• শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪২৯
মেট্রোর ট্রেন আসছে এপ্রিলে

সংগৃহীত ছবি

যোগাযোগ

মেট্রোর ট্রেন আসছে এপ্রিলে

  • এম এ বাবর
  • প্রকাশিত ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২১

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতেই চালু হচ্ছে কাঙ্ক্ষিত মেট্রোরেল। এরই মধ্যে প্রকল্পের প্রায় ৫৭ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। প্রস্তুত পাঁচ জোড়া ট্রেন, যার প্রথমটি জাপানের ওবে বন্দর থেকে বাংলাদেশের উদ্দেশে রওনা হওয়ার সম্ভাব্য তারিখ ২০ ফেব্রুয়ারি। আর মোংলা বন্দর থেকে উত্তরায় মেট্রোরেলের ডিপোতে ট্রেনটি এসে পৌঁছতে পারে ২৩ এপ্রিল। 

ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট লাইন-৬ শীর্ষক প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানি ডিএমটিসিএল (ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড)। ২২ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে উত্তরা তৃতীয় ধাপ থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০ দশমিক এক কিলোমিটার ব্যাপ্তির এই মেট্রোরেল লাইন তৈরি হচ্ছে। আর উত্তরা থেকে মতিঝিল হয়ে কমলাপুর পর্যন্ত মেট্রোরেল লাইনটিতে চলাচলের জন্য ২৪ জোড়া ট্রেন কেনা হচ্ছে। দুই পাশে দুটি ইঞ্জিন আর চারটি কোচের সমন্বয়ে এগুলো তৈরি করা হচ্ছে জাপানে। শুরুতেই মেট্রোরেল প্রকল্পটির বাস্তবায়নকাল ছিল ২০১২ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত। পরবর্তীতে ২০১৯ সালের মধ্যে উত্তরা থেকে আগারগাঁও এবং ২০২০ সালের মধ্যে আগারগাঁও থেকে মতিঝিল রুটে মেট্রোরেল সার্ভিস চালুর নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যর্থ হওয়ার পর ২০১৯ সালের মেতে কর্তৃপক্ষ জানায়, ২০২১ সালের ১৬ ডিসেম্বর দেশে যখন স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করা হবে, তখনই প্রকল্পটি চালু করা হবে।  প্রকল্পের সর্বশেষ মাসিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, প্রকল্পটির প্রথম ধাপের উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত কাজের অগ্রগতি জানুয়ারি পর্যন্ত ৮০ দশমিক ২১ শতাংশ। দ্বিতীয় ধাপের আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত কাজের অগ্রগতি ৫১ দশমিক ২৬ শতাংশ। আর তৃতীয় ধাপে ট্র্যাকস স্থাপন করা ও ট্রেনের বগিসহ অন্যান্য সরঞ্জাম সংগ্রহ করার কাজের অগ্রগতি ৪৬ দশমিক ৩৩ শতাংশ। জাপানে তৈরি হওয়া পাঁচ জোড়া ট্রেন পরীক্ষা করে দেখতে ডিএমটিসিএলের একটি দলের গত মাসে সেখানে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে জাপানে নিষেধাজ্ঞা থাকায় সেই পরিকল্পনা স্থগিত করা হয়। এদিকে এমআরটি-৬ লাইন সম্প্রসারণ কাজ নিয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের (বিআর) কমলাপুর স্টেশন ভবনটি ভাঙা নিয়ে তৈরি হচ্ছে নতুন সমস্যা। নতুন ভবন তৈরির আগে পুরনো স্থাপনা ভেঙে ফেলা হলে সার্বিক কার্যক্রম পরিচালনে নানামুখী সমস্যার সৃষ্টির আশঙ্কা করছেন রেলওয়ের কর্মকর্তারা।   

প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মেনে ২০১৯ সালে ডিএমটিসিএল কর্তৃপক্ষ এমআরটি-৬ (ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট) লাইন কমলাপুর রেলস্টেশন পর্যন্ত বর্ধিত করার পরিকল্পনা করে। যদিও এই পরিকল্পনায় বাংলাদেশ রেলওয়ে (বিআর) কোনো আপত্তি জানায়নি। তবে তারা বলেছে, ডিএমটিসিএলের এই নকশার বাস্তবায়ন কমলাপুর রেলস্টেশনকে মাল্টিমোডাল ট্রান্সপোর্ট হাবে (এমএমটিএইচ) রূপান্তর প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করবে। গত বছরের ২৪ নভেম্বর বাংলাদেশ রেলওয়ে ও মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ একটি নতুন পরিকল্পনায় সম্মত হয়। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী, এমআরটি-৬-এর জন্য রুম তৈরি করতে কমলাপুর স্টেশন প্লাজাকে নিকটস্থ একটি জায়গায় স্থানান্তর করা হবে এবং স্টেশনটিকে এমএমটিএইচে রূপান্তর করা হবে।

 

ওই বৈঠকের পর রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন সাংবাদিকদের বলেছিলেন, বর্তমান প্লাজাটি ভেঙে ফেলা হবে এবং একই রকম আরেকটি প্লাজা নির্মাণ করা হবে। প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন বলেও তিনি জানান। বর্তমান কাঠামো ঠিক রেখে মাল্টিমোডাল হাব ও মেট্রোরেলের নির্মাণকাজ এগিয়ে নিতে ঐতিহ্যবাহী কমলাপুর স্টেশনটি ভেঙে আরো উত্তরে নতুন করে নির্মাণে সম্মতি দিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়।

এমআরটি-৬-এর অতিরিক্ত প্রকল্প পরিচালক (সিভিল) আবদুল বাকী মিয়া বলেন, কমলাপুর স্টেশন চত্বরের বাইরে একটি এমআরটি স্টেশন ও একটি সিজার ক্রসিং নির্মাণ করা হবে। এমআরটি অবকাঠামো ও স্টেশন ভবনটি ৩০ মিটার দূরত্বে হবে। এমআরটি-৬ সম্প্রসারণের জন্য স্টেশন ভবনটি অন্যত্র স্থানান্তর করতে হবে, এটি সত্য নয়। স্থানান্তরের সিদ্ধান্তটি বাংলাদেশ রেলওয়ের।

কমলাপুর স্টেশন ভবনটি ভাঙা নিয়ে সার্বিক কাজে কোনো প্রভাব পড়বে না উল্লেখ করে ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন ছিদ্দিক বলেন, ডিসেম্বরের মধ্যেই মেট্রোরেল চালুর জন্য কাজ চলছে। এ লক্ষ্য অর্জনে আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছি। গত ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত মেট্রোরেল প্রকল্পের ৫৬ দশমিক ৯৪ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। তিনি জানান, বাংলাদেশে আনার আগে ডিএমটিসিএলের একটি বিশেষজ্ঞ দলের জাপান গিয়ে ট্রেনগুলো পরীক্ষার কথা ছিল। কিন্তু করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে দেশটিতে ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। ফলে বিকল্প হিসেবে তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে ট্রেনগুলো পরিদর্শন করেছে কোম্পানিটি। ডিএমটিসিএলের পক্ষে ট্রেনগুলো পরিদর্শন করেছে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানি নামের একটি প্রতিষ্ঠান। পরিদর্শন কার্যক্রম ঢাকা থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করেছেন ডিএমটিসিএলের কর্মকর্তারা। এম এ এন ছিদ্দিক আরো বলেন, সাধারণত একটি মেট্রো ট্রেন বাংলাদেশে আনার আগে পাঁচ ধরনের পরীক্ষা করতে হয়। আর দেশে আনার পর আরো ১৪ ধরনের পরীক্ষা করতে হয়। কিন্তু পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে আনার পর সবগুলো পরীক্ষা করা হবে। এরপর শুরু হবে ট্রায়াল রান। অন্তত ছয় মাস ট্রায়াল রান করার পর যাত্রী পরিবহন শুরু করা যায়।

তিনি জানান, পর্যায়ক্রমে বাকি ট্রেনগুলো দেশে চলে আসবে। দ্বিতীয় সেট ট্রেনটি জাপান থেকে ১৫ এপ্রিল রওনা হওয়ার কথা রয়েছে। সেটি ঢাকায় পৌঁছতে পারে ১৬ জুন। আর তৃতীয় ট্রেনটি ১৩ জুন রওনা হয়ে ১৩ আগস্ট পৌঁছতে পারে। ট্রেনগুলো প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ট্রায়াল রান দ্রুত শুরু হবে। তিনি আরো বলেন, মেট্রোরেলের ট্রেনের ট্রায়াল রান শুরু করার জন্য ন্যূনতম তিনটি স্টেশন প্রস্তুত করে রাখতে হয়। সেখানে আমরা পাঁচটি স্টেশন এরই মধ্যে প্রস্তুত করে ফেলেছি। ডিপো এলাকায় ট্রেনগুলো রাখা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্যও পর্যাপ্ত অবকাঠামো গড়ে তোলা হয়েছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads