• বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ১ জৈষ্ঠ ১৪২৯

অপরাধ

অনলাইন জুয়ায় দিনে লেনদেন ৫ কোটি টাকা

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১৫ নভেম্বর ২০২১

সদ্যসমাপ্ত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, আইপিএল, বিগব্যাশ, ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচ নিয়ে চলছে অনলাইন জুয়ার আসর। বিভিন্ন বড় লিগ টার্গেট করে এই অনলাইন জুয়ার আয়োজন করা হয়। বেটিং সাইট বা অ্যাপসে যে কেউ লগিং অ্যাকাউন্ট খোলার পর একটি ই-ওয়ালেট পান। সেটিতে অ্যাকাউন্ট ওপেনকারী ব্যক্তিকে টাকা রিচার্জ করতে হয়। বেটিং সাইটে দেওয়া মোবাইল ব্যাংকিংয়ের নম্বরে টাকা পাঠানোর পর ওই ই-ওয়ালেটে টাকা যুক্ত হয়। ন্যূনতম ১ হাজার টাকা ই-ওয়ালেটে প্রবেশ করাতে হয়। এরপর অ্যাকাউন্ট হোল্ডারকে পাসওয়ার্ড দেওয়া হয়। সেই পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে ব্যক্তি জুয়া খেলেন। আর এভাবে প্রতিদিন কোটি কোটি টাকার লেনদেন হচ্ছে। সম্প্রতি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) অনলাইন জুয়ার নামে একটি জেলাতেই দিনে অন্তত তিন থেকে পাঁচ কোটি টাকা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে অবৈধভাবে লেনদেনের তথ্য পেয়েছে। গতকাল রোববার সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি কামরুল আহসান সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান।

সিআইডির পক্ষ থেকে জানানো হয়, চুয়াডাঙ্গা জেলায় ৫০ জন মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্টের তথ্য পাওয়া গেছে, যে নম্বরগুলো থেকে অনলাইন জুয়ার টাকা লেনদেন হচ্ছে। এই নম্বরগুলোর মধ্যে অন্তত ১৫টিতে দিনে ১০ লাখের ওপরে টাকা লেনদেন করছে জুয়াড়ি চক্র। পরে এই টাকা হুন্ডি বা অবৈধ ব্যাংকিং চ্যানেলে পাচার হচ্ছে। গত শনিবার সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টার মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা ও কক্সবাজারে অভিযান চালিয়ে অনলাইন বেটিং প্ল্যাটফরম ওয়ানএক্সবেট পরিচালনাকারী চক্রের নয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তাররা হলেন; স্বপন মাহমুদ (২৭), নাজমুল হক (২১), আসলাম উদ্দিন (৩৫), মুরশিদ আলম লিপু (২৫), শিশির মোল্লা (২১), মাহফুজুর রহমান নবাব (২৬), নবাবের স্ত্রী মনিরা আক্তার মিলি (২৪), মো. সাদিক (২২) এবং মাসুম রানা (২০)। গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে ১৬টি মোবাইল ফোনসেট, তিনটি মোবাইল সিম, একটি ল্যাপটপ, একটি প্রাইভেটকার ও নগদ চার লাখ ১০ হাজার টাকা জব্দ করা হয়।

কামরুল আহসান বলেন, সিআইডির নিয়মিত মনিটরিংয়ে অনলাইন বেটিং সাইটটি নজরে আসে, যেখানে অনলাইনে বেটিং করা হয় বা জুয়া খেলা হয়। এই সাইটটি মূলত রাশিয়া থেকে পরিচালিত হয়। গ্রেপ্তারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের তথ্য দিয়ে কামরুল আহসান বলেন, একটি জেলায় ৫০ এজেন্টের সন্ধান পাওয়া গেছে। সারা দেশের চিত্র এখনো পাইনি। এ নিয়ে কাজ চলছে। দিনে একটি বেটিং সাইটে এক থেকে দেড় লাখ ব্যক্তি জুয়ায় অংশ নেন।

তিনি বলেন, মোবাইল ব্যাংকিংয়ের এজেন্ট সিমসহ স্বপন মাহমুদ ও মুরশিদ আলম লিপুকে মেহেরপুর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। স্বপনকে জিজ্ঞাসাবাদে জানান, তিনি এজেন্ট সিমটি গ্রেপ্তার আসলাম উদ্দিনের কাছ থেকে সংগ্রহ করে জুয়ার এজেন্ট হিসেবে কাজ করছিলেন। এ জন্য আসলামকে তিনি প্রতি মাসে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণে টাকা দিতেন।

গ্রেপ্তার মুরশিদ আলম লিপু সিআইডিকে জানান, তার বোন জামাইয়ের দোকানের একটি ট্রেড লাইসেন্স দিয়ে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের এজেন্ট সিমটি সংগ্রহ করে জুয়ার এজেন্ট হিসেবে কাজ করছিলেন। মেহেরপুরে ওই মোবাইল ব্যাংকিংয়ের কয়েকজন এসআর ও সেখানকার ডিপো ম্যানেজার তাদের এই কাজের সঙ্গে সরাসরি জড়িত বলে জানান সিআইডির এই কর্মকর্তা।

কামরুল আহসান বলেন, মাহফুজুর রহমান নবাব জুয়ার জন্য একটি এজেন্ট সিম ব্যবহার করেন। ওই এলাকায় এ কাজ তিনি শুরু করলেও পরবর্তীতে তার মাধ্যমে আরো বহু জুয়ার এজেন্ট যুক্ত হন। গ্রেপ্তার সাদিক তার সহায়তাকারী। তার এজেন্ট নম্বরে যে টাকা আসতো তা জুয়ার ওয়েবসাইটে ডিপোজিট এবং টাকা তোলার কাজটি সাদিকই করতেন।

 গ্রেপ্তার মাসুম রানা তার মোবাইল নম্বর দিয়ে টেলিগ্রাম আইডি খুলে জুয়ার লোকজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন। এর বিনিময়ে তিনি এজেন্টের কাছ থেকে কমিশন পেতেন। জুয়ার কাজে জড়িত থাকায় নবাব বাসা থেকে বের হতে পারতেন না বা কোথাও যেতে পারতেন না। এই কারণে নবাবের স্ত্রী মিলি টাকা সংগ্রহ, ব্যাংকে টাকা জমাসহ বাইরের সব কাজ করতেন।

জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তাররা জানান, জুয়ার লেনদেনের কাজে ব্যবহূত সবগুলো এজেন্ট সিমই সেখানকার মোবাইল ব্যাংকিংয়ের এসআরের মাধ্যমে সম্পন্ন হতো। অনেক সময় জুয়ার এজেন্ট ও এসআরদের মধ্যে বিটুবির মাধ্যমে লেনদেন হলেও তাদের মধ্যে সরাসরি কোনো লেনদেন হতো না।

সিআইডি জানায়, গ্রেপ্তার স্বপনের সিম থেকে প্রতিদিন গড়ে সাত থেকে আট লাখ টাকা, লিপুর সিম থেকে প্রতিদিন গড়ে ১০ লাখ টাকা ও নবাবের সিম থেকে প্রতিদিন পাঁচ থেকে ছয় লাখ টাকা লেনদেন হতো।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads