• সোমবার, ৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪২৯
জাইকার অর্থায়নের নিশ্চয়তা চায় পরিকল্পনা কমিশন

লোগো জাইকা ও পরিকল্পনা কমিশন

অর্থ ও বাণিজ্য

আড়াইহাজারে জাপানি অর্থনৈতিক অঞ্চল

জাইকার অর্থায়নের নিশ্চয়তা চায় পরিকল্পনা কমিশন

মূসক, আমদানি শুল্ক ও পরামর্শক খাতে বাড়তি ব্যয় নিয়ে আপত্তি

  • জাহিদুল ইসলাম
  • প্রকাশিত ২৩ ডিসেম্বর ২০১৮

নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে জাপানি উদ্যোক্তাদের জন্য অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য ৪৯১ একর জমি অধিগ্রহণ ও উন্নয়নে প্রকল্প নেওয়া হয় ২০১৭ সালে। দেশটির উদ্যোক্তাদের চাহিদায় আরো ৫০০ একর জমি অধিগ্রহণে প্রকল্পটি সংশোধন করা হয়। চট্টগ্রামের মিরেরসরাই ও নারায়ণগঞ্জে ভূমি অধিগ্রহণে নেওয়া প্রকল্প ব্যয় ৭৬২ কোটি টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়ায় ৩ হাজার ১৯৬ কোটি টাকায়। শতভাগ সরকারি অর্থায়নে প্রকল্পের কাজ শেষ হচ্ছে আগামী বছরের জুনে। এর আগেই অর্থনৈতিক অঞ্চলটিতে অবকাঠামো নির্মাণে মূল প্রকল্প অনুমোদনের তোড়জোড় শুরু হয়েছে। এ বিষয়ে ইতোমধ্যেই প্রকল্প প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। প্রকল্পের অবকাঠামো নির্মাণ পর্যায়ে জাপানি উদ্যোক্তাদের অর্থায়নের নিশ্চয়তা চাইছে পরিকল্পনা কমিশন। কমিশনে অনুষ্ঠিত প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় এসব বিষয় উঠে এসেছে।

পরিকল্পনা কমিশনের শিল্প ও শক্তি বিভাগের সদস্য শামীমা নার্গিসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত পিইসি সভায় প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা), প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি), বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) ছাড়াও পরিকল্পনা কমিশনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। সভায় জাপানের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার (জাইকা) সহায়তা হিসেবে অতিরিক্ত ৯৪১ কোটি টাকা প্রাপ্তির নিশ্চয়তা চাওয়া হয়। প্রকল্পে ভ্যাট ও ট্যাক্স বাবদ ২৮৫ কোটি ৫৫ লাখ টাকা ও আমদানি শুল্ক বাবদ সাড়ে ৭১ কোটি টাকা মিলে মোট ৩৫৭ কোটি ৫ লাখ টাকা বরাদ্দের প্রস্তাবে আপত্তি জানানো হয়। পরিকল্পনা কমিশনের আপত্তি বিদেশে প্রশিক্ষণ ও শিক্ষা সফর বাবদ ৩ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাবেও। বৈঠক সূত্র জানায়, ‘এফডিপিপিআই’র আওতায় নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে জাপানিসহ অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য অবকাঠামো উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পটি মোট ১৭ শর্ত পরিপালন সাপেক্ষে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) অনুমোদনের সুপারিশ করা হয়েছে। একনেকের অনুমোদন পেলে আগামী বছরের শুরু থেকে ২০২৩ সালের জুনের মধ্যে কাজ শেষ করার সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হবে। প্রকল্প ব্যয়ে সরকারের নিজস্ব তহবিলের অর্থ অনুদান হিসেবে না দিয়ে ১ শতাংশ সুদে ঋণ দেওয়ার শর্ত বেঁধে দেওয়া হয়েছে। ভূমি উন্নয়নে ব্যয়ের প্রস্তাব যৌক্তিক পর্যায়ে নামিয়ে আনার শর্ত দিয়েছে কমিশন।

পিইসি সভার কার্যবিবরণী পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাপান সফর ও একই বছরে দেশটির প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরে জাপানের উদ্যোক্তাদের জন্য অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার বিষয়ে সমঝোতা হয়। দুই দেশের সরকারপ্রধান পর্যায়ের একটি জি-টু-জি চুক্তির আওতায় আড়াইহাজারে এ অঞ্চলটি প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু হয়। প্রকল্পে ২ হাজার ১২৭ কোটি ৭০ লাখ টাকা বিদেশি উৎস থেকে সংগ্রহের লক্ষ্য রয়েছে। এ বিষয়ে ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে জাইকা বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে ১ হাজার ১৮৭ কোটি টাকা সহায়তার বিষয়ে চুক্তি করেছে। বাকি ৯৪০ কোটি ৭০ লাখ টাকার উৎস জানতে চাওয়া হয়েছে সভায়।

অবশ্য আগামী বছরে স্বাক্ষরের অপেক্ষায় থাকা জাপানের ৪০তম ইয়েন প্যাকেজের আওতায় বাকি অর্থ জাইকা থেকে পাওয়া যাবে বলে সভায় আশ্বাস দিয়েছে বেজা কর্তৃপক্ষ। সংস্থার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সম্প্রতি জাপানের একটি মিশন বাংলাদেশ সফর করে গেছে। এফডিআইপিপি-২ প্রকল্পের আওতায় এ মিশন অতিরিক্ত অর্থ সরবরাহের আশ্বাস দিয়েছে। আগামী বছরের জুন মাসে এ-সংক্রান্ত ঋণচুক্তি হতে পারে। এ চুক্তির পর প্রকল্পে অর্থায়ন সঙ্কট থাকবে না বলে জানিয়েছেন বেজা প্রতিনিধি।

বেজা সূত্র বলছে, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশে আড়াইহাজারের দুপ্তারা ইউনিয়নের পাঁচগাঁও, দুপ্তারা মৌজা ও সাতগ্রাম ইউনিয়নের পাঁচরুখী মৌজার প্রায় ১ হাজার একর জমিতে অঞ্চলটি গড়ে উঠবে। ওই অঞ্চলে গ্যাস, পানি ও বিদ্যুতের লাইন স্থাপন এবং ১৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতার একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য সহায়তা দিচ্ছে জাইকা। এ অর্থনৈতিক অঞ্চল পরিচালনার জন্য কোম্পানির ২৫ শতাংশ অংশীদারত্ব থাকবে বেজার।

বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান পকন চৌধুরী জানান, বর্তমানে জাপানের প্রায় আড়াই শ উদ্যোক্তা বাংলাদেশে ব্যবসা করছেন। গত ১০ বছরে জাপানি উদ্যোক্তার সংখ্যা বেড়েছে প্রায় তিনগুণ। এক ছাদের নিচে এনে তাদের বাড়তি সুবিধা দিতে প্রায় হাজার একর জমিতে এ অর্থনৈতিক অঞ্চলটি গড়ে উঠবে। এতে প্রক্রিয়াজাত খাদ্য ও কৃষিপণ্য, হালকা প্রকৌশল, রাসায়নিক, মোটরগাড়ি সংযোজন, তৈরি পোশাক ও ওষুধপণ্যের কারখানা গড়ে উঠবে। অঞ্চলটিতে প্রায় ১ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads