• রবিবার, ৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪২৯

সিটিং সার্ভিস বলা হলেও এসব পরিবহনে যাত্রীদের ভোগান্তির শেষ নেই

আলোকচিত্রী মিজানুর রহমান

যোগাযোগ

গণপরিবহনে ভাড়া নৈরাজ্য

যাত্রীদের রোষানল দমাতে রাখা হচ্ছে ‘মস্তান’ বাহিনী

  • এম এ বাবর
  • প্রকাশিত ০৮ মে ২০১৮

গণপরিবহনের নৈরাজ্যে দিন দিন বিষিয়ে উঠছে ঢাকার জনজীবন। একদিকে অতিরিক্ত ভাড়া, অন্যদিকে অস্বাভাবিক যাত্রী বহনে আরোহীদের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। এ নিয়ে বাসের চালক ও কন্ডাক্টরদের সঙ্গে অনেক যাত্রীর বিবাদ লেগে যায়। আর এ বিবাদ দমনে এলাকাভিত্তিক মস্তান বাহিনী ব্যবহার করছে পরিবহন কোম্পানিগুলো।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিআরটিএ অনুমোদিত রাজধানীর ৩৫৯টি বাসরুট রয়েছে। এসব রুটে বর্তমানে ৫ হাজার ১৪৩টি বাস ও ২ হাজার ৮৩৩টি মিনিবাস, সিটি বাস চলাচল করছে। যাত্রীকল্যাণ সমিতির তথ্য মতে, এর মধ্যে প্রায় ৭০ শতাংশ গাড়ি সিটিং সার্ভিস নামে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে। ভাঙাচোরা ও জোড়াতালির গাড়ি দিয়ে পরিচালিত এ সিটিং সার্ভিসে সর্বনিম্ন ভাড়া ১০ থেকে ২০ টাকা নেওয়া হয়। অথচ সরকার নির্ধারিত সর্বনিম্ন ভাড়া মিনিবাসে পাঁচ টাকা ও বড় বাসে সাত টাকা। অতিরিক্ত ভাড়া আদায় ও নৈরাজ্যের কারণে যাত্রীদের রোষানল প্রতিরোধে বাস কোম্পানিগুলো চলাচল রুটের চার-পাঁচটি পয়েন্টে মস্তান বাহিনী নিয়োগ দিয়ে রেখেছে। তারা দলে ৫ থেকে ১০ জন পর্যন্ত রয়েছে। পথিমধ্যে ঝামেলায় পড়লে বাসমালিক বা চালক-কন্ডাক্টরের ফোন পেলে স্পটের টিম লিডারকে কল দেওয়া হয়। পরে নিকটস্থ মস্তান বাহিনীর টিম লিডার গিয়ে অনেক ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট যাত্রীর সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন।

অনুসন্ধানের প্রাপ্ত তথ্য মতে, গাজীপুর বা টঙ্গী থেকে গুলিস্তান বা সায়েদাবাদ পর্যন্ত কোম্পানিভেদে চার-পাঁচটি স্পটে নিজস্ব মস্তান বাহিনী থাকে। স্পটগুলো হলো টঙ্গী, খিলক্ষেত বা উত্তরা, বাড্ডা বা রামপুরা, মালিবাগ ও সায়েদাবাদ। একইভাবে মিরপুর-গুলিস্তান ও মিরপুর-রামপুরা রুটে এ বাহিনী রয়েছে- মিরপুর, আগারগাঁও, শাহবাগ, মহাখালী, বাড্ডা, গুলিস্তান এবং রামপুরায়।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, সরকারের অসহযোগিতার কারণে রাজধানীতে সিটিং সার্ভিসের অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধ না হয়ে উল্টো নিয়মে পরিণত হয়েছে। যাত্রী শায়েস্তা করতে এখন মিরপুর, গুলিস্তান, সায়েদাবাদ ও গাজীপুর রুটের অধিকাংশ বাস কোম্পানি মস্তান নিয়োগ দিয়ে রেখেছেন। ফলে যাত্রীদের কেউ এসব নৈরাজ্য নিয়ে কথা বললে নাজেহাল হচ্ছেন। বাড়তি ভাড়া নিয়ে কোনো প্রশ্ন তুললে তারা যাত্রীদের অপদস্থ করছেন এবং গায়ে হাত তুলছেন। এমনকি অতিরিক্ত ভাড়ার প্রতিবাদ করায় একাত্তর টিভির বার্তা প্রযোজক আতিক রহমান ও দৈনিক সমকালের প্রতিবেদক ইন্দজিৎ সরকার বাসকর্মীদের হাতে মিরপুরে লাঞ্ছিত হয়েছিলেন।

নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, গণপরিবহনে নৈরাজ্য বন্ধে সরকারের কোনো উদ্যোগই দেখা যাচ্ছে না। সড়ক পরিবহনমন্ত্রী মাঝে-মধ্যে কিছু আশ্বাস দিলেও তা শুধু মুখের কথায় সীমাবদ্ধ থেকে যায়। যার ফলে গণপরিবহন মালিকরা এখন মস্তান বাহিনী দিয়ে যাত্রীদের ওপর চড়াও হচ্ছেন।

গণপরিহনে নৈরাজ্য বন্ধে এবং সিটিং সার্ভিস বাতিল করে অতিরিক্ত ভাড়ার বিরুদ্ধে সরকারকে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ জানান মোজাম্মেল হক ও ইলিয়াস কাঞ্চন।

অন্যদিকে ‘মস্তান’ বাহিনীর অভিযোগ অস্বীকার করে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক ও ‘বিকল্প অটো’র মালিক মাহবুবুর রহমান বলেন, যাত্রী শায়েস্তা করতে কোনো মস্তান রাখা হয় না। পরিবহন মালিকরাই তো রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় বসবাস করেন। কোনো ঝামেলা হলে নিকটস্থ মালিকদের নিজস্ব লোকজনই অনেক সময় তা মীমাংসা করে দেন। এটাকে মস্তান বাহিনী বলা যায় না বলে দাবি করেন এ পরিবহন নেতা।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads