• সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪২৯

অর্থ ও বাণিজ্য

হতাশায় ব্যবসায়ীরা বিরক্ত ক্রেতা

  • নাজমুল হুসাইন
  • প্রকাশিত ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০

আন্তর্জাতিক মেলার মূল উদ্দেশ্য বিচ্যুত। ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা বা ডিআইটিএফের ২৫তম আসর সেই প্রমাণই দিল। আন্তর্জাতিক রূপ তো নেই-ই, বরং বৃহৎ এই আয়োজন এখন বিশৃঙ্খল ও অর্থহীন রূপ ধারণ করেছে।

এদিকে ব্যবসায়ীদের দাবির পর মেলার সময় আরো দুই দিন বাড়ানো হয়েছে। ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মেলা চলবে। তবে ক্রেতার বিরক্তি ও ব্যবসায়ীদের হতাশা থেকে যাবে দীর্ঘ সময়। তাদের মতে, যতদিন ডিআইটিএফের আসর প্রকৃত আন্তর্জাতিক রূপ নেবে না, ততদিন মেলায় আসবেন না এমন ক্রেতা-দর্শনার্থী ও ব্যবসায়ীর সংখ্যা অনেক।

মেলায় গতকাল কথা হয় পাকিস্তান থেকে আসা ক্রোকারিজ ব্যবসায়ী মোহাম্মদ এজাহাদের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আর এ মেলায় আসব না। গত তিন বছর মেলায় অংশগ্রহণ করে দেখলাম এখানে যেসব পণ্য বিক্রি হয়, সেগুলোর মান খুবই নিম্ন। আন্তর্জাতিক কোনো প্রতিযোগিতা এখানে নেই। দিন দিন মেলা পরিণত হচ্ছে খুচরা বাজারে।’

শুধু তিনি নন, বেশ কয়েকজন দেশি-বিদেশি অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আন্তর্জাতিক মেলার এ খুচরা বাজারের ভাবটায় ক্ষতিগ্রস্ত করেছে তাদের। মেলায় বিদেশি পণ্য ও ক্রেতা না থাকায় মেলা পরিণত হয়েছে দেশি পণ্যের ভাগাড়ে। দেশি নিম্নমানের ও নকল পণ্যের ভিড়ে কিছু বিদেশি পণ্য থাকলেও সেটা বেচাকেনা হচ্ছে না। এদিকে দেশি বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলো কিছু বেচাবিক্রি করলেও বিদেশি ক্রেতা বা ক্রয়াদেশ পাচ্ছে না।

অন্যদিকে গতকালও মেলার বিরক্তি জানিয়ে ইয়াছির আরাফাত নামের এক দর্শনার্থী বলেন, মেলা যেন এক মাঠেই চকবাজার, নিউমার্কেট ও ফুটপাতের পণ্যের এক পসরা। আবার নামে সেটা আন্তর্জাতিক। কীভাবে আন্তর্জাতিক পণ্যের নকল দেশে তৈরি হয় সেটা দেখতে এসেছি। এসব আজেবাজে আয়োজন দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করে।

বিশ্বজুড়েই বিভিন্ন দেশে এমন আন্তর্জাতিক মেলার আয়োজন হয়। তবে সেগুলোতে বিদেশি ক্রেতা ও ব্যবসায়ীরা আসেন, পণ্য কেনেন এবং গুণগত মান যাচাই করে ব্যবসার জন্য বিভিন্ন পণ্যের ক্রয়াদেশ দিয়ে যান। সেখানে আয়োজক দেশের প্রতিষ্ঠানগুলোর মূল ভাবনায় থাকে সেসব ক্রেতা ও ব্যবসায়ী। পাশাপাশি বিভিন্ন দেশ তাদের প্রযুক্তি ও পণ্যের রদবদল করে, তাতে উভয়ই লাভবান হয়।

কিন্তু ডিআইটিএফে এসব কিছুই হচ্ছে না। এ বছর বাণিজ্য মেলায় ২১টি দেশের কয়েকটি প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে। তবে যেসব প্রতিষ্ঠান এসেছে, তাদের কেউই কোনো দেশের উল্লেযোগ্য পণ্যের উৎপাদক, আমদানিকারক অথবা সরবরাহকারী নয়। যারা এসেছে তারাও বিভিন্ন দেশের খুচরা ব্যবসায়ী। আশপাশের বিভিন্ন দেশে শুধু মেলায় অংশগ্রহণ করা এসব প্রতিষ্ঠানের ব্যবসা।

অন্যদিকে মেলায় বিদেশি স্টল নিয়ে দেশি ও নকল বিদেশি পণ্য বিক্রির রমরমা ব্যবসা এখনো বন্ধ হয়নি। প্রতিবছরের মতো থাইল্যান্ডের স্টল বলতেই দেশি ব্যবসায়ী ও উপজাতি সম্প্রদায়ের মেয়েদের দিয়ে নকল পণ্য বিক্রি চলছে। এ ছাড়া পাকিস্তানের স্টল নিয়ে সবজি কাটার সরঞ্জাম, একটি কিনলে দুটি থ্রিপিস ফ্রি আর কাশ্মীরি শাল বিক্রি চলছেই। একইভাবে ইরানের সব স্টলে চীনের কার্পেট বিক্রিও বন্ধ হয়নি।

এমন পরিবেশে দেশি যেসব বড় বড় প্রতিষ্ঠান মেলায় অংশ নিচ্ছে, তারাও সুবিধা করতে পারছে না। কারণ মেলায় বিদেশি ক্রেতা তো নেই-ই, বরং দেশের উচ্চবিত্তদেরও দেখা মেলে না। ফলে তারাও কোটি কোটি টাকায় শোরুম তৈরি করে লোকসান দিচ্ছেন বাধ্য হয়েই।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি বড় প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, প্রতিটি স্টলে দুই কোটি টাকা খরচ হয়েছে এ মেলায়। গ্রুপের কয়েকটি স্টল রয়েছে। কিন্তু দিনে এসব স্টলে বিক্রি লাখ টাকা ছোঁয়াও বড় দায় হয়ে যায়। তিনি বলেন, যদিও আমরা মেলায় বিক্রির জন্য আসি না। তবে মূল কাজও হচ্ছে না, কোনো ক্রয়াদেশ পাইনি। সবমিলিয়ে বাধ্য হয়েই লোকসান দিতে হচ্ছে।

মেলায় অংশগ্রহণকারীদের লোকসান হচ্ছে প্রতি বছরই। এ বছর সে পরিমাণটা অনেক বেশি। এ বছর ১০ ও ৩১ জানুয়ারি এবং ১ ফেব্রুয়ারি মেলা বন্ধ ছিল। এ ছাড়া চারদিন মেলা আধাবেলা ও একদিন হরতালে চলেছে। এ কারণে মাসব্যাপী বাণিজ্য মেলায় ক্ষতি পুষিয়ে নিতে মেলার সময় ৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাড়ানোর দাবি জানিয়েছিলেন অংশগ্রহণকারী ব্যবসায়ীরা। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে মেলা প্রাঙ্গণে সংবাদ সম্মেলনে তারা দাবি করেছিলেন, মেলার ক্ষতিপূরণে ২ থেকে ৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিনা ভাড়ায় সময় বৃদ্ধি করতে হবে। তারা এ বছর মেলায় আশানুরূপ রপ্তানি আদেশেও সাড়া পাননি, বিক্রিও হয়নি। এক্ষেত্রে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোকে (ইপিবি) দুষছেন সংশ্লিষ্টরা।

জানা গেছে, মেলার নামে এমন একটি খোলাবাজার আয়োজনে ইপিবির বড় স্বার্থ রয়েছে। কারণ প্রতিবছর বাণিজ্য মেলার আয়োজন করে ৩০ থেকে ৩৫ কোটি টাকা নিট আয় করে ইপিবি। ১৯৯৫ সাল থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত ২৫টি আসর শেষ করেছে সংস্থাটি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads