• মঙ্গলবার, ৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪২৯
দেশপ্রেমিক নেতৃৃত্বের ওপর আস্থাশীল হতে হবে

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের সেনাসদরের কনফারেন্স রুমে উর্দ্ধতন সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে কুশলবিনিময় করেন

ছবি: পিআইডি

সরকার

সেনাবাহিনীকে প্রধানমন্ত্রী

দেশপ্রেমিক নেতৃৃত্বের ওপর আস্থাশীল হতে হবে

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত ২৩ জুলাই ২০১৮

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অফিসারদের দেশের গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক ধারা অব্যাহত রেখে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষায় যোগ্য, দক্ষ, কর্মক্ষম এবং দেশপ্রেমিক নেতৃত্বের ওপর আস্থাশীল হওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। তিনি বলেন, একটি সুশৃঙ্খল এবং শক্তিশালী সেনাবাহিনী দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা এবং সুসংহতকরণে গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে। যারা সুশিক্ষিত, কর্মক্ষম, সচেতন, বুদ্ধিমান এবং সর্বোপরি গণতন্ত্রকে সুসংহত করার জন্য দৃঢ় প্রত্যয়ের অধিকারী, এরূপ যোগ্য অফিসারদের কাছে নেতৃত্ব ন্যস্ত করতে হবে। বাসস

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল রোববার সকালে ঢাকা সেনানিবাসে ‘সেনাসদর নির্বাচনী পর্ষদ ২০১৮’-এ প্রদত্ত ভাষণে এসব কথা বলেন। আদর্শগতভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সামরিক বাহিনীর জন্য অত্যন্ত্ত মৌলিক এবং মুখ্য বিষয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনাদের সবসময় লক্ষ্য রাখতে হবে, যাতে সেনাবাহিনীর নেতৃত্ব ন্যস্ত হয় তাদেরই হাতে যারা দেশপ্রেমিক ও মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী।’ সেনাবাহিনীপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণ দেন। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান, প্রতিরক্ষা সচিব আখতার হোসেন ভূঁইয়া, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনারেল মাহফুজুর রহমান এবং লেফটেন্যান্ট জেনারেল ও মেজর জেনারেল পদমর্যাদার সেনা কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি আনন্দিত যে, সেনাবাহিনীর অফিসারদের পদোন্নতির জন্য ‘টার্বুলেটেড রেকর্ড অ্যান্ড কমপারেটিভ ইভালুয়েশন (টিআরএসিই)’-এর মতো একটি আধুনিক পদ্ধতির প্রচলন করা হয়েছে, যা পেশাগত দক্ষতার বিভিন্ন দিকের তুলনামূলক মূল্যায়ন প্রকাশ করে। উপযুক্ত ও যোগ্য নেতৃত্বের মাধ্যমেই যেকোনো বিজয় বা সাফল্য অর্জন সম্ভব উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেসব অফিসার সামরিক জীবনের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে যোগ্য নেতৃত্ব প্রদানে সফল হয়েছেন, পদোন্নতির ক্ষেত্রে তাদের বিবেচনায় আনতে হবে। তিনি বলেন, তাদের শিক্ষা, মনোভাব, সামাজিকতা, চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য নিরীক্ষা করেই পদোন্নতি প্রদান করতে হবে। পদোন্নতির ক্ষেত্রে উন্নত পেশাগত মান ও যোগ্যতাসমপন্ন অফিসারদের অবশ্যই অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত। পদোন্নতির ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা, সততা, বিশ্বস্ততা এবং আনুগত্যের ওপরও গুরুত্বারোপ করেন প্রধানমন্ত্রী। শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা যুদ্ধ চাই না। তবে যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলার সামর্থ্য আমাদের থাকতে হবে।’

শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা প্রণীত নীতিমালার আলোকেই তার সরকার ‘আর্মড ফোর্সেস গোল-২০৩০’ প্রণয়ন করে সেনাবাহিনীর উন্নয়ন ও আধুনিকায়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখেছে। তিনি বলেন, জাতির পিতা প্রদত্ত প্রতিরক্ষা নীতির আলোকে জাতীয় প্রতিরক্ষা নীতি মন্ত্রিপরিষদে অনুমোদিত হয়েছে।

সেনাবাহিনীর উন্নয়ন ও আধুনিকায়নে তার সরকারের উদ্যোগ তুলে ধরে তিনি বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে সেনাবাহিনীর বিভিন্ন সিস্টেমকে ডিজিটালাইজড করা হচ্ছে। আর্মি ইনফরমেশন টেকনোলজি সাপোর্ট অর্গানাইজেশন (এআইটিএসও), আর্মি ডেটা সেন্টার ও কম্পিউটারাইজড ওয়্যার গেম সেন্টার প্রতিষ্ঠাসহ অনেক আধুনিক যোগাযোগসামগ্রী ক্রয় করা হচ্ছে। বর্তমান সরকার সশস্ত্র বাহিনীতে চিকিৎসাসেবার মান উন্নয়নে নানাবিধ উদ্যোগ নিয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঢাকা সিএমএইচে সংযোজিত হয়েছে পূর্ণাঙ্গ ক্যানসার সেন্টার ও ফার্টিলিটি সেন্টার। এই ক্যানসার সেন্টার ও ফার্টিলিটি সেন্টারে বেসামরিক রোগীদেরও স্বল্পমূল্যে আন্তর্জাতিক মানের ক্যানসার চিকিৎসাসেবা প্রদান সম্ভব হবে। তিনি বলেন, তার সরকারই প্রথম সেনাবাহিনীতে মহিলা অফিসার এবং আর্মি মেডিকেল কোরে প্রথমবারের মতো মহিলা সৈনিক অন্তর্ভুক্ত করে। প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রম, দেশের অভ্যন্তরে প্রাকৃতিক দুর্যোগ আর দুর্ঘটনায় দুর্গতদের সাহায্য ও সহযোগিতা এবং দেশের অবকাঠামো নির্মাণে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ভূয়সী প্রশংসা করেন।

তিনি বলেন, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনে সেনাসদস্যদের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা দেশের ভাবমূর্তি বিশ্বে উজ্জ্বল করেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, মিয়ানমারের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত নাগরিকদের সহায়তায় সেনাবাহিনী অত্যন্ত প্রশংসার সঙ্গে কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে, সমগ্র বিশ্বে যা অত্যন্ত প্রশংসিত হয়েছে। এ ছাড়া সেনাবাহিনী সারা দেশে এমনকি দুর্গম পার্বত্য এলাকায় সড়ক ও অবকাঠামো নির্মাণ, মেরিন ড্রাইভ সড়ক নির্মাণ এবং ভোটার তালিকা ও মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট তৈরির ক্ষেত্রেও দক্ষতার প্ররিচয় দিয়েছে। দেশের অর্থনীতিকে তার সরকার শক্তিশালী করতে সক্ষম হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা উন্নয়নের ৯০ ভাগ কাজই নিজস্ব অর্থায়নে করছি। ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দের ঊর্ধ্বে উঠে ন্যায়নীতির ভিত্তিতে সেনা কর্মকর্তাগণ নির্বাচনী পর্ষদ ২০১৮-এর মাধ্যমে উপযুক্ত নেতৃত্ব নির্বাচনে সর্বতোভাবে সফল হবেন বলেও আশা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads