• মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ৩১ বৈশাখ ১৪২৯
অন্ধ বধিরের টাকায় পকেট ভারী তৈমুরের

ফাইল ছবি

অপরাধ

অন্ধ বধিরের টাকায় পকেট ভারী তৈমুরের

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১১ নভেম্বর ২০২০

প্রতারণা, দুর্নীতি, অন্ধ ও বধির সংস্থার অর্থ আত্মসাৎ, ক্ষমতার অপব্যবহারসহ এমন কোনো অনিয়ম নেই যা করেননি নিজ থেকে খেতাব নেওয়া অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার। লুট করেছেন জাতীয় অন্ধ ও বধির সংস্থার কোটি কোটি টাকা। সেই টাকায় বর্তমানে আলীশান জীবনযাপন করছেন তিনি। এসব প্রতিবন্ধীদের টাকা লুটের দায়ে চলতি বছর সংস্থার নির্বাচনে বিপুল ভোটে ভরাডুবি হয় তার। তার বিরুদ্ধে অন্ধ ও বধিররা দাঁড়িয়েছেন রাস্তায়। করেছেন আন্দোলন সংগ্রাম। তলব করা হয়েছিল দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক)।

অনুসন্ধানে জানা যায়, নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা তৈমুর আলম খন্দকার বিগত ৩০ বছর ধরে বধিরদের সাথে বিভিন্নভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন। তৈমুর নারায়ণগঞ্জ বধির সংঘের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন। একই সাথে ১৯৮৮ সাল থেকে অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার সংস্থার আজীবন সদস্য পদ পায়। বিএনপি জামায়াত জোট সরকারের ক্ষমতাকালীন জোট সরকারের সময়ে বাংলাদেশ ন্যাশনাল ফেডারেশন অব ডেফ (বিএনএফডি) ঢাকার (জাতীয় বধির সংস্থা) সভাপতি ছিলেন হারিছ চৌধুরী। সহ-সভাপতি ছিলেন তৈমুর আলম খন্দকার ও প্রয়াত বিএনপি নেতা নাসিরউদ্দিন আহমেদ পিন্টু। পরবর্তীতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে হারিছ চৌধুরী দেশ ছেড়ে পালালে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বিএনএফডির সভাপতির দায়িত্ব পান সিনিয়র সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার। যা চলতি বছরের জানুয়ারি অবধি জাতীয় অন্ধ ও বধির সংস্থার সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন তিনি। দায়িত্ব পালনকালে বিএনপি জোটের  আমলে খালেদা জিয়ার তৎকালীন রাজনৈতিক সচিব হারিস চৌধুরীর স্ত্রী জোছনে আরা চৌধুরীকে অন্ধ ও বধির সংস্থার ১১টি দোকান বরাদ্দ দেন তিনি সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে। এছাড়া বধির সংস্থার তহবিল তসরুপ করে অন্যদের সহায়তায় প্রায় কোটি টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ রয়েছে তৈমুরের বিরুদ্ধে। পৃথক ঘটনায় তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা করেন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অন্ধ ও বধির সংস্থার অর্থ আত্মসাৎ করায় বধিররা রাস্তায় নেমে তার বিরুদ্ধে মানববন্ধন বিক্ষোভসহ নানাধরনের আন্দোলন করেন। চলতি বছরের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত বধির সংস্থার নির্বাচনে বিপুল ভোটে ভরাডুবি ঘটে তৈমুরের।

অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, বিএনপি জামায়াত জোট আমলে জাতীয় অন্ধ ও বধির সংস্থার সভাপতির পদে আসা অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার সংস্থার লালবাগের জায়গা উদ্ধার করে সেখানে বধির স্কুল ও কলেজ স্থাপন করেন। এছাড়া জাতীয় বধির ব্যাংক স্থাপন, বাংলাদেশের প্রতিটি জেলায় বধির স্কুল ও সংগঠন স্থাপন, আন্তর্জাতিক বধির সম্মেলন বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত করাসহ জাতীয় ইশারা ভাষা ইনস্টিটিউট স্থাপন করানোর স্বপ্ন দেখিয়ে ওই পদ দীর্ঘসময় আগলে রাখেন। অথচ সবকিছু করতেই সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হন তৈমুর আলম। উল্টো বধির সংস্থার জমি ও সম্পদ পছন্দের লোকজনকে পাইয়ে দিয়ে কোটি টাকা আত্মসাৎ করে নিজের পকেট ভারী করেন। ২০০৩-২০০৭ মেয়াদে সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালনকালীন তৈমুর আলম খন্দকার ঢাকার বধির স্কুলের জন্য লালবাগে এক একর এবং নরসিংদী বধির স্কুলের জন্য ৫০ শতাংশ জায়গা ক্রয় করেন। সে সময়ের বাজার মূল্যর ৩ গুণ টাকায় জমিগুলো ক্রয় করার অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। একটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নিজে আর্থিক লাভবান হতেই এই জমি ক্রয় করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ উঠে সে সময়। এছাড়া বিআরটিসির চেয়ারম্যান হিসেবে ৪০ জন বধিরকে ২ লাখ টাকা করে ঘুষ গ্রহণের মাধ্যমে তিনি বিআরটিসিতে চাকরি দেন। জাতীয় বধির হাসপাতাল নির্মাণ করার জন্য কয়েক কোটি টাকার চাঁদাবাজি করে সামান্য কিছু টাকা হাসপাতাল তহবিলে জমা করেন। এছাড়া অনিময় ও দুর্নীতির অভিযোগে সংস্থার স্থগিত ও বাতিলকৃত তার পছন্দের ৫৫ জন আজীবন সদস্যের হাইকোর্টে মামলা করে পুনরায় সংস্থার সদস্যপদ ও ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা করেন তৈমুর। এছাড়াও পছন্দের লোকজনকে সংস্থায় ইচ্ছেমাফিক নিয়োগ ও সদস্যপদ দেন তিনি। এসব ঘটনায় গত ২০১৫ সালের ১২ আগস্ট তৈমুরকে নোটিশ জারি করে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) তলব করে দুদকের সহকারী পরিচালক শেখ আবদুস সালাম। দুদক শুনানিতে সন্তোষজনক জবাব দিতে না পারায় তার বিরুদ্ধে মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তাছাড়া চলতি বছরের ১৮ জানুয়ারি অন্ধ ও বধিররা তার বিরুদ্ধে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে। এসময় তৈমুরের দখল থেকে মুক্তি চাওয়ার বিভিন্ন প্লেকার্ড, ব্যানার ও ফেস্টুন নিয়ে রাস্তায় দাঁড়ায় তারা। সংস্থার অর্থ আত্মসাতের মামলা থাকলেও চতুর আইনজীবী তৈমুর কৌশলে মামলাগুলো ধামাচাপা দিয়ে রেখেছেন। এসব অভিযোগের ব্যাপারে অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম বলেন, আমি দোকান বরাদ্দ থেকে শুরু করে বধির সংস্থার কোনো দুর্নীতি ও অনিয়মের সাথে জড়িত নই।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads