• শনিবার, ৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪২৯
ভেস্তে গেছে জঙ্গিদের মিশন

ভেস্তে গেছে জঙ্গিদের মিশন

ছবি : বাংলাদেশের খবর

অপরাধ

নির্বাচন ঘিরে নাশকতার পরিকল্পনা

ভেস্তে গেছে জঙ্গিদের মিশন

  • আজাদ হোসেন সুমন
  • প্রকাশিত ০৬ জানুয়ারি ২০১৯

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বড় ধরনের নাশকতার পরিকল্পনা ছিল জঙ্গিদের। এ লক্ষ্যে নব্য জেএমবি সদস্যরা জেলে বসেই করে চিঠি চালাচালি। তবে তাদের একটি চিঠি গন্তব্যে পৌঁছার আগেই গোয়েন্দাদের হাতে পড়ে। সেই চিঠির সূত্র ধরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে আটক করে কয়েকজন জঙ্গিকে। ফলে নব্য জেএমবির নির্বাচন কেন্দ্রিক নাশকতার পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। তবে আনসারুল্লাহ বাংলা টিম প্রধান মেজর জিয়াসহ অধরা রয়ে গেছে চিহ্নিত অর্ধশত জঙ্গি। গ্রেফতার হওয়ার পর জামিনে মুক্তি পেয়ে লাপাত্তা হয়ে গেছে আরো শতাধিক। গোয়েন্দাদের ধারণা, এদের একটি অংশ পার্শ্ববর্তী দেশে চলে গেলেও বড় অংশটি দেশেই ছদ্মবেশে ঘাপটি মেরে আছে। তারা যেকোনো সময়ই করতে দেশের অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা চালাতে পারে।

একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা সূত্র জানায়, মেজর জিয়া অত্যন্ত ধূর্ত- প্রায় ১ বছর আগে সাভারে ও চট্টগ্রামে তার উপস্থিতি টের পাওয়া গেলেও এখন তার কোনো হদিস নেই। জিয়া বাংলাদেশে আছে, নাকি সীমান্ত পার হয়ে ভারতে অবস্থান নিয়েছে সেটাও নিশ্চিত নয়।

একটি সূত্রটির মতে, মেজর জিয়ার অনুসারী ও নব্য জেএমবির কতিপয় সদস্য একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নাশকতার জন্য সীমান্ত পথে বাংলাদেশে ঢোকে। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সতর্কতা ও নজরদারির কারণে তারা সুবিধা করতে পারেনি। তবে এখন তারা ঘাপটি মেরে আছে।

এ ছাড়াও হরকাতুল জিহাদ, জেএমবি, হিজবুত তাহরিরসহ নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠনগুলোর সদস্যরা এখন একজোট হয়েছে বলেও জানিয়েছে সূত্রটি। জঙ্গিরা দেশের উত্তরাঞ্চল, পার্বত্যাঞ্চল, দুর্গম চরাঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পান দোকানদার, হকার, মিস্ত্রি, বাস-ট্রাকচালকের সহকারী সেজে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার এড়াতে বাইরের লোকদের দলে না টেনে পরিবারের সদস্য, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবকেই জঙ্গিবাদী মতাদর্শে উদ্বুদ্ধ করছে।

লোকমান হাকিম নামে এক জঙ্গি রাজশাহী অঞ্চলের নেতৃত্বে রয়েছে। নব্য জেএমবির এই নেতা সমপ্রতি রাজশহীর বিভিন্ন এলাকায় গোপনে বৈঠক আয়োজন, উগ্রবাদী বই বিতরণ, চাঁদার টাকা আদায়, জিহাদি দাওয়াত ইত্যাদি কর্মকাণ্ডে অংশ নেয়।

পুলিশ সদর দফতর সূত্র বলছে, জঙ্গি মামলাগুলোয় বিভিন্ন সময় জামিন নিয়ে অন্তত শতাধিক আসামি পলাতক রয়েছে। সিরিয়ায় উগ্রপন্থি ইসলামিক স্টেটের (আইএস) নেতা ব্রিটিশ নাগরিক সামিউন রহমান ইবনে হামদান ২০১৬ সালে ঢাকায় ‘মুজাহিদ’ সংগ্রহে এসে গ্রেফতার হয়। তার বিরুদ্ধে মামলাও হয়। তবে ২০১৭ সালে হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়ে এখনো লাপাত্তা সে।

এ ছাড়া বিভিন্ন সময়ে জামিন নিয়ে পলাতক জঙ্গিদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- কাওছার হোসেন, কামাল উদ্দিন, মো. আজমীর, গোলাম সারওয়ার, মুফতি আবদুল হাই, মুফতি শফিকুর রহমান, জাহাঙ্গীর আলম, নূর ইসলাম, আমিনুল মুরসালিন, মহিবুল মোত্তাকিন, রফিকুল ইসলাম মিরাজ ও মশিউর রহমান, তানভীর, তৌহিদুল, সাইদুর, সাইফুল, রেজাউল, নাঈম, জুম্মন, আমিনুল, জঙ্গি আবদুল আকরাম, জুনায়েদ রহমান, মানিক, মাজিদ, সাজেদুর, ফারুক, শফিক, মিলন, কফিল উদ্দিন ওরফে রব মুন্সি, আজিবুল ইসলাম ওরফে আজিজুল, শাহান শাহ, হামিদুর রহমান, বজলুর রহমান, বাবর, শরিফ, খাইরুল ইসলাম, ওয়ালিউল্লাহ ওরফে হামিদ, জাকারিয়া, সবুজ, নাদিম, ময়েজ উদ্দিন, মহব্বত ওরফে তিতুমীর ওরফে নাহিদ প্রমুখ।

এ ব্যাপারে পুলিশের অ্যান্টি টেররিজম ইউনিট প্রধান আবুল কাসেম বাংলাদেশের খবরকে বলেন, জঙ্গিরা বিক্ষিপ্তভাবে কোথাও কোথাও আছে। এবারের নির্বাচনের তারা সক্রিয় হতে পারে- এরকম সংবাদ পেয়ে আমরা নড়ে চড়ে বসি। আমাদের তৎরতা দেখে ওরা আর এগুতে সাহস পায়নি।

তিনি মেজর জিয়া প্রসঙ্গে বলেন, মাস্টারমাইন্ড লেভেলে শুধু মেজর জিয়াই বাকি আছে। তা ছাড়া তানভির কাদেরী, তামিম চৌধুরী, মারজানসহ সব শীর্ষ জঙ্গি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাউন্টার ্যাটাকে নিহত হয়েছে। মেজর জিয়া তার নিজের নেটওয়ার্ক থেকে বিচ্ছিন্ন আছে-আমরা ইতিমধ্যে তার নেটওয়ার্ক সম্পর্কে অনেক ধারনা পেয়েছি। সে এরপর অ্যাকটিভ হওয়ার চেষ্টা করলে ধরা পড়ে যাবে।

আবুল কাসেম বলেন, আমরা একদিনের জন্যও হাল ছাড়িনি। জঙ্গি পিছু লেগে আছে। ফলে হলি আর্টিজানের হামলার পর তারা চেষ্টা করেও কোথাও কোনো ঘটনা ঘটাতে পারেনি। বরং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একের পর এক অভিযানে তাদের মিশনগুলো ব্যর্থ হয়ে গেছে।

২০১৬ সালের ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার পর দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জঙ্গিদের বিরুদ্ধে ‘ক্রুশেড’ ঘোষণা করে মাঠে নামে। এরপর কল্যাণপুরে ‘অপারেশন স্টর্ম ২৬’, রূপনগরে ‘অপারেশন রূপনগর’, আজিমপুরে ‘অপারেশন আজিমপুর’, মোহাম্মদপুরে ‘মোহাম্মদপুর  বেড়িবাঁধ’, নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়ায় ‘অপারেশন হিট স্ট্রং ২৭’, গাজীপুরে ‘অপারেশন গাজীপুর’, মৌলভীবাজারের নাসিরপুরে ‘অপারেশন হিট ব্যাক’ ও বড়হাটে ‘অপারেশন ম্যাক্সিমাস’, কুমিল্লার কোর্টবাড়ীতে ‘অপারেশন স্ট্রাইক আউট’, ঝিনাইদহের পোড়ামাটিতে ‘অপারেশন সাউথ প’, চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে ‘অপারেশন ঈগলহাট’, ঝিনাইদহের মহেশপুরে ‘অপারেশন শাটল স্পিড’, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে ‘অপারেশন অ্যাসল্ট ১৬’ ও রাজশাহীর  গোদাগাড়িতে ‘অপারেশন সান ডেভিল’ পরিচালনা করা হয়। এসব অভিযানে ৫৯ জন শীর্ষ জঙ্গি মারা যায়। গ্রেফতার করা হয় প্রায় ৫০০ জঙ্গিকে। উদ্ধার করা হয় বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরকসহ গুলি ও অস্ত্র।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads