• শনিবার, ৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪২৯
এভাবেও নির্যাতন করতে পারে মানুষ!

প্রিয়াঙ্কা আক্তার (৫)

ছবি : বাংলাদেশের খবর

অপরাধ

এভাবেও নির্যাতন করতে পারে মানুষ!

ফেনীতে অভিনেত্রী শাহেনী সহযোগী ও ‘ওঝা’সহ আটক

  • ফেনী প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ২৫ অক্টোবর ২০১৮

পালিত কন্যা ৫ বছর বয়সী প্রিয়াঙ্কা আক্তারকে বর্বর নির্যাতনের অভিযোগে ঢাকাই সিনেমার এক সময়ের পার্শ্ব অভিনেত্রী শাহেনীকে আটক করেছে পুলিশ। গত মঙ্গলবার মধ্যরাতে ফেনী সদর উপজেলার একটি জঙ্গল থেকে তাকে আটক করা হয়। এ সময় তার সহযোগী মুন্নি আক্তারকেও আটক করা হয়। এ ঘটনায় গতকাল বুধবার সকালে আটক করা হয় কথিত কবিরাজ (ওঝা) অমৃত দাস ও মো. আবদুল্লাহকে। গতকাল রাতে এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত শিশু নির্যাতনের ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছিল বলে পুলিশ জানিয়েছে। ফেনীর পুলিশ সুপারের কনফারেন্স রুমে বুধবার বিকালে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার এসএম জাহাঙ্গীর আলম সরকার বলেন, এক বছর বয়সে সিলেটের সুফিয়া নামে এক নারীর কাছ থেকে প্রিয়াঙ্কাকে দত্তক নেয় শাহেনী। গত ১৫ দিন আগে ঢাকা থেকে বাড়িতে বেড়াতে আসে। তখন প্রিয়াঙ্কার অদ্ভুত আচরণ দেখে শর্শদী বাজারের লন্ড্রি দোকানদার অমৃত দাস ও আবদুল্লাহ নামে দুই কবিরাজ প্রিয়াঙ্কাকে ঝাড় ফুঁক ও মোমবাতির ছ্যাঁকা দিয়ে চিকিৎসা দেন এবং পরবর্তীতে কবিরাজদের কথামতো শাহেনাও তাকে প্রতিদিন মোমের ছ্যাঁকা দিত। গত মঙ্গলবার প্রিয়াঙ্কা বেশি অসুস্থ হয়ে পড়লে পাশের বাড়ির একজন তাকে হাসপাতালে ভর্তি করায়। এ ঘটনায় পুলিশ অভিযান চালিয়ে শাহেনী আক্তারসহ চারজনকে আটক করে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, পালক মেয়ে বললেও প্রিয়াঙ্কাকে দিয়ে ঘরের সব ধরনের কাজকর্ম করানো হতো। জোহরা আক্তার নামে এক প্রতিবেশী জানান, মঙ্গলবার বিকালে শাহেনীর বাড়িতে কান্নার শব্দ শুনে স্বামীকে নিয়ে তিনি সেখানে যান। ক্ষত-বিক্ষত প্রিয়াঙ্কাকে উদ্ধার করে তারা প্রথমে স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও পরে আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করান।

প্রিয়াঙ্কার বরাত দিয়ে তিনি আরো জানান, গত সোমবার রাতে শাহেনী লাঠি দিয়ে পেটানোর পর তার শরীর জ্বলন্ত মোমবাতি ও খুন্তির ছ্যাঁকায় ঝলসে দেয়। পরে তাকে আটকে রেখে বেরিয়ে যায়। এভাবে প্রায়ই তার ওপর বর্বর নির্যাতন করত বলে জানায় শিশুটি।

এদিকে আটকের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশের কাছে শাহেনী দোষ স্বীকার করে দাবি করেন, তার ওপর জ্বিন ভর করত সেসময় প্রিয়াঙ্কার শরীরে আগুনের ছ্যাঁকা দিলে জ্বিন চলে যেত। আর সে কারণেই তাকে তিনি আগুনের ছ্যাঁকা দিতেন।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান জানে আলম জানান, প্রিয়াঙ্কা ওই এলাকার চলচ্চিত্র অভিনেত্রী শাহেনী বেগমের বাসায় থাকত। শাহেনী পরিবার নিয়ে ঢাকায় থাকলেও মাঝে মধ্যে এ বাড়িতে আসতেন। এলাকাবাসী জানায়, মেয়েটির গায়ে আগুনের ছ্যাকা দিয়ে জ্বিন তাড়ানোর নামে প্রতারণা করত তারা।   

ফেনী সদর হাসপাতালের চিকিৎসক ফয়জুল কবির বলেন, শিশুটির শরীরে অসংখ্য পোড়া ক্ষতস্থান রয়েছে। আমরা তাকে উন্নত চিকিৎসাসেবা দিচ্ছি। হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক নাজমুল হাসান বলেন, শিশুটির শারীরিক অবস্থা ভালো নয়। শরীরের বিভিন্ন জায়গা ঝলসে যাওয়ায় ওর কিডনি ঝুঁকিতে রয়েছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা অথবা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে নেওয়া প্রয়োজন।

ফেনী মডেল থানার ওসি আবুল কালাম আজাদ শিশু নির্যাতনের ঘটনায় শাহানা আক্তার শাহেনীসহ চারজনকে আটকের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, এ ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।

এদিকে পুলিশকে শাহেনী জানান, বাংলা চলচ্চিত্রের ৪৫টি ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি। বিগত ৪ বছর তিনি অভিনয় থেকে দূরে সরে এসেছেন। স্থানীয় একটি সূত্র জানিয়েছে, শাহেনী বাংলা চলচ্চিত্রের অশ্লীল যুগে পার্শ্ব চরিত্রের অভিনেত্রী ছিল। বেপরোয়া জীবন যাপনের কারণে দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে নিজ পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন। স্বামীর সঙ্গেও তার যোগাযোগ নেই।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads