• মঙ্গলবার, ২১ মে ২০২৪, ৭ জৈষ্ঠ ১৪২৮
দিনে চাকরি রাতে ডাকাতি

রাজধানীর দিয়াবাড়ী থেকে আটকের পর গতকাল র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে ডাকাতদের হাজির করা হয়

ছবি : বাংলাদেশের খবর

অপরাধ

দিনে চাকরি রাতে ডাকাতি

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০৫ মার্চ ২০১৯

রাজধানীর দিয়াবাড়ী এলাকা থেকে একদল তরুণ ডাকাতকে আটক করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। গত রোববার রাতে নয় সদস্যের ওই ডাকাতদলকে আটক করে র্যাব-১। ১৯ থেকে ২৫ বছর বয়সী এই ডাকাতদলের সদস্যরা দিনের বেলায় ভিন্ন ভিন্ন পেশায় চাকরি করে। সন্ধ্যা নামলেই দিয়াবাড়ী এলাকায় তারা একত্রিত হতো। রাতের অন্ধকারে চালাত ভয়ঙ্কর ডাকাতি। এই এলাকায় চলাচলরত প্রাইভেট গাড়িগুলোকে তারা সুকৌশলে নির্জন স্থানে নিয়ে চালাত ভয়ানক কর্মকাণ্ড। অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে কিংবা শারীরিক নির্যাতন করে এই এলাকায় বেড়াতে আসা লোকদের কাছ থেকে মোবাইল, টাকা-পয়সা, স্বর্ণালঙ্কারসহ মূল্যবান সামগ্রী কেড়ে নিত তারা।গত ১ মার্চ সন্ধ্যা ৭টায় উত্তরা ১২ নম্বর সেক্টরের ৩ নম্বর রোড হয়ে সাইকেলে যাচ্ছিলেন বেসরকারি অফিসের কর্মী বাপ্পী মুন্সী। পথে হঠাৎ তার সাইকেল থামানো হয়। কিছু বুঝে ওঠার আগেই মাথায় ইটের আঘাত। এরপর কাছে গচ্ছিত কোম্পানির এক লাখ টাকা ও মোবাইল কেড়ে নেয় ওই ডাকাতদল।

বিষয়টি জানিয়ে র্যাব-১ এর কাছে অভিযোগ করেন তিনি। এরপর এই চক্রটিকে ধরতে অভিযানে নামে র্যাব। গত রোববার রাতে র্যাব-১ এর স্কোয়াড কমান্ডার (সিপিসি-২) সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) সালাউদ্দিনের নেতৃত্বে একটি দল দিয়াবাড়ী এলাকায় অভিযান চালিয়ে ওই চক্রের মূলহোতাসহ ৯ জনকে আটক করে। তারা হলো আসলাম আলম স্বাধীন (২৫), আশরাফুল ইসলাম সনি ওরফে বিশু (২৫), রবিন (২৫), শামীম ইসলাম (২২), নাজমুল হাসান (২১), নিজাম উদ্দিন অপু (২৫), মিজানুর রহমান (২৩), তাইমুল ইসলাম (১৯) ও মামুন (১৯)। ডাকাতদলের সদস্যদের কাছ থেকে একটি বন্দুক, দুই রাউন্ড কার্তুজ, দুটি চাপাতিসহ বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করে র্যাব।

র্যাব-১ জানিয়েছে, এই ডাকাত চক্রের সদস্যরা দিনে ভিন্ন ভিন্ন চাকরি করে। সন্ধ্যা নামলেই দিয়াবাড়ীতে একত্রিত হতো তারা। ১০-১২ জন মিলে ইয়াবা ব্যবসার সিন্ডিকেটের পাশাপাশি গড়ে তোলে একটি সংঘবদ্ধ ডাকাতদল। এ এলাকায় বেড়াতে আসা কিংবা চলাচলরত লোকদের টার্গেট করে মোবাইল, টাকা-পয়সা, স্বর্ণালঙ্কারসহ মূল্যবান সামগ্রী হাতিয়ে নিত ওই দলের সদস্যরা।

গতকাল সোমবার দুপুরে কারওয়ানবাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-১-এর অধিনায়ক (সিও) লেফটেন্যান্ট কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম আটক ডাকাতদলের সদস্যদের বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন। তিনি জানান, ডাকাতদলটি দীর্ঘদিন ধরে যোগসাজশে দিয়াবাড়ী এলাকায় ডাকাতি চালিয়ে আসছিল। ওই এলাকায় ঘুরতে আসা লোকজনকে সন্ধ্যার পর অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে সর্বস্ব কেড়ে নিত। ওই রোডে চলাচলরত প্রাইভেটকারকে টার্গেট করত চক্রটি।

পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী চক্রের সদস্যরা ওঁৎ পেতে থাকত এবং কোনো প্রাইভেট গাড়ি দেখলেই তার গতিরোধ করে রাস্তার কাজ চলছে বা ভাঙা বলে নির্জন রোডে যাওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করত। সেই সড়কে আগে থেকেই ডাকাতদলের অন্য সদস্যরা প্রস্তুত থাকত। চলন্ত গাড়ি থামানোর জন্য রশি ও রোড ব্লকার ব্যবহার করত। কোনো কোনো গাড়ির পেছন থেকে পাথর বা ইট ছুড়ে চালককে গাড়ি থামাতে বাধ্য করত। কখনোবা গাড়ির সামনের গ্লাসে ডিম ছুড়ে মারত। ফলে চালক কিছুই দেখতে না পেয়ে গাড়ি থামাতে বাধ্য হতেন। সেই সুযোগে অস্ত্র দিয়ে জিম্মি করে ভয়ভীতি দেখিয়ে কখনোবা শারীরিকভাবে নির্যাতন করে সবকিছু লুট করে পালিয়ে যেত চক্রটি।

আটক স্বাধীন এ চক্রের মূলহোতা উল্লেখ করে র্যাব-১-এর অধিনায়ক বলেন, স্বাধীন ইয়াবা সেবনের পাশাপাশি ইয়াবার ব্যবসা করত। গত জুনে ইয়াবাসহ স্বাধীনকে আটক করেছিল পুলিশ। জামিনে বের হয়ে সে আবারো একই কাজে জড়িয়ে পড়ে। স্বাধীনের নেতৃত্বে ১০-১২ জন মিলে সংঘবদ্ধ এ ডাকাতচক্রটি গড়ে তোলে।

চক্রটির সদস্যরা দিনের বেলা ভিন্ন ভিন্ন পেশায় নিয়োজিত থাকলেও সন্ধ্যার পর দিয়াবাড়ী এলাকায় ডাকাতি চালিয়ে আসছিল। প্রত্যেকে আলাদা মোবাইল ব্যবহার করত। প্রত্যেকের মধ্যে ভয়েস মেসেজ চালাচালি করে একত্রিত হতো।

সারওয়ার বিন কাশেম আরো বলেন, দিয়াবাড়ী এলাকায় আরো দুটি ডাকাতদল সক্রিয় বলে আমরা জানতে পেরেছি। তাদেরও গ্রেফতারে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads