেও তৃপ্তি।

স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সোমবার রাতে রাষ্ট্রপতি ভাষণ সম্পর্কে আনীত ধন্যবাদ প্রস্তাব এবং একাদশ জাতীয় সংসদের সমাপনী বক্তব্যে অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। এ সময় তিনি বলেন, সৌদি আরবের সঙ্গে কোনো চুক্তি হয়নি, সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। অন্য কোনো দেশের যুদ্ধ হলে সেখানে আমাদের সেনাবাহিনী সেই যুদ্ধে অংশগ্রহণ করবে না। তবে পবিত্র মক্কা ও মদিনা যদি আক্রান্ত হয় তবে তার নিরাপত্তা রক্ষায় আমাদের সেনাবাহিনী অবশ্যই কাজ করবে। এখানে ভুল বোঝাবুঝির কোনো অবকাশ নেই। তিনি বলেন, অনেক দেশের সঙ্গে আমাদের সমঝোতা স্মারক রয়েছে। রাশিয়া, চীন, ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভিয়েতনামসহ বিশ্বের অনেক দেশের সঙ্গে প্রতিরক্ষা চুক্তি আছে। বিশ্ব গ্লোবাল ভিলেজ। স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বকে রক্ষা করতে হলে সশস্ত্র বাহিনীকে শক্তিশালী করতে হবে। আমরা সশস্ত্র বাহিনীকে আধুনিকভাবে গড়ে তুলছি। ফোর্সেস গোল প্রণয়ন করে তা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। যুদ্ধবিধ্বস্ত কুয়েতকে গড়ে তুলতে আমাদের সশস্ত্র বাহিনী কাজ করে যাচ্ছে। সৌদি আরবের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক করেছি অবকাঠামো নির্মাণ, কারিগরি সহায়তায়, দেশটির স্থল সীমানায় মাইন অপসারণের জন্য। কারণ তারা আমাদের সঙ্গে সহযোগিতা চেয়েছিলেন। মিলিটারি ইঞ্জিনিয়ারিং অন দি ফিল্ড অব দ্য কনস্ট্রাকশন শীর্ষক এ সমাঝোতা হয়েছে।

কওমি মাদরাসা প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, এ ভূখণ্ডে শিক্ষা শুরু কওমি মাদরাসা থেকে। দেশে ২০ হাজারের মতো মাদরাসা রয়েছে। ২০ লাখের মতো শিক্ষার্থী রয়েছে। এতিম, গরিব, দরিদ্র ঘরের ছেলেমেয়েরা সেখানে পড়তে যায়। পড়াশোনার একটা জায়গা পাচ্ছে। মাদরাসাকে আমরা অস্বীকার করতে পারি না, সমাজের একটি অংশ। কাউকে আমরা বাদ দিতে পারি না। দীর্ঘদিন কওমি মাদরাসা পাঁচটি বোর্ডে বিভক্ত ছিল। মাদরাসা থেকে শিক্ষা নিয়ে কোথাও চাকরি করতে পারত না। এরা তো দেশেরই সন্তান, তাদেরকে আমরা ফেলে দেব। কারিকুলাম তৈরি করে কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয় সেজন্য উদ্যোগ নিই। তিনি বলেন, দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টার ফলে কওমি মাদরাসার নেতাদের সমঝোতায় নিয়ে আসি, দেওবন্দের ক্যারিকুলাম তারা গ্রহণ করেছে। দাওরায়ে হাদিসকে আমরা মাস্টার্সের স্বীকৃতি দিয়েছি। ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি পার্থিব শিক্ষার ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। মাদরাসা জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদের কারখানা এ অভিযোগের সঙ্গে আমি একমত নই। হলি আর্টিজানের ঘটনায় দেখা গেছে, ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশোনা করা উচ্চবিত্তের সন্তান জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়েছে। সবকিছু থাকার পরও তারা জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়েছে। শুধু মাদরাসাকে দোষারোপ করলে চলবে না। সংসদে সর্বসম্মতক্রমে আইন পাস করেছি, এ নিয়ে আর কোনো কথা বা প্রশ্ন তো থাকতে পারে না।

বিএনপি তথা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের সংসদে এসে কথা বলার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একাদশ জাতীয় নির্বাচনে নৌকার বিজয় জনগণের স্বতস্ফূর্ত ভোটের রায়। জঙ্গি-সন্ত্রাস-মাদক ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ায় একাদশ জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগকেই বেছে নিয়েছে দেশের জনগণ। জনগণ আর জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাস-মাদক-অগ্নিসন্ত্রাস দেখতে চায় না, নির্বাচনে তাই প্রমাণ হয়েছে। তাই বিএনপি তথা ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচিত নেতাদের বলব, জনগণের ভোটের প্রতি সম্মান দেখিয়ে সংসদে আসুন, যত কথা বলার আছে বলুন, আমরা কোনো বাধা দেব না।

বিএনপিকে সংসদে আসার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন। জনগণের ভোটের প্রতি সম্মান জানিয়ে সংসদে এসে যা বলার কথা বলুন, আমরা কোনো বাধা দেব না। সুলতান মোহাম্মদ মনসুরকে শপথ নিয়ে সংসদে আসার জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যদের অনেকে সেনাপ্রিয় বলেন। দেশের এমন কিছু লোক আছে দেশে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি আসলেই তাদের সুবিধা হয়। তারা কোনো উন্নয়ন চোখে দেখে না। তবে তারা কে কী বলল তাতে কেয়ার করি না, আমি কেয়ার করি দেশের জনগণকে। তাদের মতো অত জ্ঞানী-গুণী না হলে দেশকে আমরা উন্নয়ন করতে পারি, তা প্রমাণ করেছি। এখন ভিক্ষা দেওয়ার কোনো লোক পাওয়া যায় না।  প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। বাংলাদেশ আমরা ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত দেশ হিসেবে গড়ে তুলব। এ বাংলাদেশ হবে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে শান্তিপূর্ণ দেশ। ২০২০ সালে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী, ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করব মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ। আর ২১০০ সালে ডেল্টা প্ল্যান বাস্তবায়নের মাধ্যমে বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত দেশগুলোর একটি হবে বাংলাদেশ।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads