• বুধবার, ১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪২৯
কক্সবাজারের অনলাইন জুয়ার হোতা আটক: বেরিয়ে আসছে চমকপ্রদ তথ্য

সংগৃহীত ছবি

অপরাধ

কক্সবাজারের অনলাইন জুয়ার হোতা আটক: বেরিয়ে আসছে চমকপ্রদ তথ্য

  • মাহাবুবুর রহমান, কক্সবাজার
  • প্রকাশিত ২৮ অক্টোবর ২০১৯

অনলাইন ক্যাসিনো ‘ব্যাট ৩৬৫’ সফ্টওয়্যারের মাধ্যমে জুয়া খেলেন মোস্তফা কামালের নেতৃত্বে কক্সবাজারের বেশিরভাগ জুয়াড়ি। একটি ফেসবুক পেইজ থেকে নিয়ন্ত্রণ করতেন পুরো সিন্ডিকেট। ভার্চুয়াল ডলারের জন্য কক্সবাজারের সব জুয়াড়িদের টাকা একটি নেটালার একাউন্টে পাঠাতেন মোস্তফা। সেই টাকা অবৈধভাবে দুবাই পৌঁছলে আবার নেটালার একাউন্টের মাধ্যমে ভার্চুয়াল ডলার হিসেবে পেত জুয়াড়িরা। তারপর চলতো দেদারছে জুয়া। গুটি কয়েকজন ছাড়া বেশিরভাগই পথে বসেছে অনলাইনে জুয়া খেলে।

ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন কক্সবাজারের অনলাইন জুয়ার 'সম্রাট' এইচএম মোস্তফা কামাল। মোস্তফার দাবী, তার অনলাইন জুয়ার খপ্পরে পড়ে কক্সবাজারের প্রায় ৪ শতাধিক পরিবার নিঃস্ব হয়েছে। এরমধ্যে কেউ কেউ দেউলিয়া হয়ে এলাকা ছাড়তেও বাধ্য হয়েছে।

জানা গেছে, পালানোর সময় বিমানবন্দর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার হন কক্সবাজারের অনলাইন ক্যাসিনো এইচ এম মোস্তফা কামাল (৩০)। তিনি কক্সবাজার শহরের নতুন বাহারছড়া ৬নং জেটি রোড এলাকার হাফিজুর রহমানের ছেলে। এবং জেলা মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রীর ভাইপো। আটকের পর ডিবি তাকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করে। জিজ্ঞাসাবাদে মোস্তফা তার কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, ঢাকা ও দুবাই কেন্দ্রিক বিশাল সিন্ডিকেটের তথ্য দিয়েছেন। তাদেরকে গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রেখেছে ডিবি পুলিশ। 

ডিজিটালা ডিভাইস ব্যবহার করে বাংলাদেশ সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদনবিহীন ই-ট্রানজেকশনের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেন করার অপরাধে মোস্তফা কামালের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেছেন জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের উপপরিদর্শক রাজীব কুমার সূত্রধর। ২৭ অক্টোবর (রোববার) বিকেলে তাকে আদালতে প্রেরণ করা হয়।

ডিবি পুলিশ সূত্র জানায়, কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়ার আর্মি মাঠের এহসান (৩২), নতুন বাহারছড়া মুজিব চেয়ারম্যানের গলি (সিলভারসাইনে জুয়া খেলে) এলাকার মো. জসিম (৩৩), পশ্চিম নতুন বাজারছড়া এলাকার জাহাঙ্গীর (২৮), বিজিবি ক্যাম্প মো. তৈয়ব (২৯), চট্টগ্রামের চকবাজার এলাকার (বর্তমানে দুবাইয়ে থাকে) বাপ্পি (৩০), সাতকানিয়া রসুলাবাদ এলাকার মো. ইফতেখার আরফাত চৌধুরী (২৮) ও ঢাকার বাড্ডা এলাকার তাপস সরকার (৩০) পরস্পর যোগসাজসে অনলাইন ক্যাসিনো ‘ব্যাট ৩৬৫’ সফ্টওয়্যারে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদনহীন ই-ট্রানজেকশনের মাধ্যমে অনলাইনে জুয়া খেলার খবর পায় ডিবি পুলিশ। ওই সংবাদের ভিত্তিতে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে অভিযান চালায় ডিবি পুলিশ। অভিযানে নতুন বাহারছড়া এলাকা থেকে এইচএম মোস্তফা কামালকে গ্রেপ্তার করে।

ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে মোস্তফা কামাল আরও জানান, অনলাইন জুয়া খেলার সঙ্গে শহরের নুনিয়ারছড়া এলাকার রাজু, ঝাউতলা এলাকার ফরিদ, কালুর দোকান এলাকার হোসেন, কালুর দোকান এলাকার জসিম, ৬রং জেটিঘাট এলাকার হারিছ, লালদীঘিরপাড় এলাকার কাউসার, রুমালিয়ারছড়া পিটিস্কুল এলাকার আব্দুল্লাহ, আলীরজাহাল এলাকার মাবুদ, সিটি কলেজ এলাকার মিন্টু, ঘোনারপাড়া এলাকার ফিঙ্গেল, নুনিয়ারছড়া এলাকার নয়ন, ঝাউতলা এলাকার শুভ, ঝাউতলা এলাকার ফরিদ, লিমন সিকদার, সাগর সিকদার ও বাঙালী নিউটনরাও তার সিন্ডিকেটে জড়িত।

অভিযানের সময় মোস্তফা কামালের কাছ থেকে ‘এমআই নাইন টি’ মডেলের মোবাইল উদ্ধার করা হয়। ওই মোবাইলে ব্যাট ৩৬৫ নামক সফ্টওয়্যারসহ অনলাইন জুয়া খেলার আরও বিভিন্ন উপাদান পাওয়া যায়। নেটেলারসহ বিভিন্ন সফ্টওয়্যার ব্যবহার করে ভার্চুয়াল ডলার ট্রান্সফারের উপাদানও পাওয়া যায়।

মোস্তফা কামালের দেয়া তথ্যমতে, জুয়াড়িরা প্রশাসনের দৃষ্টি এড়িয়ে পরস্পরের যোগসাজসে দীর্ঘদিন ধরে অনলাইন জুয়া খেলে আসছে। তাদের অনলাইন জুয়া পরিচালনার জন্য একটি ফেসবুক পেজও রয়েছে। যে পেইজের মডারেটর হলেন- মোস্তফা কামাল, লিমন সিকদার, সাগর সিকদার ও বাঙ্গালী নিউটন।

 

'ব্যাট ৩৬৫' ব্যবহার করে জুয়া খেলার জন্য স্থানীয় জুয়াড়িদের ভার্চুয়াল ডলার প্রয়োজনে হলে ডলার সংগ্রহ করতেন মোস্তফা কামাল। ডলার সংবরাহকারীর ব্যাংক একাউন্টে টাকা জমা দিলে ভার্চুয়াল ডলারের নেটেলার একাউন্টে পাঠিয়ে দেয়। নেটেলার একাউন্ট থেকে উক্ত ভার্চুয়াল ডলার ব্যাট ৩৬৫ সফ্টওয়্যারে ট্রান্সফার করে সেই ভার্চুয়াল ডলার দিয়ে অনলাইনে জুয়া খেলা হয়।

মামলার বাদী ডিবি পুলিশের উপপরিদর্শক রাজীব কুমার সূত্রধর বলেন, ‘মোস্তফা কামালের নেতৃত্বে অন্যান্য জুয়াড়িরা পরস্পরের যোগসাজসে ব্যাট ৩৬৫ নামক সফ্টওয়্যার ব্যবহার করে বাংলাদেশ সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক অনুমোদিত নয় এমন ই-ট্রানজেকশন করে অনলাইনে জুয়া খেলে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২০১৮ এর ৩০/৩৫ ধারায় অপরাধ সংগঠিত করেছে। যার কারণে তাদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে।’

ডিবি পুলিশের কর্মকর্তা মো. মাসুদ খান বলেন, মোস্তফা কামালের খপ্পরে পড়ে অনলাইন জুয়া খেলে কক্সবাজারের ৪ শতাধিক পরিবার নিঃস্ব হয়ে গেছে। অনেকে দেউলিয়া হয়ে ঋণের বোঝা মাথা দিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। আরও ব্যাপক তথ্যের প্রয়োজন হলে তাকে রিমান্ডে আনা হবে বলেও জানান তিনি।

 

ডিবি পুলিশের পরিদর্শক মানস বড়ুয়া বলেন, ‘মোস্তফা কামাল অনলাইন জুয়াড়িদের প্রধান। তার নেতৃত্বে চট্টগ্রাম, ঢাকা ও দুবাইয়ে শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। ইতোমধ্যে মোস্তফা জিজ্ঞাসাবাদে অনেকের নাম স্বীকার করেছে। এদের বাইরে আরও অনেকে রয়েছে। ডিবি পুলিশ বিশাল একটি চক্র সনাক্ত করেছে। সবাইকে নজরদারীতে রাখা হয়েছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads