• মঙ্গলবার, ৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪২৯

অপরাধ

অবৈধ কর্মকাণ্ড গুঁড়িয়ে দিতে মাঠ প্রশাসনকে নির্দেশ

সারা দেশে অভিযান চলবে পিছপা নয়

  • সাইদ আরমান
  • প্রকাশিত ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯

ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের জন্য গড়ে তোলা হয়েছে ক্লাব। তবে মূল দায়িত্বে খেয়াল নেই ক্লাবগুলোর। রাজধানীসহ ক্লাবগুলো জুয়ার আসর হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। ক্ষমতাসীন দলের সংগঠনগুলো এসব ব্যবহার করে অবৈধ কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে। এসব অবৈধ কর্মকাণ্ড গুঁড়িয়ে দিতে মাঠ প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশ পাঠানো হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সতর্ক বার্তায় নড়েচড়ে বসেছেন সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। রাজধানী ঢাকা ও চট্টগ্রামে অভিযান চলছে সরকারপ্রধানের সম্মতিতে। এসব অবৈধ কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুরো পরিস্থিতি ও সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করছেন। তাকে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন ব্যক্তি ব্রিফ করেছেন। সামাজিক অবক্ষয়ের এই ধারা ঠেকাতে যা যা করা দরকার, তার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। তবে পরিস্থিতি ঘোলা করে কেউ যাতে ফায়দা নিতে না পারে, সেদিকে সতর্ক সরকার।

জানা গেছে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে মাদক, মাঠ পর্যায়ে ক্লাব পরিচালনা করে অবৈধ কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে— এমন সংগঠনগুলোর তালিকা করতে পুলিশ সুপার ও থানাগুলোর ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে মাঠ প্রশাসনের অংশ হিসেবে জেলা প্রশাসকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পুলিশ ও প্রশাসন মিলে এসব অবৈধ আসর শনাক্ত করে অভিযানে যেতে হবে। কোনো ধরনের চাপের কাছে মাথানত করা এবং মদতদাতাদের ছাড় দেওয়া যাবে না।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান গতকাল জানিয়েছেন, দেশে ক্লাবের নামে ক্যাসিনো পরিচালনা অবৈধ। ক্যাসিনো এ দেশে আইনসম্মত ব্যবসা নয়। আইনের বাইরে আমরা কোনো ব্যবসা করতে দেব না। এটা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ। জানা গেছে, রাজধানী ও চট্টগ্রামের ক্লাবগুলোতে অভিযান চলছে। গতকাল ঢাকা নতুন করে ৪টি ক্লাবে অভিযানে নামে পুলিশ। এর আগে এলিট ফোর্স র্যাব অভিযান পরিচালনা করে।

সরকারের কর্মকর্তারা বলছেন, ক্ষমতাসীনদের মদতকে সারা দেশেই ক্লাবগুলো পরিচালিত হচ্ছে এক ধরনের দখলের মাধ্যমে। তবে এসব হচ্ছে পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে যৌথ ভাগ-বাঁটোয়ারায়। ফলে শিগগিরই রাজধানীসহ গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোর যেসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, তাদের প্রত্যাহার অথবা বদলি করা হতে পারে।

জানা গেছে, ঢাকা মহানগর পুলিশ ও গোয়েন্দা বিভাগের সাবেক ও বর্তমান বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার নাম এসেছে এই অভিযানের পর। গত কয়েকদিনে গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে গিয়ে অস্বস্তি তৈরি হয়েছে। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নাম যেন কিছুতেই প্রকাশ না পায়, সেই চেষ্টা চালাচ্ছেন কোনো কোনো কর্মকর্তা। অনেকে বলছেন, মামলার তদন্ত র্যাবই করুক। আবার কারো কারো ধারণা, আসামি হস্তান্তরের আগেই র্যাব জিজ্ঞাসাবাদ করে ফাইল বানিয়ে রেখেছে।

গতকাল সরকারের একজন প্রভাবশালী মন্ত্রী আলাপকালে সচিবালয়ে বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ক্যাসিনো-কাণ্ডে সরকার বিব্রত। পরিস্থিতি এতটা নাজুক আমাদের ধারণাতেও ছিল না। আমাদের দলের লোকজনের মদত রয়েছে এমন তথ্যে সরকারের ভাবমূর্তি কিছুটা প্রশ্নের মুখে পড়লেও শুদ্ধি অভিযানে সরকারের ইমেজ বাড়বে। সরকারের হয়ে দ্বিতীয়বারের মতো মন্ত্রিসভায় স্থান পাওয়া এই রাজনীতিক বলেন, শুদ্ধি অভিযান ঠেকিয়ে নিতে অনেকেই বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা করছেন। এতে আওয়ামী লীগের ক্ষতি হবে বলেও বলা হচ্ছে। সাংগাঠনিকভাবে দল কিছুটা দুর্বল হতে পারে। তবে দলের হাইকমান্ড তেমনটি মনে করছে না।

এদিকে সরকারের হঠাৎ এই শুদ্ধি অভিযানে সব খাতের অনিয়ম ও দুর্নীতিবাজদের মধ্যে এক ধরনের ভীতি তৈরি হয়েছে। প্রশাসন, পুলিশ, ব্যাংক খাত থেকে শুরু করে সব শ্রেণির পেশাজীবীর মধ্যে সতর্ক অবস্থান তৈরি হয়েছে। কে কখন শুদ্ধি অভিযানের আওতায় আসছেন তা নিয়ে ভয়ে আছেন দুর্নীতিবাজরা।

বিশ্লেষকরা বলছেন, সাধারণ মানুষ শুদ্ধি অভিযানের পক্ষে অবস্থান ব্যক্ত করেছে। তাই এখনই সঠিক সময় এই উদ্যোগকে এগিয়ে নেওয়ার। রাজনীতিবিদদের কেবল নয়, অন্যদেরও শাস্তির আওতায় আনতে হবে। মদতদাতা ও গডফাদার যাদের নাম আসবে সবাইকে ধরতে হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads