• সোমবার, ৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪২৯
রিফাত হত্যার ষড়যন্ত্রকারী মিন্নি

আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি

ফাইল ছবি

অপরাধ

১২শ পৃষ্ঠার চার্জশিট

রিফাত হত্যার ষড়যন্ত্রকারী মিন্নি

  • বরগুনা প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯

বরগুনায় আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় স্ত্রী ও হত্যার প্রত্যক্ষদর্শী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিসহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে পুলিশের দাখিল করা অভিযোগপত্রে স্বাক্ষর করেছেন আদালত। বরগুনার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতের বিচারক মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম গাজী এক হাজার ২৩২ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্রে স্বাক্ষর করে নথিভুক্ত করেছেন। অভিযোগপত্রে বাদীসহ মোট ৭৫ জনকে সাক্ষী রাখা হয়েছে। এ ছাড়াও তদন্তে প্রাপ্ত ৫০ প্রকারের আলামত অভিযোগপত্রের সঙ্গে জমা দেওয়া হয়েছে।

বয়সের ভিত্তিতে দাখিল করা দুই খণ্ডের অভিযোগপত্রের প্রথম খণ্ডে আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিসহ ১০ জন আসামি রাখা হয়েছে। এদের মধ্যে রিফাত ফরাজীকে এক নম্বর আসামি করা হয়েছে। দ্বিতীয় খণ্ডে রয়েছে ১৪ জন কিশোরের নাম। এতে রিফাত ফরাজীর ছোট ভাই রিশান ফরাজীকে এক নম্বর আসামি করা হয়েছে। মিন্নির জামিন শুনানির জন্য বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে এ মামলার মূল নথি রয়েছে। জেলা ও দায়রা জজ আদালত থেকে মূল নথি আসার পর বরগুনা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে অভিযোগের ওপর শুনানি শেষে আদালত ওই অভিযোগপত্র গ্রহণ করলে পরবর্তী বিচারিক কার্যক্রম শুরু হবে বলে সূত্র জানায়।

অভিযোগপত্রের সঙ্গে যা আছে : রিফাত শরীফ হত্যা মামলার পুলিশের দাখিল করা মূল অভিযোগপত্র দুটি খণ্ডে মোট ৩৪ পৃষ্ঠার। এর প্রথম খণ্ডে মিন্নিসহ অন্য একজনের বিরুদ্ধে একটি খণ্ড ১৬ পৃষ্ঠার এবং কিশোর অপরাধীদের অভিযোগপত্র ১৮ পৃষ্ঠার। এ ছাড়াও ১৫ জন আসামির ফৌজদারি কার্যবিধি আইনের ১৬৪ ধারার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি জমা দেওয়া হয়েছে। মামলায় ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬১ ধারায় বিভিন্ন সময়ে পুলিশের গ্রহণ করা ৭৫ জন সাক্ষীর জবানবন্দি, ৫০টির বেশি আলামতের জব্দ তালিকা ও বিভিন্ন সময়ে আসামিদের ব্যবহূত মুঠোফোনের কল ডিটেইলস অভিযোগপত্রের সঙ্গে আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে।

যেসব আলামত জব্দ করেছে পুলিশ : অভিযোগপত্রের সঙ্গে আলামত হিসেবে একটি স্যামসাং ও একটি ধূসর রঙের অ্যান্ড্রয়েড মুঠোফোন, হত্যায় ব্যবহূত রামদা, বন্ড-০০৭ গ্রুপের সদস্যদের মেসেঞ্জার গ্রুপের প্রোফাইল ছবির একটি স্ক্রিনশট, ঘটনার বিষয়ে বিভিন্ন স্ট্যাটাসের ১২ কপি স্ক্রিনশট, বন্ড-০০৭ গ্রুপের ১১ জন সদস্যের প্রোফাইল ছবির ১১টি স্ক্রিনশট, বন্ড-০০৭ গ্রুপের মেসেঞ্জার গ্রুপে দেওয়া ১১ জন সদস্যের মেসেঞ্জারের ১১ কপি স্ক্রিনশটের প্রিন্টেড কপি জমা দেওয়া হয়েছে।

মামলায় মিন্নির বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ ও আলামত জমা দেওয়া হয়েছে : তদন্তকারী কর্মকর্তা রোববার বিকালে আদালতে ২৪ জন আসামির বিরুদ্ধে যে অভিযোগ দাখিল করেছেন, এর প্রথম খণ্ডের অভিযোগপত্রে সাত নম্বর আসামি করা হয়েছে আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিকে। এতে মিন্নির বিরুদ্ধে ‘হত্যার ষড়যন্ত্রের’ অভিযোগ আনা হয়েছে। অভিযোগপত্রে রিফাত হত্যার আগে ও পরে মিন্নির সঙ্গে ঘাতক নয়ন বন্ড ও রিফাত ফরাজীর সঙ্গে একাধিকবার ফোনে যোগাযোগ হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া অভিযোগপত্রে রিফাতকে নয়ন বন্ডরা কুপিয়ে জখম করার পরও মুঠোফোনে যোগাযোগ ও নয়ন বন্ডের সঙ্গে মুঠোফোনে ক্ষুদেবার্তা দেওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। তদন্তকারী কর্মকর্তার আদালতে দাখিল করা অভিযোগপত্রে মিন্নির বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের বিপরীতে নয়ন বন্ডের মায়ের নামে নিবন্ধিত একটি সিম গোপনে মিন্নি ব্যবহার করত-এমন অভিযোগ এনে ওই নম্বরের সঙ্গে নয়ন বন্ডের বিভিন্ন সময়ে কললিস্ট ও কল ডিটেইলস জমা দিয়েছেন। এছাড়া আলামত হিসেবে নিহত নয়ন বন্ডের বাসা থেকে জব্দ সালোয়ার কামিজ, আই ব্রো, মিন্নির ছবি, মাথা আঁচড়ানোর চিরুনি, চিরুনিতে পেঁচানো নারীদের চুল জমা দেওয়া হয়েছে। অভিযোগপত্রের বিবরণীতে অধিকাংশ জায়গায় মিন্নির বিরুদ্ধে রিফাত হত্যায় ষড়যন্ত্রের কথা বলা হয়েছে।

রিফাত শরীফ হত্যার মূল কারণ হিসেবে যা দেখানো হয়েছে অভিযোগপত্রে : রিফাত শরীফকে হত্যার মূল কারণ হিসেবে, বিয়েপরবর্তী নয়ন বন্ডের সঙ্গে মিন্নির সম্পর্কে সৃষ্ট বিরোধিতার জেরেই রিফাতকে হত্যার পরিকল্পনা করে মিন্নি ও নয়ন বন্ড এমনটি উল্লেখ করা হয়েছে। বিবরণীতে বলা হয়, প্রথমে মিন্নি নয়নকে বিয়ে করে। বিষয়টি গোপন রেখে ফের রিফাত শরীফকে বিয়ে করে মিন্নি এবং নয়ন বন্ডের সঙ্গে গোপনে যোগাযোগ ও বাসায় যাতায়াত অব্যাহত রাখে। এ নিয়ে রিফাত শরীফের সঙ্গে মিন্নির দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। সর্বশেষ হেলাল নামের এক যুবকের কাছ থেকে রিফাত শরীফের মুঠোফোন কেড়ে নেওয়া নিয়ে নয়নের দ্বন্দ্ব চূড়ান্ত রূপ নেয় এবং সবমিলিয়ে মিন্নি ও নয়ন বন্ড মিলে রিফাত শরীফকে হত্যার ষড়যন্ত্র করে মর্মে উল্লেখ করা হয়েছে। আর এসব অভিযোগে মিন্নির বিরুদ্ধে ১২০-বি(১) ধারায় অপরাধ সংগঠিত করার অভিযোগ আনা হয়েছে।

বরগুনার পাবলিক প্রসিকিউটর ভূবন চন্দ্র হাওলাদার দণ্ডবিধি আইনের ১২০-বি (১) ধারা সম্পর্কে বলেন, এ ধারায় কেউ অপরাধ সংগঠিত করলে তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণিত হলে মৃত্যুদণ্ড, যাবজ্জীবন কারাবাস বা দুই বছর বা ততোধিক মেয়াদের সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হতে পারেন। আদালত অপরাধ বিবেচনায় এর যেকোনো একটি শাস্তি দিতে পারেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হুমায়ূন কবির অভিযোগপত্রের ব্যাপারে কোনো তথ্য জানাতে রাজি হননি।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads