• মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪২৯
অভিযানের মধ্যেও আসছে মাদক বিক্রি হচ্ছে রাখঢাক কৌশলে

পুলিশের মাদকবিরোধী অভিযান

সংরক্ষিত ছবি

অপরাধ

অভিযানের মধ্যেও আসছে মাদক বিক্রি হচ্ছে রাখঢাক কৌশলে

  • আজাদ হোসেন সুমন
  • প্রকাশিত ১৪ জুলাই ২০১৮

দেশজুড়ে পুলিশ-র্যাবের মাদকবিরোধী অভিযানে বিক্রেতাদের বড় একটি অংশকে ইতোমধ্যে গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। গা-ঢাকা দিয়েছে বাকিরা। বর্তমানে মাদকের স্পটগুলোও আর আগের মতো নেই। তবু থেমে নেই মাদক বিক্রি। বিক্রি হচ্ছে রাখঢাক কৌশলে। আসছেও নিত্যনতুন কৌশলে। গ্রেফতার এড়ানো মাদক বিক্রেতারা ঘাপটি মেরে থেকে মুঠোফোনে যোগাযোগ করে মাদক বিক্রি করছে।

গত মঙ্গলবার মিরপুরের শাহআলী মাজার এলাকা, কারওয়ানবাজার, মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্প, শুক্রাবাদ, তেজকুনিপাড়া, মহাখালী এলাকার মাদক স্পট ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

কারওয়ানবাজার রেললাইন এলাকায় কোনো মাদক বিক্রেতাকে দেখা যায়নি। নতুন লোক দেখলেই বস্তির বাসিন্দারা কখনো ক্রেতা, আবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মনে করে নির্বাক তাকিয়ে দেখছেন। কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রায় সব বিক্রেতাকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে। এখন আর কেউ এখানে গাঁজা-ইয়াবা বিক্রি করে না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেনেভা ক্যাম্পের এক ব্যবসায়ী জানান, ক্যাম্পের বেশিরভাগ মাদক বিক্রেতাই বর্তমানে কারাগারে। কিছু বাইরে থাকলেও প্রকাশ্যে আর বিক্রি করতে পারছে না। এ ছাড়া নতুন কোনো ক্রেতার কাছে বিক্রিও করা হচ্ছে না। অভিযানের পর থেকে ইয়াবার চালান আসা কমে গেছে। তবে গাঁজা বিক্রি হচ্ছে গোপনে। পুরনো ইয়াবার ক্রেতাদের ধরে রাখতে তাদের কাছে মুঠোফোনে যোগাযোগ করে গাঁজা সরবরাহ করা হয় বলে জানান তিনি।

মহাখালী সাততলা বস্তি এলাকার চিত্রও বদলে গেছে। এখন আর ডেকে ডেকে ‘বাবা’ (ইয়াবা) বিক্রি হয় না। নতুন লোক দেখলেই শিশু-কিশোররা তাকিয়ে দেখছে। আগে এসব শিশু-কিশোরই প্রকাশ্যে ডেকে ডেকে মাদক বিক্রি করত।

বস্তির একাধিক বাসিন্দা জানান, র্যাব-পুলিশ অনেক বিক্রেতাকে ধরে নিয়ে যাওয়ার পর এখন মাদক বিক্রি করে না কেউ। যারা ধরা পড়েনি তাদের অনেকেই পালিয়েছে। তবে একটি অংশ যারা একেবারে পেশাদার তারা এ পথ ছাড়তে পারেনি। তারা পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে দিব্যি ইয়াবা ব্যবসা চালাচ্ছে।

রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশন, সাভারের আমিন বাজার, হেমায়েতপুরের ভাকুর্তা, মোহাম্মদপুরের বছিলা এলাকায় একাধিক সিন্ডিকেট এখনো তৎপর। এরা চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। পুলিশের খাতায় ফেরার। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে এরা আছে— সতর্কতার সঙ্গে। এখন উল্টো এসব মাদক ব্যবসায়ী পুলিশকে রেকি করে। কখন পুলিশ আসবে বা আসতে পারে এবং কোন পর্যন্ত পৌঁছতে পারে— সব হিসাব-নিকাশ কষে পুলিশের ধরাছোঁয়ার বাইরে অবস্থান নিয়ে এরা মাঠে নামে।

মিরপুর শাহআলী এলাকায় প্রকাশ্যে মাদক বিক্রি বন্ধ হলেও গোপনে চলছে। মাজারের ভেতরে ও বাইরে আগের মতোই গান-বাজনার ফাঁকে বিক্রি হচ্ছে গাঁজা। প্রতি বৃহস্পতিবার বিক্রির পরিমাণ বেশি হয়। ওই দিন রাতে গান-বাজনার আসর বসায় বিক্রি বেশি বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। এ ছাড়া চটবাড়ী এলাকায় ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতারা সক্রিয়। চটবাড়ী লেকে নৌকায় চড়ানোর নামে লেকের মাঝামাঝি স্থানে গিয়ে ইয়াবা সেবনের চিত্র এখনো বদলায়নি। তবে শাহআলী থানা পুলিশের দাবি এলাকায় কোনো মাদক বিক্রেতা নেই।

এ ব্যাপারে পুলিশের অতিরিক্ত উপ-মহাপরিদর্শক (ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড স্পেশাল ম্যানেজমেন্ট) মনিরুজ্জামান গতকাল বাংলাদেশের খবরকে বলেন, জঙ্গিবাদের মতো মাদকও একটি আসক্তি। আমরা এই দাবি করছি না যে, অভিযানের ফলে রাতারাতি মাদক নির্মূল হয়ে যাবে। তবে অভিযানের কারণে অনেকটা নিয়ন্ত্রণ হয়েছে।

মাদককে জাতীয় সমস্যা আখ্যায়িত করে তিনি আরো বলেন, এর মোকাবেলা একা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষে সম্ভব নয়। এর জন্য সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। দেশের যুবসমাজকে মাদকের বিষাক্ত ছোবল থেকে রক্ষা করতে সমাজের বিত্তবান, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনসহ সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads