• শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জৈষ্ঠ ১৪২৯

প্রতীকী ছবি

অপরাধ

বগুড়ায় ধানক্ষেতে গলা কাটা ৪ লাশ

  • বগুড়া প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ০৮ মে ২০১৮

বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার একটি ধানক্ষেত থেকে সোমবার চারজনের হাত বাঁধা ও গলা কাটা লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। ময়নাতদন্তের জন্য লাশগুলো বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় এলাকায় তোলপাড় শুরু হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আটমূল ইউনিয়নের আলিয়ারহাটের উত্তরে ও গাঙ্গনই নদীর পশ্চিমে ডাবুইর পাথার গ্রামের একটি ধানক্ষেতে স্থানীয় লোকজন সকাল ৮টার দিকে চারজনের লাশ পড়ে থাকতে দেখেন। সকাল ১০টার দিকে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মোজাফফর হোসেন বিষয়টি শিবগঞ্জ থানা পুলিশকে জানান। পরে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে।

ইউপি সদস্য আবদুল খালেক ও পুলিশ জানিয়েছে, নিহতদের মধ্যে তিনজনের পরিচয় পাওয়া গছে। তারা হলেন আটমূল ইউনিয়নের কাঠগাড়া চকপাড়া গ্রামের আছির উদ্দিনের ছেলে সাবরুল ইসলাম (২৮) ও একই গ্রামের জহুরুল ইসলামের ছেলে রঙমিস্ত্রি জাকারিয়া (৩০) এবং জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার পাঁচপাইকা চেয়ারম্যানপাড়া গ্রামের আজাহার মণ্ডলের ছেলে হেলাল উদ্দিন (৩০)। অপরজনের পরিচয় পাওয়া যায়নি। নিহতদের বয়স ২৮ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে বলেও জানায় পুলিশ।

ঘটনাস্থল ডাবুইর গ্রাম আটমূল ইউনিয়নের চন্দনপুর ও ফেনিগ্রামের মধ্যবর্তী স্থানে। এটি শিবগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৮/১০ কিলোমিটার দূরে। পাকা রাস্তার পাশ থেকে শুরু বিস্তীর্ণ ধানক্ষেত শুরু। রাস্তা থেকে প্রায় আধা কিলোমিটার দূরে ধানক্ষেতের মধ্যে চারজনের জবাই করা লাশ পড়েছিল। ঘটনাস্থলের আধা কিলোমিটারের মধ্যে ওসমানিয়া দারুল উলুম কওমি মাদরাসা ছাড়া কোনো বাড়ি নেই। মাদরাসার শিক্ষক শিহাব উদ্দিন জানান, সকাল সাড়ে ৯টার দিকে সেখানে আশপাশের কয়েকটি গ্রামের লোকজনের ঢল নামে। তখন তিনি মাদরাসা ছুটি দিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ পড়ে থাকতে দেখেন। মাদরাসার শিক্ষার্থীরা লাশ দেখতে ছুটে যায়। সেখানে এমন ঘটনা আগে কখনো ঘটেনি মন্তব্য করে তিনি জানান, ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ পাউরুটি, মানিব্যাগ, দড়ি, মাদক সেবনের সরঞ্জামসহ বেশ কিছু আলামত উদ্ধার করেছে।

নিহতদের মধ্যে পরিচয় পাওয়া জাকারিয়া ও সাবরুলের বাড়ি ঘটনাস্থল থেকে প্রায় চার কিলোমিটার দূরে কাঠগাড়া চকপাড়ায়। জাকারিয়া রঙমিস্ত্রি ও দিনমজুরের কাজ করতেন। রাত সাড়ে ৮টার দিকে বড়ভাই জান্নাতুলের সঙ্গে শেষ কথা হয় সে বাড়ি ফিরছে। তবে আর বাড়ি ফেরেনি। মা জাহানারা জানান, তার ছেলের সঙ্গে কাঠগাড়া নতুনপাড়ার দুই মাদক ব্যবসায়ীর বিরোধ ছিল। কয়েক দিন আগে ছেলের দামি মোবাইল ফোনটি তারা মারপিট করে কেড়ে নেয়।

সাবরুলের স্ত্রী করিমা খাতুন জানান, আগে সাবরুল মাদক সেবন করলেও শিশুপুত্রের মৃত্যুর পর থেকে সে আর মাদক সেবন করত না। মা সায়রা বেগম জানান, তার ছেলে ‘ভাইয়ের পুকুর বাজারে’ মুদি দোকানে বসত। রাত ৮টার দিকে মায়ের জন্য পাউরুটি নিয়ে দোকান থেকে বাড়ির উদ্দেশে বের হয়ে আর ফেরেনি।

পুলিশ সুপার মো. আলী আশরাফ ভুঞাসহ পুলিশ, ডিবি, সিআইডি ও পিআইবির কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। মাদক সংক্রান্ত কোনো বিষয় এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে বলে তারা ধারণা করছেন।

শিবগঞ্জ থানার ওসি আনিছুর রহমান জানান, রোববার রাতের কোনো এক সময় দুষ্কৃতকারীরা একই কায়দায় ওই চারজনকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে জবাই করে। নিহতদের হাত পেছন দিকে বাঁধা ছিল। এ কাজে একই ধরনের দড়ি ব্যবহার করেছে। প্রত্যেককে জবাই করার ধরনও একই রকম। পেশাদার খুনিরা এর সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে। ঘটনাস্থল থেকে বেশ কিছু আলামত উদ্ধার করা হয়েছে বলে তিনি জানান।

চাঞ্চল্যকর এই ‘ফোর মার্ডারের’ ঘটনায় বগুড়ার পুলিশ সুপার জানান, পূর্ব বিরোধ, ব্যক্তিগত শত্রুতাসহ সম্ভাব্য সব কারণই খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ঘটনাস্থল থেকে পাওয়া আলামত বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। ঘটনা তদন্তে গঠিত বিশেষ তদন্ত কমিটি ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে। পুলিশ সুপার সার্বিক তদন্তকাজ তত্ত্বাবধান করছেন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads