• রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪২৯
রাজনৈতিক বিবেচনায় সরকারের ঋণ বাড়েছে: ড. সালেহ উদ্দিন

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ

ছবি : সংগৃহীত

সরকার

রাজনৈতিক বিবেচনায় সরকারের ঋণ বাড়েছে: ড. সালেহ উদ্দিন

  • সাইদ আরমান
  • প্রকাশিত ৩১ জানুয়ারি ২০১৯

চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের জন্য ঘোষিত মুদ্রানীতিতে সরকারের ব্যাংক ঋণের জোগান বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। তবে কমানো হয়েছে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি। রাজনৈতিক বিবেচনায় সরকারের ব্যাংক ঋণের প্রবৃদ্ধির হার বাড়ানো হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ। গতকাল বুধবার নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণার পর তাৎক্ষণিক এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বাংলাদেশের খবরকে এ মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২০১৮-১৯ অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের জন্য যে মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে তার কোনো বিশেষত্ব নেই। এটি গড়পরতা একটি বিবৃতি। আগের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হয়েছে। তেমন কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি।

এক প্রশ্নের জবাবে সাবেক এই গভর্নর বলেন, প্রায় সব সূচকে আগের মতো রাখা হয়েছে। কিন্তু অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট আগের মতো নেই। কোনো নতুনত্ব আনা হয়নি। সব ধারাবাহিক রাখা হয়েছে।

তিনি বলেন, নতুন সরকার ক্ষমতায় এসেছে। ফলে অর্থনীতি গতি পাবে। ব্যবসা বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়বে। কিন্তু মুদ্রানীতিতে বেসরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধি কমানো হয়েছে। এটি উন্নয়ননীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক। 

সরকারি ব্যাংক ঋণের প্রবাহ বাড়ানোর লক্ষ্যমাত্রার সমালোচনা করে তিনি বলেন, এটি করে লুটপাট হয়। উন্নয়নের নামে দুর্নীতি হয়। সরকারি অর্থে কোনো কর্মসংস্থান বাড়ে না। এটি করা হয়েছে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায়। নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকারের সহায়ক হিসেবে মুদ্রানীতি একটি রাজনৈতিক বিবৃতি হয়ে গেছে।

বিদায়ি মুদ্রানীতিতে সরকারের ঋণ প্রবৃদ্ধি ছিল ৮ দশমিক ৬ শতাংশ। সেটি বাড়িয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে ১০ দশমিক ৯ শতাংশ। তবে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি ১৬ দশমিক ৮ শতাংশ থেকে কমিয়ে ধরা হয়েছে ১৬ দশমিক ৫ শতাংশ। অর্থাৎ বিনিয়োগ ও অর্থনীতিকে আরো বেশি গতিশীল করতে বেসরকারি খাতে ঋণের সুদ হার কমিয়ে এক অঙ্গে নামিয়ে আনার ঘোষণা দিলেও ঋণের জোগান বাড়বে না।

তিনি বলেন, এসএমইসহ ছোট ছোট খাত কীভাবে প্রাণ পাবে এমন দিক নির্দেশনা থাকা দরকার ছিল। এসব বলা হয়নি। তাছাড়া গত মুদ্রানীতিতে মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা যায়নি। সেখানে ব্যর্থ হয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বছর শেষে মূল্যস্ফীতি ঘোষিত সাড়ে ৫ শতাংশ ছাড়িয়ে দাঁড়ায় ৫ দশমিক ৭৮ শতাংশ। ধারাবাহিক মুদ্রানীতি দিয়ে এবারো মূল্যস্ফীতি সহনীয় করা যাবে না।

মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতকে উজ্জীবিত করার কোনো কথা বলা হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, এটি করা না গেলে অর্থনীতি অগ্রসর হবে কীভাবে। তাছাড়া আমদানি-রফতানি বাণিজ্য নিয়ে নানা কথা হচ্ছে তার ব্যাপারে মুদ্রানীতিতে সুনির্দিষ্ট বক্তব্য থাকা জরুরি ছিল।

গতকাল বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করে বলেন, উৎপাদন কর্মকাণ্ডে কোনো বিঘ্ন ব্যতিরেকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর অর্থবর্ষের দ্বিতীয়ার্ধে বিনিয়োগ ও উৎপাদন কর্মকাণ্ডের ধারা আরো জোরালো হবে প্রত্যাশা করা যায়। মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবাহ প্রাক্কলন করা হয়েছে ১৬ দশমিক ৫ শতাংশ। যা অর্থবছরের প্রথমার্ধের ঘোষিত মুদ্রানীতি থেকে দশমিক ৩ শতাংশ কম। আগের মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবাহ ধরা হয় ১৬ দশমিক ৮ শতাংশ। তবে ডিসেম্বর শেষে ঋণের প্রকৃত হারের থেকে প্রাক্কলন হার প্রায় ৩ দশমিক ২ শতাংশ বেশি।

মুদ্রানীতিতে বলা হয়, চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধের মুদ্রা ও আর্থিক নীতি কার্যক্রমের সামগ্রিক সফলতা পাওয়া গেছে। তাই নতুন মুদ্রানীতি প্রোগ্রামে ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষের দ্বিতীয়ার্ধে বড় কোনো পরিবর্তন আনার প্রয়োজন অনুভূত হয়নি। রেপো ও রিভার্স রেপো সুদ হার ৬ দশমিক এবং ৪ দশমিক ৭৫ শতাংশে অপরিবর্তিত থাকবে। ব্যাপক মুদ্রা এবং অভ্যন্তরীণ ঋণের প্রবৃদ্ধি যথাক্রমে ১২ শতাংশ এবং ১৫ দশমিক ৯ শতাংশে অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads