আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চলমান মাদকবিরোধী অভিযনে তিন জেলায় আরো তিনজন গুলিতে নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল ও রংপুর শহরে পুলিশের গুলিতে দুইজন নিহত হয়েছেন। দিনাজপুর সদর উপজেলায় অজ্ঞাতপরিচয় এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তাদের দাবি, ওই ব্যক্তিও মাদক বিক্রেতা ছিলেন।
ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলায় পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে শামীম হোসেন (৪২) নিহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার রাত দেড়টার দিকে উপজেলার ধর্মগড় ইউনিয়নের ভদ্রেশ্বরী বন্দর গ্রামের চেকপোস্ট এলাকায় গোলাগুলির ওই ঘটনা ঘটে বলে রানীশংকৈল থানার ওসি মো. আব্দুল মান্নান জানিয়েছেন।
নিহত শামীম হোসেন (৪২) রাণীশংকৈল উপজেলার ভবানন্দপুর গ্রামের আব্দুল সাত্তারের ছেলে। তার বিরুদ্ধে মাদক আইনের ১১টি মামলা রয়েছে বলে পুলিশের দাবি। ওসি মান্নান জানান, ভদ্রেশ্বরী বন্দর গ্রামের জগদলগামী সড়কের চেকপোস্টে মাদক চোরাকারবারিদের জড়ো হওয়ার খবরে পুলিশ বৃহস্পতিবার রাত দেড়টার দিকে সেখানে অভিযানে যায়। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে মাদক ব্যবসায়ীরা গুলি ছোড়ে। এসময় আত্মরক্ষার্থে পুলিশও পাল্টা গুলি করে। প্রায় ২০ মিনিট গোলাগুলির পর মাদক ব্যবসায়ীরা পিছু হটে। পরে সেখানে মাদক ব্যবসায়ী শামীম হোসেনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পাওয়া যায়।
শামীমকে ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তিনি জানান, এ অভিযানে পুলিশের দুই সদস্যও আহত হয়েছেন। ঘটনাস্থল থেকে দেশীয় অস্ত্র ও ৬৪০ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে।
রংপুরে নগরীতে পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দকযুদ্ধে আবু মুসা বিষকালাই (২৭) নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছে। কোতোয়ালি থানার ওসি বাবুল মিয়া জানান, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৩টার দিকে সিটি করপোরেশনের ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের কুকরুল আমেরতল তিন রাস্তার মোড়ে এ গোলাগুলির ঘটনা ঘটে।
নিহত মুসা ওই ওয়ার্ডের হনুমানতলা বস্তির আব্দুল কুদ্দুসের ছেলে। তার নামে কোতোয়ালি থানায় মাদক ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগে ১১টি মামলা রয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।
রংপুর সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাইফুর রহমান জানান, কুকরুল আমেরতল এলাকায় মাদক কেনাবেচার খবরে সেখানে অভিযান চালায় পুলিশ। এ সময় মাদক ব্যাবসায়ীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি করলে পুলিশও পাল্টা গুলি করে। এতে ঘটনাস্থলেই মুসা মারা যায়।
এক পর্যায়ে মাদক ব্যবসায়ীরা পিছু হটলে মুসার লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়। ঘটনাস্থল থেকে একটি দেশীয় পিস্তল, তিনটি গুলির খোসা, ১৭৩টি ইয়াবা ও ৫২ বোতল ফেন্সিডিল উদ্ধারের কথাও জানিয়েছে পুলিশ।
অন্যদিকে, দিনাজপুরের সদর উপজেলায় এক ব্যক্তির গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। দুইদল মাদক বিক্রেতাদের মধ্যে গোলাগুলিতে ওই ব্যক্তি নিহত হয়েছে বলে দিনাজপুর কোতোয়ালি থানার ওসি রেদওয়ানুর রহিম দাবি করেছেন। নিহতের নাম-পরিচয় জানা যায়নি।
ওসি জানান, খাড়িপাড়া এলাকায় গোলাগুলির খবর পেয়ে সেখানে যায় পুলিশ।পরে ঘটনাস্থল থেকে এক ব্যক্তির গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করে দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়। ঘটনাস্থল থেকে ১০০ বোতল ফেন্সিডিল ও একটি ওয়ান শুটারগান উদ্ধারের কথাও জানায় পুলিশ।
মে মাসে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সারা দেশে মাদকবিরোধী অভিযান শুরুর পর এ নিয়ে নিহতের সংখ্যা ১৩৪ জনে পৌঁছালো । অভিযানে মৃত্যুর অধিকাংশ ঘটনার ক্ষেত্রে বলা হচ্ছে, মাদক কারবারিরা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর দিকে গুলি করায় পাল্টা গুলি চালাচ্ছে পুলিশ বা র্যাব, তাতে ঘটছে মৃত্যু।
কয়েকটি ক্ষেত্রে গুলিবিদ্ধ লাশ পাওয়ার কথা জানিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তাদের মৃত্যু হয়েছে মাদক চোরাকারবারিদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে।
তাদের ওই বক্তব্য ও ঘটনার বিবরণ নিয়ে মানবাধিকার সংগঠনগুলো প্রশ্ন তুলেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন বন্দুকযুদ্ধে নিহতের প্রতিটি ঘটনার তদন্ত চেয়েছে। আর জাতিসংঘ বলেছে, তারা পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।
তবে সরকারের তরফ থেকে বলা হচ্ছে, দেশ থেকে মাদক নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত এই লড়াই চলবে।