দেশের দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নে ’৮০ ও ’৯০-এর দশকে ছোট-বড় বিভিন্ন খালের ওপর নির্মাণ করা হয় ৬ হাজারের মতো আয়রন ব্রিজ। ৩০ থেকে ৪০ বছর আগে নির্মিত এসব আয়রন ব্রিজ গ্রামীণ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে আসছে। কালের বিবর্তনে এসব ব্রিজ প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ নানা কারণে জরাজীর্ণ এবং ভেঙে যাওয়ায় ব্যাহত হচ্ছে যোগাযোগব্যবস্থা। দেশের দক্ষিণাঞ্চল-বিশেষ করে বরিশাল বিভাগের ১০ জেলায় নির্মিত স্বল্প ব্যয়ের এসব আয়রন ব্রিজ পুনর্নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) অধীনে ব্রিজগুলো ভেঙে আরসিসি গার্ডার ব্রিজ ও উন্নত মানের আয়রন ব্রিজ পুনর্নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে এলজিইডির অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (পরিকল্পনা, ডিজাইন ও গবেষণা ইউনিট) হাবিবুল আজিজ বলেন, দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ৬ হাজার আয়রন ব্রিজ ’৮০ ও ’৯০ দশকে নির্মিত। এগুলো পুনর্নির্মাণ জরুরি। আয়রন ব্রিজগুলো পুনর্নির্মাণে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনীতি আরো বেগবান হবে। প্রাথমিকভাবে আমরা একটা প্রকল্প হাতে নিয়েছি। পর্যায়ক্রমে ব্রিজগুলো পুনর্নির্মাণ করা হবে। দেশের দক্ষিণ অঞ্চলে আয়রন ব্রিজ পুনর্নির্মাণ/পুনর্বাসন প্রকল্পের অধীনে প্রাথমিকভাবে ১ হাজার ৮৩৫ কোটি ৭০ লাখ টাকা ব্যয়ে ১ হাজার ৯৬১টি আয়রন ব্রিজ নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ২০১৮ সালের জুলাইয়ে গৃহীত প্রকল্পটি ২০২৩ সাল নাগাদ বাস্তবায়নের মেয়াদ নির্ধারণ করা হয়। এলজিইডি ও পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, নতুন করে প্রকল্পটির ব্যয় ও সময় বৃদ্ধি চেয়ে সংশোধন প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে দেওয়া হয়েছে। আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটির প্রতিবেদনের আলোকে ইতোপূর্বে দাখিল করা সংশোধন প্রস্তাবে নতুনভাবে অন্তর্ভুক্ত ৩৬৫টি ব্রিজ হতে কম গুরুত্বপূর্ণ ১০৭টি বাদ দিয়ে নতুনভাবে ২৫৮টি ব্রিজ অন্তর্ভুক্ত করে অর্থাৎ সর্বমোট ২ হাজার ২১৯টি ব্রিজ নিয়ে প্রকল্পটির সংশোধন প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে ১ হাজার ৮৩৫ কোটি টাকার প্রকল্পটির ব্যয় বাড়িয়ে ২ হাজার ৮৬৫ কোটি টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া প্রকল্পের মেয়াদ ২ বছর বাড়িয়ে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে।
প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধির বিষয়ে প্রকল্পের আওতায় ৭৮ জন জনবল বৃদ্ধি, গুরুত্বপূর্ণ গ্রাম সড়কে আরসিসি ব্রিজ নির্মাণ কাজ নতুনভাবে প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করা, বিভাগীয় দর তালিকার পরিবর্তন, রাজস্ব ব্যয় বৃদ্ধি, পরামর্শক সেবা খাতে ব্যয় বৃদ্ধি, ভূমি অধিগ্রহণ ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানিয়েছে এলজিইডি। ফলে চলমান প্রকল্পের সময় ও ব্যয় বৃদ্ধি করা প্রয়োজন বলে মনে করছে এলজিইডি।
এলজিইডি বলছে, ৪০০টি জরাজীর্ণ লোহার ব্রিজের জায়গায় আরসিসি ব্রিজ নির্মাণকাজের নকশা প্রণয়নের জন্য প্রয়োজনীয় সার্ভে প্রস্তুত কাজ সম্পন্ন করতে স্থানীয় সরকার বিভাগের অনুমোদনক্রমে ৯৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ডিজাইন পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নির্বাচন করা হয়। ইতোমধেই পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নির্ধারিত কর্মপরিধি অনুযায়ী ডিজাইন কাজ সম্পন্ন করেছে। সংশোধন প্রস্তাবে মাঠ পর্যায়ের বাস্তবায়ন কাজ নিবিড়ভাবে মনিটরিংয়ের জন্য ২ বছরের জন্য পরামর্শক নিয়োগের কথা বলা হয়েছে। আরসিসি ব্রিজের সংখ্যা ৮৬৫টির স্থলে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ১২৮টিতে। এ কারণে পরামর্শক সেবা খাতে ব্যয় বাড়ছে ১৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা। পরামর্শক সেবা খাতে মোট সংস্থানকৃত অর্থের পরিমাণ ১৬ কোটি ৭৫ লাখ টাকা।
ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে জমি অধিগ্রহণেও। মূল প্রকল্পে ১০ একর জমি অধিগ্রহণের কথা থাকলেও সংশোধিত প্রস্তাবে ব্রিজের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় অতিরিক্ত ব্রিজের অ্যাপ্রোচ সড়ক নির্মাণের জন্য বাস্তবতার আলোকে অধিগ্রহণযোগ্য জমির পরিমাণ দিগুণ ২০ একরে দাঁড়িয়েছে। সে কারণে জমি অধিগ্রহণের জন্য ব্যয় বৃদ্ধি পাবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্ন ও নির্বাচনি ইশতেহার ‘আমার গ্রাম আমার শহর’ বাস্তবায়নে দক্ষিণাঞ্চলীয় আয়রন ব্রিজ নির্মাণ প্রকল্পটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে প্রকল্পের লক্ষ্য উদ্দেশ্যে বলা হয়েছে।