• বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ১ জৈষ্ঠ ১৪২৯
পরিকল্পনা কমিশনে প্রকল্পের চাপ

লোগো পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়

সরকার

সরকারের শেষ সময়ে অনুমোদনের তোড়জোড়

পরিকল্পনা কমিশনে প্রকল্পের চাপ

# আগামীকাল একনেকে উঠছে ১৫ প্রকল্প # উন্নয়নে স্থবিরতার আশঙ্কা # ঝুলে থাকা প্রকল্পের ব্যয় বাড়ছে

  • জাহিদুল ইসলাম
  • প্রকাশিত ০১ অক্টোবর ২০১৮

ইউনিয়ন পর্যায়ে বাংলাদেশের ৮৪ শতাংশ সড়ক কাঁচা। উপজেলা পর্যায়ে কাঁচা সড়কের হার ৩৩ শতাংশ। বর্ষায় সড়কের বড় একটা অংশই ব্যবহারের অনুপযুক্ত থাকে। কাঁচা সড়ক নিয়ে স্থানীয় লোকজন বরাবরই আবদার-অভিযোগ করে থাকেন জনপ্রতিনিধিদের কাছে। ২০১৭ সালের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ২১ জেলা ও উপকূলীয় ১৩ জেলার ১৮০ উপজেলার ২ হাজার ৭০৫ কিলোমিটার সড়ক নিয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্যরা বিব্রতকর অবস্থায় আছেন। জাতীয় নির্বাচনের আগেই ৩ হাজার ৬৬৭ কোটি ৪২ লাখ টাকা ব্যয় ধরে এসব সড়ক সংস্কারে প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। এর কাজ দ্রুত শুরু হওয়ার সম্ভাবনা না থাকলেও নির্বাচনী প্রচারে এ বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দিতে পারবেন এমপি প্রার্থীরা। নির্বাচন সামনে রেখে এমন অনেক প্রকল্পই আসছে পরিকল্পনা কমিশনে। আর নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের সময় ঘনিয়ে আসায় প্রকল্পের চাপে অনেকটাই নাজুক অবস্থায় আছে পরিকল্পনা কমিশন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, আগামীকাল মঙ্গলবার অনুষ্ঠিতব্য একনেকের বৈঠকে ১৪টি প্রকল্প উপস্থাপনের বিষয়ে নোটিশ জারি করা হয়েছে। নোটিশের বাইরে আরো একটি প্রকল্প টেবিলে উপস্থাপনের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। এই ১৫ প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ১৪ হাজার ৪৯৪ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। পরিকল্পনামন্ত্রীর অনুমোদন দেওয়া ৫০ কোটি টাকা পর্যন্ত ব্যয়ের পাঁচটি প্রকল্প অবগতির জন্য বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে। টেবিলে উপস্থাপনের জন্য আজ সোমবার আরো কয়েকটি প্রকল্প চূড়ান্ত করা হবে বলে জানা গেছে।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, জাতীয় নির্বাচন নিয়ে তোড়জোড় শুরু হয়েছে বেশ কয়েক মাস আগেই। চলতি মাসের যেকোনো সময় নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের কথাও শোনা যাচ্ছে। ছোট আকারের সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠানে সহায়তার পাশাপাশি নিয়মিত কার্যক্রম পরিচালনা করবে। অক্টোবরের আগেই গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প অনুমোদন করিয়ে নিতে সব সচিবকে ডেকে নির্দেশনা দিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এরই ধারাবাহিকতায় কয়েক সপ্তাহ ধরে একনেকে বিপুল পরিমাণ প্রকল্প অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হচ্ছে।

১৮ সেপ্টেম্বর একনেক বৈঠকের আগে মোট ৯টি প্রকল্প উপস্থাপনের জন্য নোটিশ জারি হলেও শেষ পর্যন্ত অনুমোদন দেওয়া হয় ১৪টি। ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ক্রয়সহ পাঁচটি প্রকল্প উপস্থাপন করা হয় নোটিশ ছাড়াই। পল্লী এলাকায় ১০০ মিটারের কম দৈর্ঘ্যের সেতু নির্মাণ ও সংস্কারে ৪ হাজার ৯৭১ কোটি টাকার মেগা প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয় ওই বৈঠকে। নোটিশ ছাড়া উপস্থাপন করা প্রকল্পটির আওতায় কোন জেলায় কতটি সেতু নির্মাণ করা হবে তার উল্লেখ পর্যন্ত নেই। দ্রুত অনুমোদন দিতে গিয়ে প্রকল্প প্রস্তাবনার (ডিপিপি) অনেক দুর্বলতাই ছাড় দিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন।

তবে তড়িঘড়ি করে নেওয়া প্রকল্পগুলো আগামীতে সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রমের গতি টেনে ধরতে পারে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বাংলাদেশের খবরকে বলেন, দক্ষ জনবল ও সম্পদের অভাবে এমনিতেই বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নে গতি আসছে না। মাত্র ১ লাখ থেকে ১ কোটি টাকার নামমাত্র বরাদ্দ দিয়ে কয়েকশ প্রকল্প টিকিয়ে রাখা হয়েছে। এর মধ্যেই বেহিসাবি প্রকল্প নেওয়া হলে বাস্তবায়নের গতি কমে আসবে। বছরের পর বছর ঝুলে থাকলে প্রকল্পের ব্যয়ও বাড়বে। এ অবস্থায় নতুন প্রকল্প অনুমোদনের সংখ্যা কমিয়ে বাস্তবায়নে গুরুত্ব দেওয়ার তাগিদ দেন তিনি।

সূত্র জানায়, আগামীকালের বৈঠকে ২ হাজার ১৫ কোটি ৬৫ লাখ টাকা ব্যয় ধরে কক্সবাজার বিমানবন্দর উন্নয়ন (প্রথম পর্যায়) প্রকল্পটির তৃতীয় সংশোধনী অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হচ্ছে। ২০০৯ সালে ৩০২ কোটি ৬৫ লাখ টাকা ব্যয় ধরে প্রকল্পটি অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় এর ব্যয় সাড়ে ৬ গুণ বেড়েছে।

১৮ সেপ্টেম্বর একনেকে অনুমোদন পাওয়া শাহবাগ থেকে বাংলাদেশ বেতারের কার্যক্রম আগারগাঁওয়ে স্থানান্তর ও আধুনিকায়ন প্রকল্পের তৃতীয় সংশোধনীতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১১৩ কোটি ১৫ লাখ টাকা। ৭৪ কোটি ৭১ লাখ টাকা ব্যয় ধরে প্রকল্পটি ২০১২ সাল থেকে চলমান আছে। ১২৮ কোটি ৪৫ লাখ টাকা ব্যয় ধরে জামালপুর-মাদারগঞ্জ সড়ক প্রশস্তকরণ ও মজবুতকরণ প্রকল্পের তৃতীয় সংশোধনী অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ৫৪ কোটি ৩০ লাখ টাকা ব্যয় ধরে প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছিল ২০১৪ সালে।

এর আগে ১১ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত একনেক বৈঠকে ১৮ প্রকল্প অনুমোদন দেয় একনেক। বৈঠকে নোটিশ ছাড়াই ৫ হাজার ৯১৮ কোটি ৬৩ লাখ টাকা ব্যয় ধরে মাদরাসা উন্নয়নে প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়। স্থানীয় সংসদ সদস্যদের বেসরকারি চাহিদাপত্রের প্রেক্ষিতে প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেছেন পরিকল্পনামন্ত্রী। এ প্রকল্প আগামী নির্বাচনে প্রভাব রাখবে জেনেই তা অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলে সভা-পরবর্তী ব্রিফিংয়ে জানিয়েছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

আগামীকাল একনেক বৈঠকে উপস্থাপনের অপেক্ষায় থাকা পুরনো ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তুলাই এবং পুনর্ভবা নদীর নাব্য উন্নয়ন ও পুনরুদ্ধার প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ৪ হাজার ৩৭১ কোটি টাকা। হাটহাজারী-ফটিকছড়ি-মানিকছড়ি-মাটিরাঙ্গা-খাগড়াছড়ি সড়ক উন্নয়ন (চট্টগ্রাম অংশ) প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৯৯ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। ভুরুঙ্গামারী-সোনাহাট স্থলবন্দর-ভিতরবন্দ-নাগেশ্বরী মহাসড়কের দুধকুমার নদীর ওপর সোনাহাট সেতু নির্মাণ প্রকল্পে ব্যয় হবে ২৩২ কোটি ৯৫ লাখ টাকা।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads