• বুধবার, ১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪২৯
বাচ্চু হত্যার প্রধান আসামি ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত

লেখক ও প্রকাশক শাহজাহান বাচ্চু

সংগৃহীত ছবি

অপরাধ

পুলিশ সুপার বললেন নেপথ্যে জেএমবি

বাচ্চু হত্যার প্রধান আসামি ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত

  • মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ২৯ জুন ২০১৮

নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) সাংগঠনিক সিদ্ধান্তেই গুলি করে হত্যা করা হয় মুক্তমনা লেখক ও প্রকাশক শাহজাহান বাচ্চুকে। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির মুন্সীগঞ্জ জেলার সাবেক এই সাধারণ সম্পাদককে হত্যার জন্য তিন মাস আগে পরিকল্পনা করে সংগঠনটি।

শাহজাহান বাচ্চু হত্যা মামলার প্রধান আসামি ও ‘পরিকল্পনাকারী’ নিহত আবদুর রহমানের বরাত দিয়ে এসব তথ্য জানিয়েছেন মুন্সীগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলম। নিহত হওয়ার আগে জিজ্ঞাসাবাদে আবদুর রহমান পুলিশকে এসব তথ্য দেন বলে বৃহস্পতিবার বেলা সোয়া ১১টায় নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন পুলিশ সুপার। একই দিন ভোরে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন আবদুর রহমান।

পুলিশ সুপার বলেন, গত ২৪ জুন গ্রেফতার হওয়ার পর জিজ্ঞাসাবাদে আবদুর রহমান জানিয়েছে, জেএমবির সাংগঠনিক সিদ্ধান্তে শাহজাহান বাচ্চুকে হত্যা করা হয়। তিনি নিজেই বাচ্চুকে গুলি করেন। হত্যাকাণ্ডের সময় ঘটনাস্থলে ৪ জন উপস্থিত থাকলেও নেপথ্যে আরো দুজন থাকার কথা জানায় রহমান। বাচ্চুকে হত্যার পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী তিন মাস আগে গাড়িচালক পরিচয়ে মুন্সীগঞ্জের সিরাজদীখানের বালুরচর ইউপির খাসমহল কালীনগর গ্রামে প্রবাসী ইয়াকুব আলীর বাসা ভাড়া নিয়ে শাহজাহান বাচ্চু হত্যার মিশন বাস্তবায়ন করা হয়।

জায়েদুল আলম বলেন, গত ২৪ জুন পুলিশ সদর দফতরের গোয়েন্দা টিম, কাউন্টার টেররিজমের ইউনিট, মুন্সীগঞ্জ ও বগুড়া জেলা পুলিশ যৌথভাবে অভিযান চালিয়ে গাজীপুরের কেওয়া পশ্চিমখণ্ড গ্রামের একটি দ্বিতল ভবনের জঙ্গি আস্তানা থেকে আটক করা হয় আবদুর রহমান ওরফে লালু, সাঈদ, আক্কাস ও কাওসার নামের ৪ জঙ্গিকে। নিহত আবদুর রহমান ওরফে লালু পঞ্চগড় জেলার দেবীগঞ্জ উপজেলার ঢাকাইয়াপাড়া গ্রামের হোসেন আলীর ছেলে। তিনি জেএমবির ঢাকা বিভাগের সামরিক শাখার কমান্ডার ছিলেন। জিজ্ঞাসাবাদে তার কাছ থেকে আরো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। তদন্ত ও অপর আসামিদের গ্রেফতারের স্বার্থে সেসব তথ্য এখনই প্রকাশ করা যাচ্ছে না। তবে সময়মতো এসব তথ্য গণমাধ্যমকে জানানো হবে।

পুলিশ সুপার বলেন, জঙ্গি আবদুর রহমানের দেওয়া তথ্যেই ২৬ জুন রাত ১টার দিকে সিরাজদীখান থানার খাসমহল কালীনগরের বালুরচরে তার ভাড়া বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে তার সহযোগীরা পালিয়ে যায়। এ সময় ভাড়া বাসায় তল্লাশি চালিয়ে আলমারির ড্রয়ারের নিচ থেকে একটি পিস্তল, ২১ রাউন্ড গুলি ও রান্নাঘর থেকে ৪টি তাজা হ্যান্ডগ্রেনেড উদ্ধার করা হয়। তবে আবদুর রহমানকে নিয়ে ফিরে আসার সময় পথে মোটরসাইকেল দিয়ে সহযোগীরা তাকে ছিনিয়ে নিতে পুলিশের ওপর গুলি চালায়। আত্মরক্ষার্থে পুলিশও পাল্টা গুলি চালায়। এ সময় দৌড়ে পালানোর সময় গুলিবিদ্ধ হন আবদুর রহমান। তাকে উদ্ধার করে সিরাজদীখান উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

ঘটনার সময় আহত পুলিশের এএসআই বেলাল উদ্দিন, এএসআই হাসান সাঞ্জালী ও কনস্টেবল মোশারফ হোসেনকে মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। নিহত আবদুর রহমানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় হত্যাসহ ৩টি ডাকাতির মামলা রয়েছে।

এদিকে, স্বামী হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ায় স্বস্তি প্রকাশ করেছেন শাহজাহান বাচ্চুর দ্বিতীয় স্ত্রী আফসানা বেগম। একই সঙ্গে স্বামী হত্যায় জড়িত অন্যদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন তিনি।

গত ১১ জুন সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে মুন্সীগঞ্জের সিরাজদীখানের পূর্ব কাকালদী গ্রামে দুর্বৃত্তের গুলিতে নিহত হন শাহজাহান বাচ্চু (৬০)। দুটি মোটরসাইকেলে এসে তাকে গুলি করে দ্রুত পালিয়ে যায় হত্যাকারীরা। শাহজাহান বাচ্চু বিশাখা নামে একটি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী ও জেলা কমিউনিস্ট পার্টির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ‘আমাদের বিক্রমপুর’ নামে একটি অনিয়মিত সাপ্তাহিক পত্রিকারও ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ছিলেন তিনি। এ ছাড়া মুক্তচিন্তার লেখক বাচ্চু বিভিন্ন ব্লগ ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে লেখালেখি করতেন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads