• বৃহস্পতিবার, ২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪২৯
জঙ্গিরা এখন অভিভাবকহীন

প্রতীকী ছবি

অপরাধ

জঙ্গিরা এখন অভিভাবকহীন

  • আজাদ হোসেন সুমন
  • প্রকাশিত ২৭ এপ্রিল ২০১৯

নিউজিল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কায় জঙ্গি হামলার ঘটনায় বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও জঙ্গি হামলার আশঙ্কা করছে সরকার। আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী সংগঠন আইএসের অনুসারীরা এ হামলা চালাতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সম্ভাব্য পরিস্থিতি মোকাবেলায় বর্তমানে সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় রয়েছে দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তবে অপরাধ বিশ্লেষক ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্তাব্যক্তিদের অভিমত, এ দেশের জঙ্গিরা বড় ধরনের হামলা চালাতে সক্ষম নয়।

অপরাধ বিশ্লেষকদের মতে, জঙ্গিবাদ এখন নির্দিষ্ট কোনো দেশের সমস্যা নয়। এটা এখন বৈশ্বিক সমস্যা। কারণ জঙ্গিরা নানা অজুহাতে বিশ্বের যে কোনো দেশে হামলা চালাতে পারে। তারা ধর্মের দোহাই দিয়ে, জিহাদের কথা বলে জানমালের ক্ষতি সাধন করে। আসলে জঙ্গিরা কী চায় তারা নিজেরাও জানে না। তাদের উদ্দেশ্য ভালো হলে শত শত নিরীহ মানুষকে হত্যা করত না বলে মনে করেন বিশিষ্ট অপরাধ বিশ্লেষক সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. সাখাওয়াত হোসেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশে কেন, জঙ্গিরা যে কোনো সময় বিশ্বের যে কোনো দেশে হামলা চালাতে পারে। তবে বাংলাদেশে বড় ধরনের হামলা চালানোর সক্ষমতা এ মুহূর্তে জঙ্গিদের নেই।

এদিকে কারাগারে বন্দি থেকেও তৎপরতা বন্ধ নেই জঙ্গিদের। কারাগারে বসে সীমিত পরিসরে হলেও বিভিন্নভাবে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে তারা। যেসব জঙ্গিকে কারাগারে নেওয়া হচ্ছে, তারা সেখানে অন্যদেরও জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা চালাচ্ছে বলে জানিয়েছেন পুলিশের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। বিভিন্ন পর্যায়ের ৫৭৭ জন জঙ্গি এখন কারাগারে বন্দি আছে।

জঙ্গিবাদ নিয়ে কাজ করেন পুলিশ সদর দফতরের এমন একজন কর্মকর্তা জানান, তাদের কাছে গোয়েন্দা তথ্য রয়েছে যে, বিভিন্ন ঘটনা ও মামলায় গ্রেফতার হওয়া জঙ্গিরা কারাগারে গিয়েও তাদের তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে। বিষয়টি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও কারা কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে অবহিত করা হয়েছে। কারা কর্তৃপক্ষ সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে বলেও পুলিশকে আশ্বস্ত করা হয়েছে।

পুলিশ সদর দফতর ও ঢাকা মহানগর পুলিশের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাজধানীর গুলশানে হলি আর্টিজানসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে জঙ্গিবিরোধী ১৬টি বড় অভিযান পরিচালনা করে পুলিশ। এর মধ্যে হলি আর্টিজানে ‘অপারেশন থান্ডার বোল্ট’, কল্যাণপুরে ‘অপারেশন স্টর্ম ২৬’, রূপনগরে ‘অপারেশন রূপনগর’, আজিমপুরে ‘অপারেশন আজিমপুর’, মোহাম্মদপুরে ‘মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ’, নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়ায় ‘অপারেশন হিট স্ট্রম ২৭’, গাজীপুরে ‘অপারেশন গাজীপুর’, মৌলভীবাজারের নাসিরপুরে ‘অপারেশন হিট ব্যাক’ ও বড়হাটে ‘অপারেশন ম্যাক্সিমাস’, কুমিল্লার কোর্টবাড়িতে ‘অপারেশন স্ট্রাইক আউট’, ঝিনাইদহের পোড়ামাটিতে ‘অপারেশন সাউথ প’, চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে ‘অপারেশন ঈগলহাট’, ঝিনাইদহের মহেশপুরে ‘অপারেশন শাটল স্পিড’, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে ‘অপারেশন অ্যাসল্ট ১৬’ ও রাজশাহীর গোদাগাড়িতে ‘অপারেশন সান ডেভিল’ পরিচালনা করা হয়। জঙ্গিদের বিরুদ্ধে এসব অভিযানে ৫৯ জন শীর্ষ জঙ্গি মারা যায়। উদ্ধার করা হয় বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরকসহ গুলি ও অস্ত্র।

এ ব্যাপারে পুলিশ সদর দফতরের অতিরিক্ত আইজিপি (এইচআরএম) মো. শফিকুল ইসলাম বাংলাদেশের খবরকে বলেন, জঙ্গি হামলার বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলা মুশকিল। কারণ ওরা যেহেতু জঙ্গিবাদে বিশ্বাসী এবং এই পথে নিহত হলে সরাসরি বেহেশতে যাওয়া যায় বলে বিশ্বাস করে সেহেতু তারা সংখ্যায় একজনও হলে আত্মঘাতী হামলা চালাতে পারে। এটা মাথায় রেখেই আমরা কাজ করছি। তবে উল্লিখিত অভিযানের ফলে বাংলাদেশ থেকে জঙ্গিবাদ নির্মূল না হলেও তারা এখন অনেক দুর্বল। সংগত কারণেই তারা বাংলাদেশে বড় ধরনের হামলা চালাতে অক্ষম। তিনি বলেন, জঙ্গিবাদ দমনে বাংলাদেশের সফলতা বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত ও সমাদৃত। আমি নিজে জঙ্গিবিরোধী একটি আন্তর্জাতিক সন্মেলনে যোগ দিয়েছিলাম। সেখানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আসা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্তারা আমার কাছে জানতে চেয়েছেন, তোমরা কী করে এত সহজে বাংলাদেশ থেকে জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণ করলে। একটি ঘটনার (হলি আর্টিজান) পর দেশ থেকে অনেকগুলো হামলার আশঙ্কা নস্যাৎ করে দিয়ে শত শত জঙ্গি গ্রেফতার করলে। জবাবে বলেছি, বাংলাদেশ পুলিশ দেশ মাতৃকার টানে দায়িত্ববোধ থেকে নিজেদের জীবন বিপন্ন করে এ অসাধ্যকে সাধন করতে সক্ষম হয়েছে।

সূত্র জানায়, নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের মসজিদের হামলার পর বাংলাদেশের জঙ্গিরা নড়েচড়ে বসে। তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধম্যে জঙ্গি হামলার হুমকিও দেয়। এতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সব ইউনিট ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা আঁটঘাট বেেঁধ মাঠে নামে। জঙ্গিদের অনলাইনগুলো আইডেন্টিফাই করে ওত পেতে থাকে পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইউনিট, অ্যান্টি-টেরোরিজম ও কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট। তবে জঙ্গিদের হুমকি পর্যন্তই শেষ। শ্রীলঙ্কায় জঙ্গি হামলার পরও তারা সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছে বলে তথ্য পেয়েছে গোয়েন্দারা। ইতোমধ্যে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়েছে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে। সর্বত্র সোর্স নিয়োগ করার পাশাপাশি নেওয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা। জঙ্গিরা তাদের নেটওয়ার্ক সচল করে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করলেই গোয়েন্দা জালে আটকে যাবে, এমনভাবেই গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক সেট করা হয়েছে। এ ছাড়া একমাত্র জীবিত মাস্টারমাইন্ড মেজর জিয়া দেশে নেই এটা নিশ্চিত। তিনি পার্শ্ববর্তী একটি দেশে আত্মগোপন করে আছেন। মেজর জাহিদ, তামিম তানভীর কাদেরী, মারজানসহ সব শীর্ষ জঙ্গি ইতোমধ্যে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন। ফলে জঙ্গিরা এখন নেতৃত্বহীন, অভিভাবকহীন, এতিমের মতো। বড় হামলা চালাতে যে পরিকল্পপনা দরকার, যে অর্থ, অস্ত্র, লোকবল দরকার- কোনো কিছুই এখন তাদের নেই। সুতরাং বড় ধরনের হামলা বাংলাদেশের ভেতরে আপাতত সম্ভব নয়।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads