ছুটির গুজবে দেশের পুঁজিবাজারে বড় দরপতনের পেছনে কোনো কারসাজির তথ্য না পেলেও এ ধরনের কোনো কিছু চিহ্নিত করা গেলে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। তা ছাড়া করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে ব্যাংক খোলা থাকলে পুঁজিবাজারও খোলা রাখার কথা বলেছের পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার কমিশনার শামসুদ্দিন আহমেদ। দেশের করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়তে থাকার প্রেক্ষাপটে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হচ্ছে বলে গুজবের মধ্যে গত রোববার শেয়ার বিক্রির হিড়িকে ব্যাপক দরপতন হয় পুঁজিবাজারে।
এদিন দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স এক দশমিক ৫৬ শতাংশ বা প্রায় ৮৫ পয়েন্ট কমে নেমে এসেছে ৫৩৪৯ পয়েন্টে।
চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সূচক সিএএসপিআই কমেছে এক দশমিক ৬৭ শতাংশ বা প্রায় ২৬৩ পয়েন্ট। এতে সিএএসপিআই দাঁড়িয়েছে ১৫৪৮৬ পয়েন্টে।
বৃহস্পতিবারও দুই পুঁজিবাজারে বড় পতন হয়। ওইদিন ঢাকার পুঁজিবাজারের ডিএসইএক্স সূচক ১ দশমিক ৪৮ শতাংশ বা ৮১ পয়েন্ট দাঁড়ায় ৫৪৩৪ পয়েন্টে। সেদিনও পুঁজিবাজার বন্ধ হয়ে যাওয়ার গুজব ছিল। তবে বিএসইসি থেকে জানানো হয়েছিল ব্যাংক খোলা থাকলে পুঁজিবাজারও খোলা থাকবে।
এমন পরিস্থিতিতে গত রোববার বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের শীর্ষ ব্রোকারদের সঙ্গে আলোচনায় বসে বিএসইসি। আলোচনা শেষে বিএসইসি কমিশনার শামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা আলোচনা করেছি যে বিষয় নিয়ে তা হল, গত দুদিন ধরে আমরা দেখেছি কিছু অপ্রয়োজনীয় গুজব মার্কেটে আছে। সেগুলো কোনোটিই সঠিক নয়। আমরা বলতে চাই, যতদিন পর্যন্ত দেশের আর্থিক ব্যবস্থা খোলা থাকবে, ব্যাংকিং ব্যবস্থা খোলা থাকবে, পুঁজিবাজারও খোলা থাকবে। পুঁজিবাজারের সমস্ত কার্যক্রম চলবে, সে ক্ষেত্রে কোনো ব্যত্যয় ঘটবে না।
গত কয়েক দিন ধরে যে পুঁজিবাজারে যে বড় ধরনের পতন হচ্ছে এর পেছনে কোনো কারসাজি আছে কি না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমরা বিষয়টি ইভ্যালুয়েট করার চেষ্টা করছি। এ মুহূর্তে এ বিষয়গুলো আমরা পর্যালোচনা করছি। পুঁজিবাজারে উত্থান-পতন থাকাটাই স্বাভাবিক। কখনো পুঁজিবাজার টানা বাড়বে বা কমবে এটা হতে পারে না। পুঁজিবাজারের প্রতিটি কার্যক্রমই এ রকম পরিবর্তনশীল। সেটা যাতে সঠিকভাবে পরিবর্তন হয় সে বিষয়ে আমরা লক্ষ রাখব। কারসাজি চক্র এখনো সক্রিয় আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ রকম কোনো তথ্য-উপাত্ত কিন্তু আমাদের কাছে নেই। যদি থেকে থাকে এবং আমরা চিহ্নিত করতে পারি তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।
বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সভাপতি ছায়েদুর রহমান বলেন, সকালে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হচ্ছে বলে গুজব ছড়িয়ে পড়লে অনেকে ভয় পেয়ে শেয়ার বিক্রি করে দেয়। আমাদের বিএসইসির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে ব্যাংক খোলা থাকলে পুঁজিবাজার খোলা থাকবে।
একই কথা বলেন ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) সভাপতি হয়েছেন শরীফ আনোয়ার হোসাইন। বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, আমরা অলোচনায় টপ ব্রোকারদের বলেছি তাদের পক্ষ থেকে বিনিয়োগ বাড়াতে। উনারা আমাদের বলেছেন, ডিলারের পক্ষ থেকে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ বাড়ানোর চেষ্টা করবেন। এ ছাড়া আমরা মার্চেন্ট ব্যাংক এবং ব্রোকারেজের নেতাদের বলেছি তারা যেন বিনিয়োগকারীদের জানিয়ে দেন, এপ্রিল মাস থেকে পুঁজিবাজারে আইপিওতে বিনিয়োগ করতে হলে সেকেন্ডারি মার্কেটে ২০ হাজার টাকা বিনিয়োগ থাকতে হবে। ২০ হাজার টাকা করে বিনিয়োগ আসলে সেকেন্ডারি মার্কেটে প্রায় দুই হাজার কোটি বিনিয়োগ আসতে পারে।