• মঙ্গলবার, ৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪২৯
লাল রক্তের কালো বাণিজ্য

একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীরা কালো বাণিজ্যকরে রোগীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে টাকা।

সংরক্ষিত ছবি

অপরাধ

লাল রক্তের কালো বাণিজ্য

  • হাসান শান্তনু
  • প্রকাশিত ১৯ মে ২০১৮

রক্ত সঞ্চালনের উপকরণ সরবরাহ এক বছরের বেশি সময় ধরে বন্ধ। সরকারি হাসপাতাল ও ব্লাড ব্যাংকগুলোতে উপকরণ না থাকায় রোগীরা বাধ্য হয়ে বাজার থেকে সেগুলো কিনছেন। এতে গরিব রোগীরা আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি প্রাণঘাতী রোগের ঝুঁকিতেও পড়ছেন। লাল রক্তকে ঘিরে চলছে কালো বাণিজ্য। একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী রোগীদের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। উপকরণ সঙ্কটে নিরাপদ রক্ত সঞ্চালন ব্যবস্থা এখন ভেঙে পড়ার উপক্রম।

অস্ত্রোপচারের ব্যবস্থা থাকলেও জরুরি রক্ত সংগ্রহ ও রোগীদের রক্ত দেওয়ার জন্য রক্ত সঞ্চালনের উপকরণ সঙ্কটের মুখে পড়তে হচ্ছে দেশের অনেক হাসপাতালকে। নবজাতক জন্মের সময় অস্ত্রোপচার ও সড়ক দুর্ঘটনাসহ বিভিন্নভাবে আহত রোগীদের নিয়েও বিপাকে পড়তে হচ্ছে হাসপাতালগুলোকে। এ অবস্থায় নীতিমালা উপেক্ষা রক্ত বাণিজ্য চালিয়ে যাওয়া কেন্দ্রগুলোর ব্যবসা রমরমা হয়ে উঠেছে। নতুন অর্থবছরে উপকরণ বরাদ্দ না হওয়া পর্যন্ত এ বিষয়ে কিছু করার নেই বলে মনে করে হাসপাতাল ও ব্লাড ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক প্রতিবেদনে দেশের রক্ত সঞ্চালন নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়। এতে বলা হয়, রক্ত সংগ্রহ করা থেকে শুরু করে রোগীকে দেওয়া পর্যন্ত সাতটি ধাপ আছে। এসব ধাপে নির্দিষ্ট নির্দেশনা মানতে হয়। যা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মানা হচ্ছে না। ফলে দূষিত রক্তে ছড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন ঘাতক রোগের জীবাণু।

দূষিত রক্তের ৮৯ শতাংশে হেপাটাইটিসের জীবাণু পাওয়া গেছে বলেও সংস্থাটির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। উপকরণ সঙ্কটকে ঘিরে পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। স্বাস্থ্য অধিদফতরও ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ব্লাড ব্যাংকগুলো থেকে সংগৃহীত রক্তের নমুনায় হেপাটাইটিস-বি ও সি, সিফিলিস ও এইডসের জীবাণু পেয়েছে।

তথ্য মতে, সরকারি হাসপাতাল ও ব্লাড ব্যাংকগুলোতে রক্ত সঞ্চালনের উপকরণ বিনামূল্যে দেওয়া হয়। দাতা সংস্থার সহায়তায় নিরাপদ রক্ত পরিসঞ্চালন কর্মসূচির আওতায় সরকার সরবরাহ করে এগুলো। গত এক বছর ধরে সেগুলোর সরবরাহ বন্ধ। উপকরণের অভাবে সরকারি হাসপাতালসহ ২১৯ ব্লাড ব্যাংকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়া চলছে রক্ত পরিসঞ্চালন। অনেক হাসপাতালের জরুরি ও অন্যান্য বিভাগের দালাল চক্রের নিয়ন্ত্রণে চলে যাচ্ছে রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া। ফলে দিন দিন হুমকির মুখে পড়ছে জনস্বাস্থ্য।

নিরাপদ রক্ত সঞ্চালনে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ, নীতিমালা ও আইন আছে। এ জন্য প্রতিবছর সরকারের বরাদ্দও থাকে। নিরাপদ রক্ত পরিসঞ্চালন আইনে বলা হয়েছে, রক্ত সঞ্চালনের যাবতীয় উপকরণ সরকারের পক্ষ থেকে হাসপাতাল ও ব্লাড ব্যাংকে সরবরাহের কথাও। এ জন্য ১০০ কোটি টাকার বেশি বরাদ্দ থাকলেও তা ‘রহস্যজনক’ কারণে বন্ধ হয়ে আছে। ফলে সঙ্কট তীব্র হয়ে উঠছে। এ অবস্থার পরিবর্তন হতে আগামী অর্থবছর বা জুন মাস পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে বলে মনে করেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের কর্মকর্তারা।

রক্তের ব্যাগ, রিএজেন্ট ও কিটসসহ প্রয়োজনীয় উপকরণের অভাবে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই চলছে ঝুঁকিপূর্ণ রক্ত পরিসঞ্চালন। রোগী ও অভিভাবকদের বাইরে থেকে উপকরণ কেনা ছাড়া উপায় নেই। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ওষুধের বাজার থেকে ব্লাডব্যাগ কিনতে বাধ্য করছেন বলে রোগীরা অভিযোগ করেন। খোঁজ নিলে জানা যায়, প্রতি মাসে চার হাজারের বেশি রক্ত পরিসঞ্চালন ব্যাগ লাগে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ব্লাড ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগে। সব ব্যাগ রোগীরা বাইরে থেকে কেনেন। বাইরে থেকে কেনা উপকরণ মান ও স্বাস্থ্যসম্মত কি না, এ প্রশ্ন আছে বিশেষজ্ঞদের।

তথ্য মতে, দেশে বছরে প্রায় ৯ লাখ ব্যাগ রক্ত পরিসঞ্চালন হয়। এর মধ্যে শতকরা ৬৯ ভাগ রক্ত আত্মীয়স্বজন থেকে আর ৩১ ভাগ স্বেচ্ছায় রক্তদাতার কাছ থেকে সংগ্রহ হয়। থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত তিন লাখের বেশি শিশুকে প্রতি ২ থেকে ৪ সপ্তাহ পর রক্ত দিতে হয়। সংগৃহীত রক্তের ৬০ ভাগই ব্যয় হয় থ্যালাসেমিয়া রোগীদের চিকিৎসায়। বিভিন্ন প্রচারণার পরও বাড়ছে না স্বেচ্ছায় রক্তদাতার সংখ্যা। গত দশ বছরে শতকরা ১০ ভাগ থেকে বেড়ে ৩১ ভাগে দাঁড়িয়েছে রক্তদাতার সংখ্যা। ফলে রক্তের সঙ্কট লেগেই থাকে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads